সম্প্রতি শিক্ষকদের সাথে বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। যার কারনে সমাজে আলোচনার সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষকদের সাথে এমন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে অনেকে হতাশা প্রকাশ করছে। শিক্ষকদের সাথে এমন আচারনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সমাজ ব্যবস্থায়। এবার শিক্ষকে পেটানোর পর যা বললেন ছাত্র।
উগ্র মেজাজি জিতু (১৯) এলাকায় বেয়াদব ও বখাটে হিসেবেই পরিচিত। স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান হওয়ায় কাউকেই পাত্তা না দিয়ে বেপরোয়া চলাচল ছিল তাঁর। এলাকায় আবার ‘জিতু দাদা’ হিসেবেও পরিচিত। এই নামে রয়েছে তাঁর ফেসবুক আইডিও।
অভিযোগ রয়েছে, হামলার দিন জিতুর বাবা উজ্জ্বল হাজী এসে ছাত্র-শিক্ষকসহ উপস্থিত সবাইকে হুমকি দেন। তিনি বিশ্বাস করতে চাননি যে জিতু একাই হামলায় অংশ নিয়েছে। তাঁর ছেলের সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছে বলে বিদ্যালয়ের গরম দেখিয়ে যান জিতুর বাবা।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনার দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে জিতুর বাবার শাসানোর কথা জানায় এক শিক্ষার্থী। এদিন আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।
কোম্পানির দারোয়ান আবদুস সালাম জানান, ঘটনার পরপরই জিতুর বাবা উজ্জ্বল হাজী হাজির হন। তিনি উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। ঘটনা শোনার পর তিনি অত্যন্ত হুমকির সুরে বলেন, ‘আমার ছেলেকে এত লোকের সামনে এভাবে মারধর করল, এটা কী বিশ্বাস করা যায়! তার কণ্ঠে কোনো নমনীয়তা ছিল না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র বলেন, “ঘটনাটি ঘটার সাথে সাথে শফিক স্যার জিতুকে পেছন থেকে চেপে ধরেন। জিতু তখন ছোটার জন্য হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছিল। জিতুও নিজেকে ছাড়াতে ওই শিক্ষকের সাথে খারাপ আচরণ করে।” পরে শফিক স্যার জিতুকে ছেড়ে দেন এবং আহত উৎপল স্যারকে হাসপাতালে নিয়ে যান।জিতু আরও ৫-৬ মিনিট সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে।কয়েকজন ছাত্রী জিতুর এ কাণ্ডের প্রতিবাদ করলে, জিতু তাদের বলে, “মারছি তাতে কী হইছে”! পরে পেছনের গেট দিয়ে জিতু বের হয়ে যায়। এর মধ্যে জিতুর বাবা স্কুলে এসে কোনো সমবেদনা না জানিয়ে উল্টো শাসিয়ে চলে যায়।’
ওই ছাত্র আরও বলেন, “আমরা শুনেছি ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জিতু কিছু ছেলেপেলে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। যদি পালিয়েই থাকে তাও হয়তো পরের দিন। এর আগেও ইভটিজিং, চুল বড় রাখা, বেয়াদবিসহ বেশ কিছু ঘটনার বিচার জিতুর বিরুদ্ধে এসেছে। সে সময় উৎপল স্যার এ সমস্ত ঘটনায় তাকে শাসন করেছেন।’
জানা গেছে, জিতুর মা টাকা দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন, “আমি হাসপাতালে ছিলাম। উৎপল কুমারকে আইসিইউতে দেখে একজন বোরকা পরা মহিলা এসে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, “স্যার, কেমন আছেন?” আমি বললাম, “ভালো নেই।” তিনি আবার আমার পিছ পিছ এসে আমাকে বলেন ‘চিকিৎসা যা করার করেন, আমরা দেখব।” তারপর আমি বললাম, “আপনি কে?” সে বলল সে জিতুর মা। অন্য একজন বয়স্ক মহিলার সাথে, তিনি ছিলেন জিতুর দাদী। পরে আমি শুনেছি জিতুর বাবাও ওই সময় হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমার সঙ্গে দেখা করেননি। আমি তাদের কথা না শুনেই চলে যাই।’
শনিবার (২৫ জুন) দুপুরে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারের ওপর অতর্কিত হামলায় গুরুতর আহত আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলাম জিতু। সোমবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শিক্ষক উৎপল কুমার। ঘটনার পর থেকে জিতু পলাতক রয়েছে।
প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থীর হামলায় গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয় আশুলিয়ার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক উৎপল কুমারকে। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই শিক্ষক মারা যান।