বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় প্রয়ানের ঝুঁকিতে তিন সন্তানের জননী। দেড় মাস আগে অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের সময় চিকিৎসক তার পেটে গজ রেখে সেলাই করে দেন। ধীরে ধীরে তার অবস্থার অবনতি হলে, দেড় মাস পর তাকে আবার অপারেশন করা হয়। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটনার তদন্তের জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে ঘটনার তিন দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।
হাসপাতালে অপারেশনের পর গর্ভবতীর পেটে গজ রেখে সেলাই করায় ভিকটিম শারমিন আক্তার শিলাকে ১৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিট আবেদনে রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া ভুক্তভোগীর পরিবারকে খরচ মেটাতে অবিলম্বে ১০ লাখ টাকা দিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (৭ জুন) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জীবননেছা মুক্তা জনস্বার্থে এই রিটটি করেন। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এসএম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিট দায়ের করা হয়েছে। রিট আবেদনে স্বাস্থ্য সচিব, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার, বরিশাল মেডিকেলের পরিচালকসহ অন্যদের বিবাদী করা হয়েছে।
জানা গেছে, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার বাসিন্দা জিয়াউল হাসানের স্ত্রী শারমিন আক্তার শিলা গত ১৮ এপ্রিল রাতে সিজারের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। অস্ত্রোপচারের পর থেকেই তিনি পেটে ব্যথা অনুভব করছিলেন। এ জন্য তাকে সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বাড়ি ফেরার কয়েকদিন পর থেকেই প্রচণ্ড পেটে ব্যথা শুরু হয়। পেট ফোলা। ২১ মে পেটে ফুটো দিয়ে পুঁজ বের হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২২ মে পুনরায় অপারেশন শুরু হয়। এ সময় শারমিনের বাবা আব্দুর রব সিকদার বলেন, আমি মেয়েকে সরকারি হাসপাতালে এনে যথাযথ চিকিৎসার জন্য ভর্তি করি। কিন্তু সেখানে ভুল চিকিৎসায় আমার মেয়ে প্রয়াত হওয়ার অবস্থায়। এমন যদি হয়, তা হলে মানুষ যাবে কোথায়? আমি এই অপকর্মকারী ডাক্তারের বিচার চাই।
তিনি বলেন, অপারেশনের পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে মেয়েটিকে শেবাচিম হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে দেখতে পান একটা নাড়ি আছে। ওষুধ খেলে ভালো হয়ে যাবে। তারা নতুন ওষুধ দেয়। তবে মেয়েটি সুস্থ হয়নি। একপর্যায়ে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করা হলে তার পেটে গজ রয়েছে বলে জানান চিকিৎসক। হাসপাতালে পুনরায় ভর্তির পর ২২ মে সকালে অপারেশন করা হয়। ডা. নাজিমুল হক শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান বললেন, লম্বা গজ থাকায় পেটের ভিতর ছিদ্র হয়ে নাড়ি ফুলেছে। অপারেশন করা হয়েছে। তার সার্বিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভুক্তভোগী শারমিন আক্তার ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার বাসিন্দা জিয়াউল হাসানের স্ত্রী। গত ১৬ এপ্রিল বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন শারমিন আক্তার। অপারেশনের পর থেকেই তিনি পেটে ব্যথা অনুভব করছিলেন। এ জন্য তাকে সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছিল। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার কিছুদিন পর প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। পরবর্তীতে পেটে পুঁজ বের হওয়া শুরু হয়। পরে তাকে শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে, শারমিনের পেটের ভেতরে একটি গজ রয়েছে। পরে ২২ মে পুনরায় অপারেশন করেন শেবাচিম হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. নাজিমুল হক।