প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) ক্যাডার, নন-ক্যাডার পরীক্ষাসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসানোর সঙ্গে একটি বড় চক্র জড়িত। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সৈয়দ আবেদ আলীর সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীকে ১০ কোটি টাকার চেকসহ গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই চক্রে আরও আটজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। হাইপ্রোফাইল কয়েকজন প্রশ্নফাঁসকারীর নামও জানা গেছে।
সৈয়দ আবেদ আলী নগদ লেনদেন ও চাকরি প্রার্থী নিয়োগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আবেদ আলীর মেন্টর ছিলেন সাবেক পিএসসি সদস্য মাহফুজুর রহমান। পিএসসির যে কোনো নিয়োগ পরীক্ষা হলেই এই চক্রের সদস্যরা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত।তদন্তে এখন পর্যন্ত হাইপ্রোফাইল কিছু নামও পাওয়া গেছে। যাচাই-বাছাই শেষে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
২০১০ সালে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে আবেদ আলীর সম্পৃক্ততা পায় একটি গোয়েন্দা সংস্থা। তাকে গ্রেপ্তারও করা হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁসে কারা জড়িত, অন্যান্য প্রশ্নপত্র কীভাবে ফাঁস করা হয় সেই তথ্যও তিনি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দেন। এ সময় আবেদ আলী পিএসসি চেয়ারম্যানকে প্রতিশ্রুতি দেন যে তিনি আর কখনো প্রশ্ন ফাঁস করবেন না। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তৎকালীন পিএসসির চেয়ারম্যান আবেদ আলীসহ জড়িত কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করেন। কিন্তু চাকরিচ্যুত হওয়ার পর আবেদ আলী প্রশ্নফাঁসের কাজটি পুরাদমে শুরু করেন। ওই সময় ভর্তি পরীক্ষার এই প্রশ্নগুলো বিজিপ্রেসের যারা টাইপ করতো, সেখানে ছিল আবেদ আলীর লোক। তারা প্রশ্নগুলো মুখস্থ করে ফেলতো। এবং প্রশ্ন ফাঁস করতো। তারা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পাঠিয়ে দিত। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও ওইসব কোচিং সেন্টারকে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু তাদের পেছনের শক্তি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে তাদের কিছুই করা সম্ভব হয়নি।
ওই সময় বিজি প্রেসের একজন উপ-পরিচালকও প্রশ্নপত্র ফাঁসের হোতা ছিলেন। তার দেওয়া প্রশ্ন ফাঁসে যারা বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার হয়েছেন, তাদেরকে অনেকেই ‘আবেদ ক্যাডার’ হিসেবে ডাকছেন। আর এসব আবেদ ক্যাডাররা আবেদ আলীকে রক্ষা করতে তৎপর রয়েছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা জানান, দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনার জন্য তাদের তালিকা প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে দেওয়া হবে।