প্রশ্ন ফাঁস কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে জনপ্রিয় অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী তাহসান খানের মায়ের নাম। বিসিএস ও বিভিন্ন সরকারি নিয়োগ পরীক্ষায় একটি চক্র প্রশ্নফাঁস করে আসছে সম্প্রতি এমন সংবাদ প্রকাশের পর গ্রেফতার করা হয় পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৭ জনকে।
এরপরই বেরিয়ে আসতে থাকে নানা তথ্য। এ কাণ্ডে যাকে নিয়ে এত আলোচনা পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক আলীর গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীকে নিয়ে। কিন্তু ড. সাদীক আলী দাবি করেছেন সে আবেদ আলী তার গাড়িচালকই ছিলেন না। তিনি ছিলেন সংগীতশিল্পী তাহসান খানের মা ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগমের গাড়ির চালক। তাহমিদা বেগম যখন পিএসসির চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন তার ব্যক্তিগত গাড়ির ড্রাইভার ছিলেন সৈয়দ আবেদ আলী।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক।
ডক্টর মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ‘পিএসসি চেয়ারম্যান হিসেবে যোগদানের আগে আমি পিএসসির সদস্য ছিলাম। আমি শুনেছি যে লোকটি (আবেদ আলী) আমি যোগদানের আগেই তার চাকরি ছেড়ে দিয়েছিল। জিনাতুন নেছা তাহমিদা বেগম এবং এটিএম আহমেদুল হক চৌধুরী পিএসসি চেয়ারম্যান থাকাকালীন ড. আবেদ পিএসসি চেয়ারম্যানের ড্রাইভার ছিলেন। ইকরাম আহমেদ চেয়ারম্যান থাকাকালে আবেদকে বরখাস্ত করা হয়। পরে তাকেও চাকরিচ্যুত করা হয়।
জানা যায়, প্রফেসর ড. জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম দেশের অন্যতম প্রধান সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পাবলিক ওয়ার্কস কমিশনের (পিএসসি) অষ্টম চেয়ারপারসন ছিলেন। ৯ মে, ২০০২-এ, তিনি পিএসসি চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ৭ মে, ২০০৭ পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত হন।
১৯৯৭ সালের দিকে আবেদ আলী রাজধানী ঢাকার ইন্দিরা রোডের পশ্চিম রাজাবাজার এলাকায় একটি ব্যাচেলর মেসে থাকতেন। ওই সময়ই সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর এলাকার শাহিন নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে আবেদ আলীর পরিচয় হয়। শাহীনের চাচা মেজবাহ সচিবালয়ে চাকরি করতেন। শাহীনের মাধ্যমে পিএসসিতে চালকের চাকরি পান তিনি।
জিনাতুন নেসা তাহমিদা বেগম যখন পিএসসির চেয়ারম্যান ছিলেন তখন সৈয়দ আবেদ আলী পদোন্নতি পেয়ে পিএসসির চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত গাড়িচালক হন। তখন থেকেই সৈয়দ আবেদ আলী প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত। এরপর দীর্ঘদিন ধরে তিনি একটি চক্র দিয়ে প্রশ্ন ফাঁস করে আসছিলেন। তবে, ওই সময়ে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরেই ছিলেন।
নন-ক্যাডার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৪ সালে তাকে পিএসসির চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
পিএসসির প্রতিবেদনে বলা হয়, নন-ক্যাডারে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ‘সহকারী মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার’ পদের লিখিত পরীক্ষা ২০১৪ সালে ২২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। সেই পরীক্ষায় এক পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে হলের বাহির থেকে অবৈধভাবে সরবরাহকৃত সংশ্লিষ্ট প্রশ্নের উত্তরসহ ৪টি লিখিত উত্তরপত্র হাতেনাতে ধরা হয়। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ আইনের ধারায় মামলা করা হয়। ওই মামলার তদন্তে সৈয়দ আবেদ আলীর সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য-প্রমাণ মেলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়।
উল্লেখ্য, ২৪তম বিসিএসে প্রথম পররাষ্ট্র ক্যাডার হয়েছিলেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও সংগীতশিল্পী তাহসান খান। সেবারই ঘটে বিসিএসে সবচেয়ে বড় প্রশ্নফাঁস কেলেঙ্কারি, বাতিল হয় পরীক্ষা। দুর্নীতির জন্য আবারও বিসিএসের ভাইভা অনুষ্ঠিত হলে বাদ পড়েন তাহসান খান।