গত ১৬ ই অক্টোবর হঠাৎ করেই বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মকবুল হোসেনকে। এরপর ফের তিনজন পুলিশ সুপারকে (এসপি) বাধ্যতামূলকভাবে অবসরে পাঠিয়ে দিয়েছে সরকার। এ দুটি ঘটনার পর প্রশাসন জুড়ে বিরাজ করছে এক ধরনের আত”ঙ্ক। সরকারের হঠাৎ করে সচিব এবং এসপিদের অবসরে পাঠানোর বিষয়ে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তার মনে প্রশ্ন, প্রশাসনে আসলে হচ্ছেটা কি?
২০২৩ সালের ২৫ অক্টোবর মকবুল হোসেনের অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। তার এক বছর আগে ১৬ অক্টোবর হঠাৎ করে তাকে অবসরে পাঠায় সরকার।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেন সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ৪৫ ধারা অনুযায়ী জনস্বার্থে সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয়।
পাবলিক সার্ভিস অ্যাক্টের ৪৫ ধারায় বলা হয়েছে যে ২৫ বছর চাকুরী পূর্ণ হওয়ার পর, সরকার জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো সময় কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই কোনো সরকারি কর্মচারীকে অবসর দিতে পারে। তবে শর্ত থাকে যে, যেসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন প্রাপ্ত হবে।
অন্যদিকে, মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পৃথক প্রজ্ঞাপনে তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে চাকরি শেষ হওয়ার আগেই অবসরে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন- পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মির্জা আবদুল্লাহেল বাকী ও মো. দেলোয়ার হোসেন মিয়া এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এসপি (টিআর) মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ চৌধুরী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত পৃথক তিনটি প্রজ্ঞাপনের ভাষা একই। পাবলিক সার্ভিস অ্যাক্ট ২০১৮ এর ধারা ৪৫ এর বিধান অনুসারে জনস্বার্থে সকলকে সরকারি চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয়েছে।
এ দুটি ঘটনায় প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে আত”ঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকেই খুঁজছেন ঠিক কী ‘জনস্বার্থে’ চার কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এর বাইরেও চলছে নানা গুঞ্জন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি সচিব এক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এসব ঘটনার পর সবাই আতঙ্কে রয়েছেন। অনেক কর্মকর্তা আমাদের প্রশ্ন করছেন, প্রশাসনে আসলে কী হচ্ছে? কেন হঠাৎ করে তাদের অবসরে পাঠানো হলো?
তিনি বলেন, আমরা সঠিক তথ্য জানি না। তাই উত্তর দিতে পারছি না। তবে যতদূর মনে হচ্ছে, উচ্চ আদালতে তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকায় এমনটি হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গুজব- আরও কয়েকজন কর্মকর্তাও বাধ্যতামূলক অবসরের তালিকায় রয়েছেন। যে কারণে আত”ঙ্ক বেশি কাজ করছে। নির্বাচনের আগের সময়টা খুবই নাজুক। এ সময় হঠাৎ করেই বিভিন্ন ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অতিরিক্ত সচিব বলেন, এসব ঘটনায় আমরা বিস্মিত। আমরা জানি না কেন তারা অবসর নিয়েছেন। এসব ঘটনার পর প্রশাসনে এক ধরনের আত”ঙ্ক বিরাজ করছে। হঠাৎ করে আবারও বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর আশঙ্কা কাজ করছে অনেকের মনে।
এ প্রসঙ্গে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের একান্ত সচিব (উপসচিব) নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসব ঘটনার পর অনেক কর্মকর্তা মন্ত্রীর কাছে আসছেন। অনেকেই আমাকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করছেন। কেন তারা অবসর নিয়েছেন তা আমরা নিজেরাই জানি না। তবে বিষয়টি নিয়ে সবার মধ্যে এক ধরনের আত”ঙ্ক বিরাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বলেন, বাধ্যতামূলক অবসরের মাধ্যমে নির্বাচনের আগে কর্মকর্তাদের বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে কেউ অপরিহার্য নয়। সরকারের বিরুদ্ধে কিছু করার চেষ্টা করলে আন্দোলন করতে হবে।
এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি ঐ মন্ত্রী। অবসরপ্রাপ্ত এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ‘সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডের’ অভিযোগ আসছে। তবে এসব অভিযোগ নিয়ে মুখ খুলছেন না কেউ। চাকরির মেয়াদ এক বছর থাকতেই নিজ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেনকে অবসরে পাঠানোর ‘অন্তর্নিহিত কারণ জানা নেই’ তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের।
“আমি জানি না অন্তর্নিহিত কারণ কি,” তিনি বলেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলতে পারে। আমি অন্তর্নিহিত কারণ জানি না.
সচিব অনেক দিন ধরে আপনার সাথে কাজ করছেন। তিনি দুর্নীতি বা সরকারবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, দেখুন, আমি জানি না। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এপিডি) মোঃ আবদুস সবুর মন্ডল বলেন, সরকার ২৫ বছর চাকরির পর যে কাউকে অবসর দিতে পারে। তবে সুনির্দিষ্ট কারণে মকবুল হোসেনকে অবসরে পাঠানো হয়েছে, এ বিষয়ে তিনি কিছু আর বলেননি।
আখতার হোসেন যিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি হঠাৎ করে তিন জন এসপিকে অবসরে পাঠিয়ে দেয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, সরকার কখনো কোনো কর্মকর্তাকে কারণ ছাড়াই অবসরে পাঠিয়ে দেয় না। যাদেরকে অবসরে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ ছিল। আর সরকারি চাকরির বিধি অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে ২৫ বছর পূর্ণ হলে সরকার জনস্বার্থে যেকোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তার দায়িত্ব থেকে অবসরে পাঠিয়ে দিতে পারে।