চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের সৌদি আরবে বিক্রির ঘটনায় রুবেল নামে পাচার চক্রের অন্যতম হোতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। দীর্ঘদিন ধরেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ নানা অনৈতিক কাজ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তার মুখোশ খুলে দেয় তারই প্রতারণার শিকার এক নারী।
ওই নারী বলেন, ‘তারা আমাকে সৌদি আরবে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্য অফিসে বিক্রি করে দেয়। তারপর একটি বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতে পাঠানো হয়। সেখানে শুরু হয় অ’মা’নু’ষিক ‘নি’র্যা’ত’ন। এজেন্সি অফিসে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি, উল্টো বেড়েছে নি”র্যা’ত’নে’র মাত্রা। খেলার পর না খেয়ে একদিন কাটাতে হয়েছে। বাড়িতে স্বজনদের জানালে নি’র্যা’ত’নে’র মাত্রা আরও বেড়ে যেত। দেশে ফিরতে চাইলে আরও” মা’র’ধ’র করত। আ’মার ‘মতো অনেক নারী নি”’র্যা”তি’ত হয়েছেন। কিন্তু ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলে না।
কথাগুলো বলেছেন সৌদি আরবে নি”র্যা’ত’নে’র শিকার নারায়ণগঞ্জের (৩৪) এক নারী। স্বামী-সন্তান নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলায় থাকতেন তিনি। সংসারে অভাব ছিল। ঋণ আদায় ও পরিশোধ করতে তিনি সৌদি আরবে যান। সেখানে গেলে তার ওপর নি’র্যা”ত’ন’ শুরু’ হয়। অবশেষে অনেক কষ্টে ২২ নভেম্বর দেশে ফেরেন তিনি।
তিনি বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের জন্য অনেক টাকা পাওনা। সেই টাকা পরিশোধ করে পরিবারে সম্পদ ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখে দালাল মালেক ৩০,০০০ টাকা বেতনে গৃহপরিচারিকার চাকরি দেয়। এরপর সাইফুল ইসলাম ও বাবুর পরিচয় দেন। পরে তারা আমাকে সৌদি আরবে পাঠায়। কিন্তু তারা আমাকে ওই দেশে নিয়ে গিয়ে চাকরি দেওয়ার পর অন্য অফিসে বিক্রি করে দেয়। রিয়াদের আরেকটি অফিস আমাদের পাসপোর্ট বিক্রি করেছে। সেখান থেকে পুরুষদের মাধ্যমে প্রায় আট ঘণ্টার দূরত্বে একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গৃহকর্মীর কাজ দেওয়া হয়।’
ভুক্তভোগী জানান, এক মাস ১০ দিন পর তিনি ৮২০ রিয়াল বেতন দেন। তবে মাসে ১ হাজার রিয়াল দেওয়ার কথা ছিল। আর বেতন দিতে গিয়ে টা’কাটা মুখে ছুড়ে দেন। এরপরই শুরু হয়’ মা’র’ধ’র। কেন তাকে মারধর করা হয়েছে তা জানি না। ওদের দেশের ভাষা বুঝতাম না। এজেন্সির লোকদের বিষয়টি জানান এবং কাজের স্থান বদল করে দিতে বলেন। এরপরও প্রায় এক সপ্তাহ সেখানে থাকার পর তাকে এজেন্সির অফিসে নেওয়া হয়।
তখন ভুক্তিভোগী বলেন, ‘আমি ওই বাড়িতে যাবো না, তখন এজেন্সির কর্মকর্তারা বলে, তুই ‘ম’রে’ যা অথবা বেঁচে থাক তা দেখার বিষয় না। দুই বছর সেখানে থাকতে হবে।
এদিকে দেশে থাকা স্বজনদের বিষয়টি জানালে তারা এজেন্সির মালিক সাইফুলের সঙ্গে কথা বলেন। সাইফুলের সঙ্গে দেখা হলে তিনি তার কথা মতো রুবেলের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। রুবেল তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। এসময় মালেক ও বাবু নামে অপর দুই দালাল ভুক্তভোগীকে ডেকে বলেন, ‘আপনাকে যে বাড়ি থেকে আনা হয়েছে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে, আপনি বেঁচে থাকেন-মরে যান তা দেখার বিষয় না।’
নি;র্যা;তি;তা বলেন, ‘আমার মতো আরও অনেক মহিলা ছিল, সবার একই অবস্থা। ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি। আমি তাদের বিচার চাই।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী ২২ নভেম্বর বাংলাদেশে পৌঁছায়। ২৪ নভেম্বর বাদী চারজনকে আসামি করে হাতিরঝিল থানা’য় ‘মান’ব ‘পা’চা’র প্রতিরোধ ও দমন আইনে মা’ম’লা’ করেন। তিনি বলেন, মামলার পর থেকে ওই নারীর স্বজনদের চাপ ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনায় হাতিরঝিল থানার এসআই আসআদ বিন আব্দুল কাদিরের সঙ্গে আলাপ করা হলে তিনি এ বিষয়টি নিশ্চিত করে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ইতিমধ্যে এ ঘটনায় রুবেল নামে এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় আরো অনেকেই জড়িত রয়েছন বলেও মনে করছে পুলিশ।