Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / opinion / প্রফেসর ইউনূসের বিপক্ষে যু”দ্ধ করতে গিয়ে সরকার আমেরিকার বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে: আসিফ নজরুল

প্রফেসর ইউনূসের বিপক্ষে যু”দ্ধ করতে গিয়ে সরকার আমেরিকার বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে: আসিফ নজরুল

সম্প্রতি ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপ্রচার চালানো হচ্ছে। যা কখনো দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। যারা যারা এগুলো করছেন তারা শুধু সরকারের পক্ষে হয়ে তেল দিচ্ছেন। কিন্তু কখনো ভাবছেন না তিনি আসলে কোনো প্রকৃতি মানুষে তার স্থান কোথায়। বিষয়টি নিয়ে সা/মাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ/কটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বি/শিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আসিফ নজরুল হু/বহু পাঠকদের জন্য নি/চে দেওয়া হলো।

অধ্যাপক ইউনুসের বিরুদ্ধে দেশে মারাত্মক একটা স্মেয়ারিং ক্যাম্পেইন চলছে। টিভি কিংবা পত্রিকা খুললেই ইউনুস কত খারাপ আর ইউনুস কত ষড়যন্ত্র করছে এই নিয়ে আলোচনা আর বিবৃতিতে ভরপুর। এই সরকার গত ১৩টি বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে এই মানুষটির পেছনে লেগে এই মানুষটিকে নানাভাবে অপমান অপদস্ত করেছে। এর মাত্রা বাড়তে বাড়তে এখন এই পর্যায়ে এসে ঠেকেছে। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ? ইউনুস দায়ী! পশ্চিমা দেশ বিশেষ করে ইউরোপ ও আমেরিকা বাংলাদেশে একটা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে? এর জন্যও ইউনুস দায়ী! ১০৬ জনের বেশি নোবেল বিজয়ীসহ ১৬০ জনের বেশি বিশ্ব বরণ্য ব্যক্তি ইউনুসকে হেনস্থা না করার জন্য অনুরোধ করে খোলা চিঠি দেওয়ায় সরকার ক্ষুব্ধ হয়েছে। সরকার প্রধানের নারাজ হওয়া দেখে দলান্ধ বুদ্ধিজীবীরা এখন বিবৃতি যুদ্ধে নেমেছে।

পৃথিবীর ইতিহাসে ১০৬ জন নোবেল বিজয়ী কখনো কোন ব্যক্তির পক্ষে দাঁড়ানোর নজির পৃথিবীতে আছে? বিবৃতি প্রদানকারী এই নোবেল বিজয়ীদের লিস্টে ভারতের অমর্ত্য সেন ও অভিজিৎ ব্যানার্জী নাই বলে এখানে অনেকেই বলার চেষ্টা করতে থাকেন। এর পরদিনই অভিজিৎ ব্যানার্জী ও তার স্ত্রী নোবেলজয়ী এস্থার ডুফলো প্রফেসর ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি যুদ্ধে সামিল হন। এই ১০০-র বেশি নোবেল জয়ী এবং আরো ৬০ জন সাবেক ও বর্তমান ক্ষমতাধর বিশ্ব বরণ্য ব্যক্তিত্ব একটি মানুষের পেছনে দাঁড়িয়েছেন। এটিকে সম্মান দিন। এর অর্থ বোঝার চেষ্টা করুন। এখন রাগের বশবর্তী হয়ে কিছু করলে আরো বড় ভুল করার সম্ভবনা আছে। যার খেসারত দেশকে দিতে হতে পারে।

এক অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ইউনুসকে নিয়ে কিছু প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি অমুক জায়গায় গিয়েছেন কিনা। তমুকদিন আসলেতো নীরব থাকেন। মানে এইটাও এদের বোঝার ক্ষমতা নেই যে উনি যদি আপনাদের মত ভাবতেন এবং করতেন তাহলে তিনিও আপনাদের মতোই হতেন। উনিতো আপনাদের মত না। যেইসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেইসব বিষয়কে আপনারা রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে এইগুলোকে নিয়ে আপনারা খেলেন। আপনারা এইগুলোকে যদি রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি না করতেন তাহলে উনি হয়ত এইসব ইস্যুতে নীরব থাকতেন না। বিশ্ব পার্স্পেক্টিভে আপনাদের এইসব রাজনৈতিক পয়েন্টস স্কোরিং খেলা মাইক্রোস্কোপিক ইস্যু কারণ পৃথিবী অনেক বড়। উনিও যদি এইসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন তাহলে কি প্রফেসর ইউনুস বিশ্ব বরেণ্য ব্যক্তিত্ব হতে পারতেন? আপনারাইতো তাকে কাঁদা ছোড়াছুড়ির মাঝে ব্যস্ত রেখে তার মেধাকে অপব্যবহার করাতেন। শুধুই কি ইউনুস? প্রফেসর রেহমান সোবহান কি এইসব মাইক্রোস্কোপিক বিষয়ে নাক গলায়? কই এত এত মানুষকে দিয়ে বিবৃতি দেওয়ান কিন্তু প্রফেসর রেহমান সোবহানকে দিয়ে ইউনূসের বিপক্ষে কি বিবৃতি দেওয়াতে পেরেছেন বা পারবেন?

আসলে এই দেশে প্রফেসর ইউনুসকে প্রপারলি মাপতে জানার মত মানুষই নাই। যারা ইউনূসের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছে সেই ১৭০ জনকে এক পাল্লায় রেখে যারা ইউনূসের বিপক্ষে বিবৃতি দিচ্ছেন তাদের আরেক পাল্লায় রাখুনতো। এই পাল্লায় হাজার হাজার মানুষকে রাখলেও হবে না। পারলে অমর্ত্য সেন, রেহমান সোহবানকে দিয়ে বিবৃতি দেওয়ান। এই দুইজনকে দিয়ে দেওয়াতে পারলেও বুঝতাম আপনাদের কথার কিছুটা সারবত্তা আছে। যা ইউনুস বিপক্ষে দিচ্ছে এরা হলো সুবিধাভুগী। এরা সুবিধাবঞ্চিত হওয়ার ভয়ে আছে।

প্রফেসর ইউনুস এই দেশের জন্য অনেক করেছেন। সরকার চাইলে উনাকে দিয়ে আরো অনেক ভালো কাজ করাতে পারতেন। সেই পথে না গিয়ে উনার পেছনে লেগে কি আপনাদের কোন লাভ হচ্ছে? উনি বাংলাদেশের একজন বিশাল মাপের এম্বাসেডর। যারা বিদেশে থাকে তারা জানে ইউনুস কেমন? প্রফেসর ইউনুসকে কি শুধু আমেরিকা ঘরানার দেশগুলোই শ্রদ্ধা করে? চীন করে না? ভারত করে না? জাপান করে না? দক্ষিণ আফ্রিকা করে না? নোবেল পুরস্কার পাওয়ার এত বছর পরেও দ্বিতীয় কোন আরেক নোবেল বিজয়ী আছেন যিনি এখনো সমান জনপ্রিয়। হয়ত ভবিষ্যতে উনার নতুন তত্ব সামাজিক ব্যবসা মডেলের জন্য আরেকটি নোবেল পুরস্কার পাবেন। শেষমেশ উনিও মানুষ। উনারও ভুল হয় এবং ভুল আছে। এই দেশে উনার চেয়ে অনেক বেশি ভুল করা, অনেক অনেক অনেক বেশি দুর্নীতি করা মানুষের কি অভাব আছে? উনিতো দেশ থেকে অর্থ পাচার করে নিয়ে যান না। উনি বরং বিদেশ থেকে ডলার আনেন। Appreciate করেন। তাতো করেনই না উল্টো হেনস্থা আর অপমানে জর্জরিত করছেন। এতে কি বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মান বাড়ছে?

অনেকেই বলেন বেলারুশের নোবেল জয়ীর বিরুদ্ধে বেলারুশ সরকার মামলা করছে কই তার পক্ষেতো কেউ কোন বিবৃতি দেয় না? বা বলা হয় নোবেল জয়ী হওয়া সত্বেও বেলারুশেতো তার বিপক্ষে মামলা চলছে? এখানেইতো ইউনূসের বিশেষত্ব। বুঝতে হবে এত মানুষ কেন ইউনূসের পক্ষে দাঁড়ালো? আর নোবেল জয়ীদের পেছনে লেগেছে কোন কোন দেশ? চীন, বেলারুশ, রাশিয়া প্রভৃতি দেশ। এইগুলো কি খুব ভালো দেশের উদাহরণ?
প্রফেসর ইউনূসের বিপক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে সরকার আমেরিকার বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। এইটা ভয়ানক। বিশ্বে আমেরিকা এখনো একমাত্র মোড়ল। এদের ক্ষেপিয়ে তুললে আমাদের অর্থনীতিতে ধস নামবে। পশ্চিমা দেশ বিশেষ করে আমেরিকা ছাড়া পৃথিবীর আর কোন দেশ ইমিগ্রান্টসদের প্রতি এত উদার? রাশিয়া ইমিগ্রেন্টস নেয়? সৌদি আরব নেয়? চীন নেয়? এই যে রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে আছে এদের সবচেয়ে বেশি সহায়তা কে দিচ্ছে? চীন, সৌদি, রাশিয়া, ভারত? আবারও সেই পশ্চিমারাই। আমেরিকা যদি রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা বন্ধ করে দেয় তখন টের পাওয়া যাবে কত ধানে কত চাউল। জাতিসংঘে কে বেশি অনুদান দেয়? সেটাও আমেরিকা। ভিভি, ওপি১ ইত্যাদি নানা প্রোগ্রামে পৃথিবীর নানা দেশ থেকে বৈধ উপায়েও ইমিগ্রান্টস নেয় আমেরিকাই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে পৃথিবীর যে এই বিশাল অগ্রগতি এর পেছনেও আমেরিকা। আমেরিকা শিক্ষা ও গবেষণায় বিশাল ব্যয় করে বলেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এই বিশাল অগ্রগতি। তাদের দ্বারা তৈরী অগ্রগতির একটা স্পিলওভার ইফেক্ট দিয়ে পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মানুষের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটেছে। আমাদের দেশের মানুষদের জীবন মানের যেই উন্নয়ন এইটা যতনা আমাদের সরকারের কৃতিত্ব তার চেয়ে বেশি হলো স্পিলওভার ইফেক্ট।

About Babu

Check Also

বাঁধন নৌকার লোক বলে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হইতো: পিনাকি

ছাত্র আন্দোলনে তারকাদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। তিনি আওয়ামী সরকারের বিরুদ্ধে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *