প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ইনকিলাব, জানা গেল কারণ

জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-জনতার নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ তিন দফা দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ।

রবিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে পদযাত্রা শুরু করে সংগঠনটি। দুপুর ১টার দিকে তারা যমুনার সামনে অবস্থান নেন।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তাদের বক্তব্য:
বক্তারা বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় চলছে—’তোমরা কারা, আমরা কারা!’ এসব স্লোগানের আগে তাদের কথা ভাবুন, যারা আপনাদের এসব বলার সুযোগ তৈরি করেছেন। আন্দোলনে অংশ নেওয়া বিপ্লবীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এই বিপ্লব দীর্ঘস্থায়ী হবে না।”

তারা সব রাজনৈতিক দলকে আহ্বান জানান, আন্দোলনকারীদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে।

ইনকিলাব মঞ্চের ৩ দফা দাবি:
১. আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নিবন্ধন বাতিল করা।
২. বিপ্লবীদের রক্ষায় সব স্তরের আওয়ামী লীগের কমিটির সদস্যদের গ্রেপ্তার করা।
৩. প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ জুলাই বিপ্লবের সকল যোদ্ধার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

ইনকিলাব মঞ্চের এই অবস্থান ও দাবিগুলো দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।


বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে নতুন মোড়

বাংলাদেশ-ভারতের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে উত্তেজনার নতুন মোড় নিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের বিশদ বিবরণ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে শান্তিপূর্ণ ছাত্রবিক্ষোভ ‘দেশব্যাপী আন্দোলনে’ রূপ নেয়। এই আন্দোলনকে ‘বিশ্বের প্রথম জেন-জি বিপ্লব’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। পরিস্থিতির চাপে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন এবং বর্তমানে তিনি দিল্লিতে নির্বাসিত রয়েছেন।

পরবর্তী সময়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশে দায়িত্ব নেয়। তবে হাসিনার শাসনামল শেষে দেশটির ভেতরে এবং বাইরের নানা জটিলতা সামনে আসে। বিশেষ করে বাংলাদেশে বসবাসকারী সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা এবং ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।

অক্টোবর মাসে বাংলাদেশি হিন্দু নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও শীতল করেছে। তার সমর্থকদের দাবি, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হামলা নিয়ে সোচ্চার হওয়ার কারণেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এর পাশাপাশি, বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলায় হামলার ঘটনা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও সংকটময় করে তুলেছে। ওই হামলায় উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বাংলাদেশি জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং হাইকমিশন ভবনে ভাঙচুর চালায়।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দাবি করেছে, সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ অতিরঞ্জিত এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগ থেকেই বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী অসন্তোষ ধীরে ধীরে বাড়ছিল। ভারত এখন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

দিল্লিতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন কূটনৈতিক মেরুকরণ তৈরি করছেন বলে মনে করা হচ্ছে। দুই দেশের সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়, তা এখন দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।