জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর কয়েক মাস বাকি রয়েছে, আর এই নির্বাচনে দেশের সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ দলগুলোর সাথে সংলাপে বসছেন। তবে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি সংলাপে বসতে সম্মত নয়। তারা রাষ্ট্রপতির সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপকে একটি নিছক অপরাজনীতির একটি বিষয় বলে আখ্যা দিয়েছে। তবে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সাথে সংলাপে বসেছেন। আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য দলগুলোর সাথে সংলাপে বসছেন রাষ্ট্রপতি। যেহেতু বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আর কিছুদিন মাত্র বাকি। তাই সকল রাজনৈতিক দলের সংলাপের মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন কমিশন গঠন করতে দলগুলোর এগিয়ে আসা উচিৎ এমনটাই জানিয়েছে আ.লীগ।
এদিকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কোনো প্রকার সংলাপে অংশ নেবেন না বলে জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীরবিক্রম। একইসঙ্গে তার দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার (৫ জানুয়ারি) তেজগাঁওয়ে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
অলি আহমদ বলেন, জনগণের পয়সায় আমরা কোনো চা চক্রে যেতে রাজি নই। অনিবন্ধিত কিছু দল আছে এবং যেসব দলের সরকারের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক, সেসব দলই মিডিয়া কাভারেজের জন্য সংলাপে অংশে নিতে যাচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কে তিনি বলেন, অনেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলছেন। কিন্তু তিন মাসের এই সরকার কোনো সমস্যারই সমাধানের জন্য যথেষ্ট নয়।
এলডিপি প্রেসিডেন্ট বলেন, সরকারের প্রতিটি সেক্টরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের লোকজন ঢুকে পড়েছে। ছাত্রলীগের ছেলেরা সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পেয়ে বসে আছে। দেশের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রকাশ্যে হোক বা অন্তরে হোক আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে মিশে গেছে। দেশে এমনভাবে অরাজকতা চলছে যে, এখন অনেকেই বিদেশে নিষেধাজ্ঞা পাচ্ছেন। এটা শুধু কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ নয়। এ অবস্থায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন না করে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপ কিংবা শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে নির্বাচন করলেই সমস্যা সমাধান হবে না।
দেশের পরিস্থিতি পরিবর্তনে জাতীয় সরকার গঠনই যথার্থ বলে মনে করেন তিনি। অলি আহমদ বলেন, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলে কোনো লাভ হয় না। কারণ, প্রধানমন্ত্রী যা করতে চান, তাই করবেন। আওয়ামী লীগের আমলে কখনো কোনো সুষ্ঠু ভোটের নির্বাচন হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ইউনিয়ন থেকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কিংবা কেন্দ্রীয় নেতা, এমন কেউ নাই যার দুই-চার তলা বাড়ি নাই। দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, তবে এভাবেই হচ্ছে। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট ৩০ হাজার কোটি টাকাতে ঠেকছে। কোনো প্রজেক্ট নির্দিষ্ট সময়ে হয় না। আমিও মন্ত্রী ছিলাম, আমার সময়ে কোনো প্রজেক্ট নির্দিষ্ট সময়ের বেশি লাগেনাই।
এসময় জনগণের জন্য সুশাসন নিশ্চিত করা, দেশে মানবাধিকার নিশ্চিত করা ও সাংবাদিকদের জন্য সত্য প্রচারে সুযোগ প্রদানের দাবি করেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কর্নেল অলি আহমেদ বীর বিক্রম উপাধি পাওয়া বাংলাদেশের একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক মন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অলি আহমেদ তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন এই বিষয়টির তিনি একজন প্রধানতম সাক্ষী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার দুঃসাহসীকতার জন্য বীর বিক্রম উপাধি দেয়া হয়। তিনি ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ এর আগের রাতে মুক্তিযুদ্ধে একজন লড়াকু যোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন সক্রিয় এবং অন্যতম সম্মুখ সারির মুক্তিযোদ্ধা।