Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / opinion / প্রধানমন্ত্রী তাকে ফুফু বলে ডাকতো,অনেক সংকট থেকে আগলে রাখছে তাকে,একটা গল্প বলি তাহলে:আমিন

প্রধানমন্ত্রী তাকে ফুফু বলে ডাকতো,অনেক সংকট থেকে আগলে রাখছে তাকে,একটা গল্প বলি তাহলে:আমিন

মারা গেছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর অণ্যতম বলিষ্ঠ নেত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এর সাথে তিনি জড়িত ছিলেন শুরু থেকে। আর এই কারনে তার মৃত্যু নিয়ে এখন শোকের ছায়া বইছে দলটিত। এ দিকে তা নিয়ে এবার একটি বিশেষ লেখনী লিখেছেন নিয়মিত লেখক প্রভাস আমিন। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সেই লেখনী তুলে ধরা হল হুবহু:-

একটা গল্প দিয়ে শুরু করছি। দেশে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন। এক ভদ্রলোক তার বাচ্চাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গেলেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।

শিশুটি তার বাবাকে বলতে থাকে যে সে স্পিকারকে দেখবে। বাবা তার সন্তানকে কাঁধে তুলে নিলেন। বক্তাকে দেখে শিশুর অবাক, বাবা তিনি একজন নারী। শিশুটি কল্পনাও করতে পারেনি যে একজন মহিলা এত বজ্রকণ্ঠে এমন জ্বলন্ত বক্তৃতা দিতে পারে।

আসলে বিস্ময় শুধু শিশুরই নয়, গোটা জাতির- একজন নারী যে অত্যাচারের বিরুদ্ধে রাজপথে এমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেন, তা ছিল বিস্ময়কর।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারী-পুরুষের ব্যবধান দূর করার জন্য কৃতিত্বপূর্ণ কয়েকজন নারীর নেত্রী ছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারী নেতৃত্বের কথা বলতে গেলে আমরা শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ করি। এই দুই ব্যক্তিই উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে এসেছেন। কিন্তু তৃণমূল থেকে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর রাজনীতিতে আসেন সাজেদা চৌধুরী।

আওয়ামী লীগ দলের শিকড় এত গভীর হওয়ার অন্যতম কারণ সাজেদা চৌধুরীর মতো নেতারা। কখনো আমিনা আহমেদ, কখনো সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন, কখনো সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দলের দুঃসময়ে দলের হাল ধরেছেন।

বাংলাদেশের সে সময়ের বাস্তবতা বিবেচনা করলে পঞ্চাশের দশকে একজন নারীর রাজনীতিতে প্রবেশ সত্যিই বিস্ময়কর। পথটি পুরুষ শ্রমিকদের জন্য যতটা সহজ, নারীদের জন্য তা ছিল বন্ধুত্বপূর্ণ, কাঁটাযুক্ত।

সাজেদা চৌধুরী সেই কণ্টকাকীর্ণ পথ পেরিয়ে চূড়ায় উঠেছেন। তিনি সব সময় আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ছিলেন অবিচল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদার, অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে তিনি ছিলেন আপসহীন।

১৯৬৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সাজেদা চৌধুরী মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বা পালিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে তৎপর ছিলেন অকুতোভয় সাজেদা চৌধুরী। ১৯৭৬ সালে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

তবে সাজেদা চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ১৯৮১ সালের পরের সময়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে দেশে ফিরিয়ে আনতে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী ও তার স্বামী গোলাম আকবর চৌধুরীর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১৭ মে ১৯৮১ । শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন। সেই থেকে সাজেদা চৌধুরী ছিলেন তার ছায়াসঙ্গী। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত দেশের রাজনীতির উত্তাল সময়ে সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

সাজেদা চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেন অনেকে। আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক দুজনেই নারী, এ সত্য মানতে অনেকেরই কষ্ট হয়। কিন্তু তিনি তার যোগ্যতা নিয়ে সমালোচকদের নীরব করেছিলেন।

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন। মাঠের লড়াইয়ে তার বলিষ্ঠ ভূমিকা কোটি মানুষকে সাহসী করেছে। তিনি ছিলেন কর্মীবান্ধব, গণমুখী নেতা। মায়ের মমতায় দলের কর্মীদের সাহস জুগিয়েছেন, দেশের প্রয়োজনে ইস্পাত দৃঢ়তা নিয়ে লড়াই করেছেন।

১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন। রাজনীতি ছাড়াও তিনি গার্ল গাইড আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। নারীদের মূলধারার রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ করতে তার অবদান অনস্বীকার্য।

২১ বছর পর, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। তখন তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি। তবে তিনি টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী ছিলেন। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে।

২০০৯ সালের নবম সংসদে তিনি সংসদ উপনেতার দায়িত্ব পান। এরপর দশম ও একাদশ সংসদেও তিনি উপনেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। আমৃত্যু ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য।

উপনেতার দায়িত্ব পাওয়ায় সংসদে তার আসন ছিল সংসদ নেতা শেখ হাসিনার পাশে। সবাই ভাবতেন প্রতীকী, আসলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর পাশে থেকে বুদ্ধি-পরামর্শ দিতেন।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আমৃত্যু শেখ হাসিনার পাশেই থেকেছেন। শেখ হাসিনা তাকে ফুফু ডাকতেন। কিন্তু মর্যাদা দিতেন মায়ের। সাজেদা চৌধুরীও মায়ের মমতায় শেখ হাসিনাকে আগলে রেখেছেন শত সঙ্কটে, রাজনীতির নানা কূটচাল, ষড়যন্ত্র থেকে।

সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে শেখ হাসিনা হারালেন অভিভাবক; জাতি হারালো একজন দেশপ্রেমিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাহসী ও আপসহীন নেতা।

প্রসঙ্গত, এ দিকে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ রাষ্ট্রপতি। এমন গুণী এবং মেধাবী একজন নারী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হারিয়ে দেশ অনেক কিছু হারিয়েছে বলে জানিয়েছেন সকলেই।

About Rasel Khalifa

Check Also

আগামীকাল ক্যান্টনম্যান্টে হামলার পরিকল্পনা করেছে আঃলীগ, মিটিংয়ের ভিডিও আসছে: ইলিয়াস হোসেন

ড. বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল শীঘ্রই মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে বিপদে ফেলতে খুব …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *