বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বের অনেক দেশে প্রবাসী রয়েছেন যারা আমাদের রেমিটেন্স যোদ্ধা। দেশের একটা বিপুল সম্পদের উৎস আমাদের এই রেমিটেন্স যোদ্ধারা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের দেশের শ্রমীকরা, সেসব দেশ গুলির মধ্যে মালদ্বীপ অন্যতম। তবে দীর্ঘদিন মালদ্বীপে বাংলাদেশি শ্রমিক না নেওয়ায় এবং শ্রমবাজারে বাংলাদেশি যেসব প্রবাসী ভাইদের আছে তাদের বেশকিছু ভোগান্তি মালদ্বীপ এবং বাংলাদেশের শ্রমবাজার কে অনেকটা কষ্টের করে তুলেছিল। সেই সমস্যাগুলো কাটাতেই এবার প্রধানমন্ত্রী নিজে সফর করবেন মালদ্বীপ। যেটা নিয়ে মালদ্বীপের বসবাসরত বাংলাদেশী প্রবাসীরা ও বেশ উচ্ছ্বসিত।
মালদ্বীপে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আলোচনায় এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফর। মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ও উপ রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরের পর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাচ্ছেন মালদ্বীপে। এ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে দুদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হওয়ার মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীদের নানান সমস্যার সমধান হবে—এমনই প্রত্যাশা তাদের।
মালদ্বীপে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি আছেন। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজারই ‘অনিয়মিত’। প্রবাসীদের বেশিরভাগই কাজ করছেন পর্যটন খাতে। এ ছাড়া সেলসম্যান, সিকিউরিটি গার্ড, নির্মাণ শ্রমিক হিসেবেও কাজ করছেন অনেকে। এর বাইরে মাছ ধরার কাজেও অনেক বাংলাদেশি নিয়োজিত।
মালদ্বীপে জনশক্তির চাহিদা থাকলেও নতুন করে বাংলাদেশি কর্মী নিচ্ছে না দেশটি। পুরনো অনেক কর্মীও চুক্তি নবায়ন করতে না পেরে অবৈধ হয়ে পড়েছেন। ২২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালদ্বীপ সফরে যাওয়ার কথা। এতে দেশটিতে নতুন করে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার আশা দেখছেন বাংলাদেশিরা।
মালদ্বীপে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি মালদ্বীপে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন বাংলাদেশ কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘মালদ্বীপ বাংলাদেশের শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে সেটি প্রত্যাহার হওয়া জরুরি। এটি আমাদের জন্য অমর্যাদার। আমাদের দেশের কর্মীরা এখানে ভালোভাবেই কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিষয়টির সমাধান হলে আমাদের দেশের অনিয়মিত কর্মীরা নিয়মিত হতে পারবেন। নতুন কর্মী পাঠানোর সুযোগও তৈরি হবে।’
শুধু অদক্ষ কর্মী নয়, মালদ্বীপে প্রশিক্ষিত জনবল পাঠানো সম্ভব বলেও মনে করেন সেখানকার প্রবাসীরা। সাইফুল ইসলাম জানালেন, পর্যটনের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষিত লোকজনকে এদেশে পাঠালে তারা বেশি বেতনে কাজ করতে পারবেন। এ ছাড়া, মালদ্বীপে ডাক্তার-নার্সের চাহিদাও আছে।
মালদ্বীপে বেশি খারাপ সময় পার করছেন অনিয়মিত হওয়া প্রবাসীরা। যে কারণে তারা ন্যায্য মজুরি ও চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না। দেশে টাকা পাঠাতে তাদের নির্ভর করতে হয় হুন্ডির ওপর। মালেতে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের (এনবিএল) অধীনে একটি মানি ট্রান্সফার এজেন্ট থাকলেও পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং সুবিধা নেই সেখানে। ছুটি নিয়ে দেশে আসারও সুযোগ নেই অনিয়মিতদের। এমনকি অনিয়মিত কেউ মারা গেলেও তার মরদেহ চাঁদা তুলে দেশে পাঠাতে হয়।
মালদ্বীপ প্রবাসী জনকল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘এখানকার পুলিশ ধরপাকড় করে না ঠিকই, তবে অনিয়মিতরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পান না। আমরা আশা করছি, প্রধানমন্ত্রীর সফরে একটা সমাধান আসবে। প্রবাসীদের অনেকেই স্থায়ী কোনও কাজ পাচ্ছেন না। প্রতিদিনিই কাজের সন্ধান করতে হচ্ছে তাদের। কাজ পেলেও ন্যায্য মজুরি পান না অনেকে। বেতনও নিয়মিত পান না।’
মো. রবিউল আলম দীর্ঘ সময় মালদ্বীপে অবস্থান করছেন। অবৈধ শ্রমিকদের প্রসঙ্গে বলেন, মালদ্বীপে অনিয়মিতরা বেতন পান স্থানীয় মুদ্রা রুফিয়ায়। কিন্তু দেশে টাকা পাঠাতে প্রয়োজন হয় ডলারের। কোনও ব্যাংকে লেনদেন করার সুযোগ নেই অনিয়মিতদের। তাদের ব্যাংক একাউন্ট খোলারও সুযোগ নেই। ফলে তাদের ডলার সংগ্রহ করতে হয় কালোবাজার থেকে। এরপর সেটা পাঠাতে হয় হুন্ডির মাধ্যমে।
বৈধ কর্মীদের টাকা পাঠানো নিয়েও জটিলতা রয়েছে বলে জানান রবিউল আলম। তিনি বলেন, ‘মালদ্বীপ থেকে দেশে টাকা পাঠাতে খরচ পড়ে অনেক। সরকারিভাবে ১ ডলারে বিপরীতে ১৫ রুফিয়া নির্ধারিত। কিন্তু এই দামে ডলার পাওয়া যায় না। ১ ডলার দেশে পাঠাতে ১৬-২০ টাকা খরচ হয়ে যায়। বাংলাদেশি কোনও এজেন্ট এখানে থাকলে আমাদের এ জটিলতা হতো না। আশা করি প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিষয়টি আলোচনায় আসবে।’
মালদ্বীপে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আলোচনায় এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফর। মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ও উপ রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরের পর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাচ্ছেন মালদ্বীপে। এ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা।
প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে দুদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হওয়ার মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীদের নানান সমস্যার সমধান হবে—এমনই প্রত্যাশা তাদের।
মালদ্বীপে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি আছেন। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজারই ‘অনিয়মিত’। প্রবাসীদের বেশিরভাগই কাজ করছেন পর্যটন খাতে। এ ছাড়া সেলসম্যান, সিকিউরিটি গার্ড, নির্মাণ শ্রমিক হিসেবেও কাজ করছেন অনেকে। এর বাইরে মাছ ধরার কাজেও অনেক বাংলাদেশি নিয়োজিত।
মালদ্বীপে জনশক্তির চাহিদা থাকলেও নতুন করে বাংলাদেশি কর্মী নিচ্ছে না দেশটি। পুরনো অনেক কর্মীও চুক্তি নবায়ন করতে না পেরে অবৈধ হয়ে পড়েছেন। ২২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালদ্বীপ সফরে যাওয়ার কথা। এতে দেশটিতে নতুন করে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার আশা দেখছেন বাংলাদেশিরা।
মালদ্বীপে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি মালদ্বীপে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন বাংলাদেশ কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বাংলা ট্রিবিউনকে বললেন, ‘মালদ্বীপ বাংলাদেশের শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে সেটি প্রত্যাহার হওয়া জরুরি। এটি আমাদের জন্য অমর্যাদার। আমাদের দেশের কর্মীরা এখানে ভালোভাবেই কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিষয়টির সমাধান হলে আমাদের দেশের অনিয়মিত কর্মীরা নিয়মিত হতে পারবেন। নতুন কর্মী পাঠানোর সুযোগও তৈরি হবে।’
মালদ্বীপে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভিড়
মালদ্বীপে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ভিড়
শুধু অদক্ষ কর্মী নয়, মালদ্বীপে প্রশিক্ষিত জনবল পাঠানো সম্ভব বলেও মনে করেন সেখানকার প্রবাসীরা। সাইফুল ইসলাম জানালেন, পর্যটনের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষিত লোকজনকে এদেশে পাঠালে তারা বেশি বেতনে কাজ করতে পারবেন। এ ছাড়া, মালদ্বীপে ডাক্তার-নার্সের চাহিদাও আছে।
মালদ্বীপে বেশি খারাপ সময় পার করছেন অনিয়মিত হওয়া প্রবাসীরা। যে কারণে তারা ন্যায্য মজুরি ও চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না। দেশে টাকা পাঠাতে তাদের নির্ভর করতে হয় হুন্ডির ওপর। মালেতে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের (এনবিএল) অধীনে একটি মানি ট্রান্সফার এজেন্ট থাকলেও পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং সুবিধা নেই সেখানে। ছুটি নিয়ে দেশে আসারও সুযোগ নেই অনিয়মিতদের। এমনকি অনিয়মিত কেউ মারা গেলেও তার মরদেহ চাঁদা তুলে দেশে পাঠাতে হয়।
মালদ্বীপ প্রবাসী জনকল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘এখানকার পুলিশ ধরপাকড় করে না ঠিকই, তবে অনিয়মিতরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পান না। আমরা আশা করছি, প্রধানমন্ত্রীর সফরে একটা সমাধান আসবে। প্রবাসীদের অনেকেই স্থায়ী কোনও কাজ পাচ্ছেন না। প্রতিদিনিই কাজের সন্ধান করতে হচ্ছে তাদের। কাজ পেলেও ন্যায্য মজুরি পান না অনেকে। বেতনও নিয়মিত পান না।’
মো. রবিউল আলম দীর্ঘ সময় মালদ্বীপে অবস্থান করছেন। অবৈধ শ্রমিকদের প্রসঙ্গে বলেন, মালদ্বীপে অনিয়মিতরা বেতন পান স্থানীয় মুদ্রা রুফিয়ায়। কিন্তু দেশে টাকা পাঠাতে প্রয়োজন হয় ডলারের। কোনও ব্যাংকে লেনদেন করার সুযোগ নেই অনিয়মিতদের। তাদের ব্যাংক একাউন্ট খোলারও সুযোগ নেই। ফলে তাদের ডলার সংগ্রহ করতে হয় কালোবাজার থেকে। এরপর সেটা পাঠাতে হয় হুন্ডির মাধ্যমে।
বৈধ কর্মীদের টাকা পাঠানো নিয়েও জটিলতা রয়েছে বলে জানান রবিউল আলম। তিনি বলেন, ‘মালদ্বীপ থেকে দেশে টাকা পাঠাতে খরচ পড়ে অনেক। সরকারিভাবে ১ ডলারে বিপরীতে ১৫ রুফিয়া নির্ধারিত। কিন্তু এই দামে ডলার পাওয়া যায় না। ১ ডলার দেশে পাঠাতে ১৬-২০ টাকা খরচ হয়ে যায়। বাংলাদেশি কোনও এজেন্ট এখানে থাকলে আমাদের এ জটিলতা হতো না। আশা করি প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিষয়টি আলোচনায় আসবে।’
মালদ্বীপে দীর্ঘদিন ব্যবসা করছেন বাবুল হোসেন। ঢাকা ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করেন তিনি। তবে পরিবহন ব্যয় বেশি হওয়ায় ব্যবসা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, কার্গো সার্ভিস চালু করা গেলে এখানে বাংলাদেশের বাণিজ্য আরও বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি প্রবাসীদের সমস্যাও আলোচনায় আসবে বলে জানালেন মালদ্বীপে বাংলাদেশের হাই কমিশনার রিয়ার অ্যাডমিরাল নাজমুল হাসান।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরে দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ে আলোচনা হবে। অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিত করার বিষয়েও আলোচনা হবে। এ ছাড়া বাণিজ্য বৃদ্ধি ও নতুন কর্মীর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারও থাকবে এজেন্ডায়।’
দীর্ঘদিন পর হয়তো এবার খুলতে যাচ্ছে মালদ্বীপে বাংলাদেশের শ্রমবাজার। যেটা বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাইলফলক অবদান রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই সফরে বাংলাদেশী প্রবাসীদের যে সমস্যাগুলো ছিল সেগুলোর সমাধান বাংলাদেশের জন্য খুবই বড় একটা সুখবর। প্রধানমন্ত্রীর এমন উদ্যোগ সবার কাছে প্রশংসনীয়। তবে সেটা কতটুকু কার্যকর হয় এখন সেটা দেখার পালা।