বাংলাদেশের মানুষের একসময় স্বপ্ন ছিল পদ্মা নদীর উপর একটি সেতু। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর স্বপ্ন নেই সেটা আজ বাস্তব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে ব্যাপক উন্নয়ন প্রকল্পের একটি বড় ধরনের বাস্তবায়ন হলে পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু বহির্বিশ্বে একটি বড় উদাহরণ সৃষ্টি করলো। আর এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ব্যাপক উৎসাহ এবং সমর্থন জুগিয়েছিল বাংলাদেশ সরকারকে এবং প্রধানমন্ত্রীর সুদুরপ্রসারি এই পরিকল্পনাকে।
২০১০ সালে, যখন বিদেশী অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা চলছিল, ভারত এই প্রকল্পে তার পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলে ভারত তাকে জোরালোভাবে সমর্থন জানায়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পদ্মা সেতু উপলক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সরবে এবং প্রকাশ্যে আমাদের সমর্থন জানিয়েছি।’
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এগিয়ে যাওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা সঠিক ছিল এবং সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। দোরাইস্বামী এই সেতুটিকে মানুষ, আবেগ এবং সংস্কৃতির মধ্যে সংযোগ হিসেবে দেখেন। তিনি বলেন, “এই সেতু নির্মাণের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসবে। এতে অর্থনৈতিক অগ্রগতিও হবে।”
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘‘বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ এবং উপআঞ্চলিক ‘বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল (বিবিআইএন)’ উদ্যোগেও ভূমিকা রাখবে।’’
ভারতীয় হাইকমিশনার বাংলাদেশের অর্জনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার “অটল এবং ধারাবাহিকভাবে নেওয়া সাহসী সিদ্ধান্তের” প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, তিনি বলেন, ‘এই বৃহৎ অবকাঠামো কেবল ইট ও ইস্পাত নয়, এটি বাংলাদেশের দুই অংশের মধ্যে প্রতীকী সংযোগ স্থাপন। এটি কেবল ব্যবসার সংযোগ নয়, দুই প্রান্তের মানুষ এবং তাঁদের আবেগ ও সংস্কৃতির সংযোগ।’
বিক্রম দোরাইস্বামী আরও বলেন, ‘এটি শুধু বাংলাদেশিদের জন্যই নয়, সমস্ত বাঙালির জন্য, এমনকি ভারতীয় বাঙালিদের জন্য একটি মহান মুহূর্ত। তারাও বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের এই মহান অর্জন বাংলাদেশে তাদের ভাই-বোনদের সাথে উদযাপন করবে। অভিনন্দন বাংলাদেশ! এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে আমি বাংলাদেশের প্রত্যেক বন্ধুকে অভিনন্দন জানাই। ‘
হাইকমিশনার বলেন, “বাংলাদেশের নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করা একটি কঠিন কাজ ছিল। বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালের প্রথম দিকে বিদেশী ঋণ নিয়ে কাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল। আমরা (ভারত) তখন প্রথম দেশ, আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আমরা যেভাবে সম্ভব এই প্রকল্পের সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম।’
ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, “বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন তার নিজস্ব (অভ্যন্তরীণ) অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন, তখন ভারত আবারও তার সিদ্ধান্তকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে এবং আমরা দৃঢ়ভাবে ও প্রকাশ্যে সমর্থন করি।” ‘
দোরাইস্বামী বলেন, “শুধু বাংলাদেশ ও ভারত নয়, বিশেষ করে নেপালও পদ্মা সেতুর কারণে দ্রুত বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে এবং আমি মনে করি এটি দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।” ‘
সেতুটি বাংলাদেশে আরও ভারতীয় বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে কিনা জানতে চাইলে ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, শতভাগ। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, স্পষ্টতই যোগাযোগ সহজ ও সাশ্রয়ী হলে বাংলাদেশে আরও ব্যবসা বৃদ্ধি সহজ হবে।’
উল্লেখ্য, আগামী ২৫ জুন অর্থাৎ শনিবার উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু। আর এই সেতুটি উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। এই সেতু দ্বারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন ঘটার মাধ্যমে দক্ষিণ বাংলার মানুষের সাথে সমস্ত দেশের যোগাযোগ নিরবিচ্ছিন্ন হবে। যার জন্য সম্পদের সুষ্ঠু বন্টনে আর কোন বাধা থাকল না। তাই দেশের উন্নয়ন আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বলে ধারণা করছে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা।