হেফাজতে ইসলামে বাংলাদেশ দলটি রাজনৈতিক দিক থেকে বেশ নাজুক অবস্থার ভেতর দিয়ে পার করছে। কারণ দলটি কিছুদিন আগে বিএনপির সাথে জোটে থাকা নিয়ে ভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে দলটি ভিন্ন ধরনের নীতি থাকায় তারা এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। কারণ দলটি চলে সবসময় তাদের কার্যক্রমের ওপর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তেমন গুরুত্ব দিয়ে নয়। এমনটি জানিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। এদিকে হেফাজত নেতারা দলটির কারাবন্দি নেতাকর্মীদের মুক্তিসহ একাধিক দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজতে ইসলামের নেতারা।
শনিবার বিকেলে গণভবনে ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠক হয়। এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিসহ হেফাজতের ১১ নেতা উপস্থিত ছিলেন। বিকেল ৪টা থেকে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট ধরে বৈঠক চলে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী বলেছেন, হেফাজতের নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং তাদের নামে করা সব মামলা প্রত্যাহারের পাশাপাশি আলেমদের শিক্ষা কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর নিকট দাবি জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, সম্মেলনে যে সাত দফা দাবি দেওয়া হয়েছে তা প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব, শিক্ষা কমিশনে আলেমদের অন্তর্ভুক্তি, কাদিয়ানিদের অমুস”লিম ঘোষণা এবং বিশ্ব ইজতেমা থেকে সাদ কান্দালি নিষিদ্ধ করার দাবিও জানানো হয়েছে।
সেখানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি হস্তান্তরের প্রস্তুতি ছিল বলে জানা গেছে। হেফাজতে ইসলামের উদ্যোগে শনিবার রাজধানীর গুলিস্তানের কাজী বশির মিলনায়তনে জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে অংশ নিতে ঢাকায় আসেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও সভার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এ উপলক্ষে শুক্রবার হেফাজত নেতারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের পরীক্ষা করেন।
সূত্র জানায়, পাঠ্যবইয়ে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আপ”ত্তি তোলেন হেফাজত নেতারা। তারা বিভিন্ন শ্রেণির বই সঙ্গে নিয়ে যান। আপত্তির অংশবিশেষ প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেন।
সংগঠনের প্রচার সম্পাদক কিফায়াতুল্লাহ আজহারী বলেন, মাওলানা মামুনুল হক ও সুনির্দিষ্ট কোনো নেতা নন, সবার মুক্তি ও মামলা প্রত্যাহারের দাবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তিনি মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে একটি কথাও আলোচনা হয়নি।
হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস বলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে, তিনি আমাদের কথা গুরুত্বের সঙ্গে শুনেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান, নায়েবে আমির মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা ইয়াহিয়া, মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা আবদুল আউয়াল, মাওলানা মুহিব্বুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদ্রিস, মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সোবহানী।
গত বছরের ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর কেন্দ্র করে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সংগঠিত সহিং”/সতার ঘটনায় দেশব্যাপী অব্যাহত গ্রেফতার অভিযানসহ নানা চাপের মুখে পড়ে।
এসব মামলায় হেফাজতে থাকা শীর্ষ ৩০ নেতাসহ সারাদেশে ১ হাজার ২৩০ জনকে গ্রেফ”তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ, ডিবি, সিআইডি ও পিবিআই এসব মামলা তদন্ত করছে। যদিও এসব মামলায় গ্রেফ”তারকৃতদের অধিকাংশই এখন জামিনে রয়েছে।
এদিকে হেফাজত বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে রয়্যাল রিসোর্টে নারীসহ এক জনতার হাতে ধরা পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে ফের বিতর্কের মুখে পড়েছে হেফাজত। সরকারের কঠোর অবস্থানে কোণঠাসা হেফাজত ইসলামের শীর্ষ নেতারা শুরু থেকেই সমঝোতার চেষ্টা করছেন।
তৎকালীন আমির প্রয়াত জুনায়েদ বাবুনগরী ও প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম জিহাদী সরকারের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন। গত ২১ মাসে চারবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে হেফাজতের বৈঠক হয়েছে।
এর আগে ১৫ নভেম্বর,২০২০ জুনায়েদ বাবুনগরীকে ১৫১ সদস্যের হেফাজত কমিটি ঘোষণা করা হয়। হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীকে সেখানে রাখা হয়নি। এরপর থেকে সংগঠনটি দুই ভাগে বিভক্ত।
এদিকে হেফাজত নেতারা তাদের সংগঠনকে সুসংগঠিত করার জন্য কাজ করে চলেছে। কর্মীরা নিজেদের দলের বার্তা ছড়িয়ে যাচ্ছেন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অন্য সকল রাজনৈতিক দলগুলোর মতো এই দলটি তেমন সক্রিয়তা না দেখালেও দলটি তাদের নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে।