ইভিএম-এ ভোট নিয়ে অনেক বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেক নেতা ইভিএমকে সমর্থন করলেও বিপক্ষে অনেক নেতা। যারা ইভিএম-এর বিপক্ষে তাদের দাবি এই মেশিনের মাধ্যমে ভোট হলে সাইবার অ্যাটাকের মাধ্যমে ভোটে দুর্নীতি হবে। এসকল বিষয় নিয়ে এবার সামাজিক যোগাযোগ মধ্য একটি পোষ্ট করেছে আসিফ নজরুল।
তিনি লেখেন, শুরুটা খারাপ হয়নি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হাবিবুল আউয়ালের। তিনি কমিশনের দায়িত্ব নিয়ে সবার সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন। যদিও এই সরকারের আমলে এরই মধ্যে এমন সংলাপ হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সংবিধান সংশোধন কমিটি, নির্বাচন কমিশন, বাছাই কমিটি সবার সংলাপ ছিল। এসব সংলাপে তারা সব রাজনৈতিক দলকে ডেকেছেন, সবার কথা শুনেছেন, কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজেদের মতো করে। তাই সিইসির সংলাপে ভিন্ন কিছু ঘটে কিনা তা দেখার আগ্রহ ছিল মানুষের।
সিইসি মাঝে মাঝে আশার বাণী বলতেন। গত মার্চে সুশীল সমাজের সঙ্গে সংলাপে প্রায় সবাই তাকে ইভিএম দিয়ে নির্বাচন না করতে বলেন। আলোচনা শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, অনেকেই ইভিএম ব্যবহারে অভ্যস্ত নন। যন্ত্রের মাধ্যমে ডিজিটাল কারসাজি হয়েছে কি না, বিশ্বের অনেক দেশ ইভিএম বাতিল করেছে, কেন করেছে তা নিয়ে গবেষণা হওয়া উচিত বলে মত প্রকাশ করেছেন অনেকে। এ ছাড়া কোনো ধরনের হেরফের হলে বুঝতে হবে পুনঃগণনা করা যাবে কি না, এর জন্য কোনো ব্যবস্থা আছে কি না।
এই সংলাপ আরও কয়েকদিন চলার পর গত ৭ মে দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, আগামী নির্বাচন ইভিএমে হবে। এরপর সিইসির কথার সুর পাল্টাতে থাকে। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের দুই দিন পর সিইসি বলেন, এই ভাষণে কমিশন কোনো চাপ অনুভব করছে না।
তবে তিনি এও বলেন, কথাগুলো প্রধানমন্ত্রী নাকি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বলা হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। তার কথায়, এটা ইঙ্গিত ছিল যে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যদি বলা হয়, কমিশনের পক্ষ থেকে তা অন্যভাবে বিবেচনা করা হতে পারে।
রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে সিইসির বৈঠকে ক্ষমতাসীন দল ছাড়া বেশির ভাগ দল, সংগঠন ও ব্যক্তি ইভিএমের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। সংলাপের শেষ দিনে খোদ সিইসি বলেন, বেশির ভাগ দলই ইভিএমে বিশ্বাস করে না। এর মধ্যে কিছু আছে।’ এরই মধ্যে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে ইভিএম ভোট নিয়েও নানা বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কিন্তু দিনশেষে সংলাপের জ্ঞাত ফলাফল নিয়ে হাজির হন সিইসি। দুই দিন আগে তিনি জানিয়েছিলেন, আগামী নির্বাচনে সর্বোচ্চ দেড়শটি আসনে ইভিএমে ভোট হবে।
বলা যায়, নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি আওয়ামী লীগের প্রস্তাব অনুযায়ী হয়নি। আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনে ইভিএমের প্রস্তাব দিয়েছে। আওয়ামী লীগের মিত্র তরিকত ফেডারেশন ১৫০টি আসনে ইভিএমের প্রস্তাব দিয়েছে।
রাজনৈতিক দল হিসেবে তরিকার প্রায় অজানা কিন্তু বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তাদের পরামর্শেই নেওয়া হতে দেখা যায়। ইভিএম প্রশ্নে কেন একই ঘটনা ঘটল, আওয়ামী লীগ কেন খুশি ও লাভজনক- এমন প্রস্তাব তারা দেয় বুঝতে অসুবিধা হয় না। তরিকত আওয়ামী লীগের ভুয়া ওয়াজ না হলে এটা হওয়ার কথা নয়।
অতীতের মতো এবারও তরিকতের প্রস্তাব অনুযায়ী গৃহীত সিদ্ধান্তে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে ক্ষমতাসীনদের। অন্য অনেকের মতো আওয়ামী লীগের মহাজোটের পুরনো শরিক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এ অভিমত দিয়েছেন। ইভিএমে ভোট ঘোষণার আগের দিন তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দল শুধু কারচুপির জন্যই ইভিএমে ভোট দিতে চায়।
এখানে নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি সুষ্ঠু প্রশ্ন করার সুযোগ রয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, গত দুই নির্বাচনে ইভিএম ছাড়াই কারচুপি হয়েছে, কারচুপির জন্য ইভিএমের দরকার কী? এ প্রশ্নের উত্তর নিহিত রয়েছে দেশ-বিদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কোন বিদেশী পর্যবেক্ষক ছিল না এবং অনেককে 2018 সালের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে দেওয়া হয়নি।
এবার আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি ভিন্ন। বহু বছর পর অনেক উন্নয়ন সহযোগী দেশ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আহ্বান জানাচ্ছে। আগামী নির্বাচনেও আগের মতো বিরোধী দলের প্রার্থী, নেতা-কর্মী, এজেন্ট-কর্মীদের মারধর, গুলি, গৃহবন্দি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে প্রকাশ্যে দমন করা সহজ হবে না। ইভিএম নির্বাচনে কারচুপি করতে চাইলে এসব সমস্যা করতে হবে না। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গণমাধ্যম ও পর্যবেক্ষকদের খুশি করতে ডিজিটাল কারসাজির মাধ্যমেই ইভিএমে নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব।
ইভিএম টেম্পারিং প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হল এর সাথে একটি কাগজের ভোট কপি মেশিন সংযুক্ত করা এবং টেম্পারিংয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে ফলাফল পুনঃগণনা করা। এর অনুপস্থিতির কারণে, সংক্ষুব্ধ প্রার্থীকে গত কুমিল্লা মেয়র নির্বাচনের শেষ মুহূর্তের ফলাফল চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের নির্বাচনী আইনের পরিপন্থী।
তবে সিইসি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন আগামী নির্বাচনে ইভিএমের সঙ্গে এসব মেশিন সংযুক্ত করবে না (২৫ আগস্ট, ডেইলি স্টার)। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জেনেছেন, এটা না করলে কোনো সমস্যা হবে না। প্রশ্ন হলো কোন বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেছেন, তরিকতের মত কেউ?
দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল পুলিশের উপর আর অন্যরা হন পরিণতের বিশেষ পছন্দের মানুষ।
বর্তমান সিসিনিয়ান একজন। নির্বাচন নির্বাচনের আগে তিনি দু-দুবার পছন্দে বিশেষ চিত্র। অন্য অনেকের ক্ষেত্রেও কমিশন আনুকূল্যের উপস্থিতি রয়েছে। এর আগে নির্বাচন কমিশনে কমিউনিটি কী করেছেন, তা আমরা সিদ্ধান্ত এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সিআইসি ও নির্বাচনকে তৎপরতা করতে হবে, শান্তিপূর্ণভাবে মানুষের অধিকারের কাজকর্ম গভীর সন্দেহের মধ্যে রয়েছে। ইভিএম নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া তারা এ সন্দেহ আরও উস্কে দিল। তাদের আলোচনা করা হবে ইভিএমে কথা বলা সমস্যা এ মেশিনের অদক্ষতা, এটি দুর্বল মানুষের অসম, এই মেশিনের শক্তির নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি জুলুম, এর কারচুপি করার জন্য অনুপস্থিত, সর্বোত্তম নির্বাচন ব্যবস্থায় (বিশেষ জনপ্রশাসন ও পুলিশ) প্রতিপক্ষ ব্যক্তি একাধিপত্য।
এমন ইভিএমের মাধ্যমে সাজানো নির্বাচন করা আরওসাধ্য হবে এবং সাজানো সহজ সহাত্রদের কিছু কিছু দিয়ে দেখাও আনা যাবে। কিন্তু নির্বাচন ব্যাবস্থাকে পালন করা যাবে না বা মানুষের গণমানুষকে সম্মান করা যাবে না।
ভোলা ভোলা উচিত নয়, ঠিক এই অধিকারকে সম্মান করা হয়েছে বলে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করেছি। এ চেতনার প্রতি সম্মানের প্রধান দায়িত্ব সিসির মতো সাংবিধানিকে ব্যক্তিদের।
উল্লেখ্য, একটি দেশের গণতন্ত্র রক্ষা করার জন্য প্রধান ভূমিকা থাকে সিইসির। কারণ সুষ্ঠু ও দুর্নীতি মুক্ত ভোট নিশ্চিত করার জন্য তার অবদান অপরিসীম। যদি নির্বাচন সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয় তাহলে সাধারণ মানুষ ভোটের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্য একজন সরকারকে ক্ষমতায় আনতে পারবে। তাই সাধারণ মানুষ সিইসিকেক নিরপেক্ষ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।