বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ নিয়ে সমালোচনা করে যাচ্ছে বর্তমান সংসদের বিরোধী দলসহ দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতারা। জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন নির্বাচন দেওয়ার জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পথ পাচ্ছে না। সরকারকে সমর্থন করতে গিয়ে তারা অনেকটা বেহাল অবস্থায় পড়েছে। এই সরকার যদি নির্বাচনে হেরে যায়, তাহলে তাদের দল বড় ধরনের সংকটে পড়বে এবং তাদের অস্তিত্ব নিয়ে টানাপোড়েন শুরু হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন দায় এড়াতে ইতোমধ্যে নানা কথা বলছে। কখনো কখনো বলা হয় রাজনৈতিক দলগুলো সাহায্য না করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। কখনও তারা বলেন, কাউকে নির্বাচনে আনা নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়। তাদের বোঝা উচিত, নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা না থাকায় রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে যেতে চায় না। নির্বাচন কমিশনকে সবার আস্থা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির নেতা আ ন ম রফিকুল আলম সেলিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পলাশ উপজেলার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ ও তাদের কয়েকটি জোট ছাড়া কেউ নির্বাচনে ইভিএম না চাইলেও নির্বাচন কমিশন হঠাৎ করে ইভিএম এর মাধ্যমে নির্বাচন করার ঘোষণা দেয়। দেশের মানুষ নির্বাচনে ইভিএমে চায় না। আর এসব কারণে দেশের মানুষ নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে দলীয় লোক নিয়োগ করা হয়। আবার আওয়ামী লীগের কর্মীদের ভোটগ্রহণের সময় ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তারা সহায়তার নামে ভোটারদেরকে ইভিএমে ভোট দেওয়ায়। এভাবে চলতে দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, “দেশ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য যু”দ্ধ করেছিলেন। প্রজাতন্ত্র হওয়ায় সাধারণ মানুষই দেশের মালিক, ভোটের মাধ্যমে তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করবে। যদি আপনার প্রতিনিধি পছন্দ না হয়, আপনি আবার ভোট দিয়ে প্রতিনিধি পরিবর্তন করতে পারেন, কিন্তু এখন সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার ছিন”তাই করা হয়েছে, দেশের মানুষ আর প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে না, সাধারণ মানুষের পছন্দ না হলেও প্রতিনিধি পরিবর্তন করতে পারে না। এখন বাংলাদেশের কোনো প্রজাতন্ত্র নেই, শুধু বাংলাদেশ। প্রজাতন্ত্রের অস্তিত্ব শুধু একটি অলঙ্কার হিসেবে। দেশ চলছে শাসক ও প্রশাসক দিয়ে। প্রশাসকদের জবাবদিহিতা থাকে শুধু শাসকদের কাছে। প্রশাসক নিয়োগ করা হয় শোষণের জন্য। জনগণ কারো নিকট দায়বদ্ধ নয়। দেশের কোথাও জবাবদিহিতা নেই, তাই দুর্নীতিতে দেশ ডুবে যাচ্ছে। যখন মেগা প্রকল্প শুরু হয়েছে, তখন শুধু এক বছরেই সুইস ব্যাংকেই জমা পড়েছে চার লাখ কোটি টাকা। প্রতিটি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যয়ও বাড়ছে। অন্যান্য ব্যাংকে কত টাকা পাচার হয়েছে তা কেউ জানে না। দেশের মানুষ জানতে চায় পানামা পেপারস ও প্যারাডাইস পেপারসে ফাঁস হওয়া দুর্নীতির তথ্য কেন তদন্ত হয়নি?
তিনি আরও বলেন, একটি সরকার বারবার ক্ষমতায় থাকা মানে দেশের স্থিতিশীলতা নয়। দেশে স্থিতিশীলতা থাকলে কে ক্ষমতায় আসে আর কে চলে যায় তাতে কোনো সমস্যা নেই। দেশে স্থিতিশীলতা নেই, কেউ ক্ষমতা ছাড়লে চরম বিশৃঙ্খলা হবে। কারণ, এখন সবাই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শত্রু মনে করে। এমনটি হওয়া উচিত নয়। আমরা চাই সবাই সহনশীল পরিবেশে নিজ নিজ রাজনীতি করুক, কেউ যেন কাউকে শত্রু ভাবতে না পারে। আমরা রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন চাই, ব্যক্তি নয়।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে আমরা যে তথ্য পেয়েছি তাতে বিশেষ কিছু নেই। এই সফরের ফলাফল প্রচলিত।