বাংলাদেশের ( Bangladesh ) উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক মানুষের কর্মস্থলে জায়গা বলতে গেলেই সুন্দরবন। সুন্দরবনকে ( Sundarbans. Sundarbans ) ঘিরেই চলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা। সুন্দরবনের মাছ শিকার, মধু সংগ্রহ, জঙ্গল থেকে কাঠ সরবরাহ এগুলোই তারা পেশা হিসেবে করে থাকে। জীবিকার জন্য উপকূলবাসীদের বনের ভিতরে গিয়ে বন্যপ্রানীদের শিকার হতে হয়, যার মধ্যে রয়েছে বাঘ, জলের কুমিরসহ অনেক হিং’/স্র পোকামাকড়ের। এগুলোর আক্র’/মণে প্রাণ হারায় অনেক মানুষ।
ইমান আলী গাজী হাতের ছোট দা নিয়ে সুন্দরবনে বাঘের সাথে লড়াই করে বেঁচে যান। কিন্তু সেই যুদ্ধে বাঁ হাত হারাতে হয় ৬৫ বছরের বৃদ্ধকে। তার বাম চোখ, ঘাড় ও পিঠেও আঘাত লেগেছে। চিকিৎসা ও বেঁচে থাকার জন্য বাকি হাত মানুষের সামনে রাখতে হয়। ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ার আগে ইমান আলী প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলে সাহায্যের আবেদন করেন। ২০১৮ সালে ( )র মার্চে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বরাদ্দের চিঠিও পেয়েছেন। কিন্তু চিঠি পাওয়ার পাঁচ বছর পরও বরাদ্দের টাকা তাঁর কাছে পৌঁছায়নি।
ইমান আলীর বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার যতীন্দ্রনগর ( Jatindranagar ) ইউনিয়নের বড় ভেটখালী হরিনগর ( Vetkhali Harinagar ) গ্রামে। এখন রাজধানীর কলেজগেট এলাকায় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ( Suhrawardy Hospital ) সামনে ভিক্ষা করছেন তিনি। সেখানেই আমরা তার সঙ্গে কথা বলি। ইমান আলী জানান, তার পরিবার সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করত। ২০০৭ সালে ( ) বড় ছেলে রাশিদুল ( Rashidul ), ভাতিজা রহিম ( Nephew Rahim ) ও ছোট ভাই শুকুর আলীকে ( Shukur Ali ) নিয়ে বনে যান মধু সংগ্রহ করতে। অন্যরা নৌকা থেকে নেমে মৌমাছির খোঁজে বনে গেলে রান্নার দায়িত্বে নৌকায় থাকে। সে চুলায় ভাত রেখে জ্বালানি সংগ্রহ করতে নেমে যায়। গাছের শুকনো পাতা কুড়িয়ে ফেরার পথে পেছন থেকে লাফ দেয় বাঘ।
ইমান আলী বলেন, একপর্যায়ে বাঘটি আমার বাম হাতে কামড় দিয়ে আমাকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। ডান হাতে দা দিয়ে একটার পর একটা বাঘের মাথায় মা/রতে থাকলাম। আঘা/তে পরাজিত হয় বাঘ। সে আমাকে ছেড়ে পালিয়েছে। পরে শি”শুদের উদ্ধার করে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ( Shyamnagar Upazila Health Complex ) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে দ্রুত তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ( Satkhira Sadar Hospital ) পাঠানো হয়। ডাক্তাররা বাম হাতের কনুই থেকে কেটে ফেলার পরামর্শ দেন।এরপর ইমান আলীকে খুলনার আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা হাত রাখার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে প”চন ধরলে তার হাত কে”টে ফেলতে বাধ্য করা হয়।
ইমান আলী জানান, বন্য প্রাণীর হামলার শিকার হয়ে আর্থিক সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি। সর্বোপরি স্থানীয় সংসদ সদস্য এসএম জগলুল হায়দারসহ প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিকিৎসার জন্য সহায়তার সুপারিশ করেন। তার নামে ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দের চিঠি বাড়িতে যায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে ইউএনও বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সহায়তার চেক চাওয়া হয়েছে। ইমান আলী বলেন, আমি বারবার শ্যামনগর ইউএনও ও সাতক্ষীরার ডিসি অফিসে গিয়েছি। কিন্তু চেকটি কেউ খুঁজে পায়নি। এখন টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছি না।
জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন-প্রধানমন্ত্রীর তহবিল) মো. মকবুল হোসেন বলেন, চেকটি সংশ্লিষ্ট ডিসি অফিস প্রাপকের কাছে হস্তান্তর করেনি। অথবা চেকটি কোথাও হারিয়ে যেতে পারে। তবে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন,ইমান আলীর নামে কোনো চেক সাতক্ষীরা জেলা পরিষদে আসেনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মকবুল হোসেন আবারও প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসাইনমেন্ট অফিসারের কাছে অ্যাসাইনমেন্টের চিঠি, চেক নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবিসহ আবেদন জমা দেওয়ার পরামর্শ দেন। তারপর আবেদনকারী বরাদ্দকৃত অর্থের বিপরীতে চেক পেতে পারেন।
ইমান আলীর পরিবারের আরও তিন সদস্য বাঘের আক্র/’মণের শিকার হয়েছেন। এদের মধ্যে বাঘের কবলে পড়ে প্রাণ হারান ইমান আলীর বোন নাসিমা ও আরেক বোন রাবিয়া খাতুনের স্বামী রহমান। ইমান আলীর চাচা রুহুল আমিন গাজী ১৯৯৫ সালে লোকালয়ে ঢুকে পড়া বাঘের আক্র’/মণে আহত হন। তবে পরিবারের কেউ সরকারের কাছ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ পান নি বলে দাবি করেন ইমান আলী।বন্যপ্রাণী আইন ২০২১ অনুযায়ী, বন্য প্রাণীর আক্র’/মণে প্রয়াত হলে ৩ লাখ টাকা, গুরু/তর আহ’/ত হলে ১ লাখ টাকা এবং স্থানীয়ভাবে বন্য প্রাণীর আক্র’/মণে কেউ আহ’/ত হলে ৫০,০০০ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বন বিভাগের।
প্রসঙ্গত, উপকূলবাসীরা সুন্দরবনে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের বিপদে পড়ে থাকেন। এই বিষয়ে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়ার কথা থাকলেও সেটা মেলে না, জানিয়েছেন অনেক ভুক্তভোগীরা। ব্যাপারটি সরকারের উঁচু পর্যায়ে গেলেও তেমন কোনো সুরাহা হয়নি। ক্ষতিপূরণ নিয়ে কথা বলতে চাইলে, বিষয়টি নিয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গণমাধ্যমকে কোন তথ্য দিতে রাজি হননি।