বাবা-মায়ের কাছে তাদের সন্তানরা হীরার থেকেও অনেক মূল্যবান। সন্তানদের মানুষ করার জন্য তারা তাদের সারা জীবন বিলিয়ে দেয়। সন্তানদের মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই তাদের একমাত্র লক্ষ। সেই সন্তানই যদি না থাকে তাহলে তাদের বাঁচার আশাই আর থাকেনা। সম্প্রতি এক মা তার মেয়েকে হারিয়ে কান্যায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন আমি কারও কোনও বিচার চাই না, শুধু মেয়েকে ফেরত চাই।
২৩ জুন কলেজ ছাত্রী ইয়াশা (১৮) তার মায়ের সাথে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে এবং মায়ের কাছে ফিরে আসেনি। ঘটনার এক মাস ২৮ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও তার সন্ধান মেলেনি।
সংবাদ সম্মেলনে তার মা নাজমা ইসলাম লাকী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার একমাত্র মেয়ে, আমার বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়। ওকে ছাড়া বাঁচবো কি করে? আমি ১৬ বছর ধরে আমার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করছি, তিনি এখনও বিদেশ থেকে আসেননি, এখন আমি দুই মাস ধরে আমার মেয়ের জন্য অপেক্ষা করছি। আমি কারো কাছে কোনো বিচার চাই না, আমি শুধু আমার মেয়েকে ফিরে পেতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একজন মা এবং আমি তার কাছে আমার মেয়ের ফেরার ব্যবস্থা করার জন্য আবেদন করছি। ইশতিয়াক নামের লোকটি যে সারাদিন আমার মেয়ের সাথে ছিল সে সন্ধ্যায় মেয়েটিকে রিকশায় করে দিয়েছিল। তাহলে আমার মেয়ে কোথায়? আমি সুষ্ঠু তদন্ত চাই।’
কলেজছাত্রীর পরিবার জানায়, ঘটনার দিন সুকন্যা মায়ের সঙ্গে পরীক্ষার জন্য সিদ্ধেশ্বরী কলেজে যায়। দুপুর ১২টার দিকে তার মা তাকে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করিয়ে কলেজের অভিভাবকদের বসার ঘরে অপেক্ষা করেন। পরীক্ষা শেষ হয় বিকাল ৩টায়। পরীক্ষার্থী বের হলেও সে বের না হওয়ায় তার মা কলেজের শিক্ষকদের খবর দেন। পরে ওই দিন বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে তিনি রমনা থানায় জিডি করেন। পরদিন তা মামলায় পরিণত হয়। ওই মামলায় ইশতিয়াককে একমাত্র আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও আগের দিনের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হলে প্রেমিক ইশতিয়াক আহমেদ চিশতী ও তার বন্ধুকে আটক করে রমনা থানা পুলিশ। কিন্তু তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সেই প্রেমিক এখন কারাগারে।
সুকন্যার মা নাজমা ইসলাম জানান, তার মেয়ের কাছে ফোন না থাকলেও গত মার্চে কলেজে অনলাইনে ক্লাস করতে হয় বলে তিনি একটি ফোন কিনেছিলেন। এরপর ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে ফেসবুক চালাতেন। কিন্তু ছেলেটি জানায়, সুকন্যার ইনস্টাগ্রামে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আসলে, আমি এটাও জানি না। যেদিন আমার মেয়ে নিখোঁজ হয়, আমি তার সাথে ছেলেটির সম্পর্কের কথা জানতে পারি। তাছাড়া সুকন্যা তার মোবাইলে কোনো সিম কার্ড ব্যবহার করেননি। পুলিশ সূত্রে জানতে পেরেছি, তিনি ইশতিয়াকের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলতেন।
সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ওই দিন মেয়েটির ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। কিন্তু কেন্দ্রে গিয়ে এক বন্ধুকে র্যাগ ডে অনুষ্ঠানের টিকিট নিতে বলে। আমি আমার কাজিনের জন্য একটি শার্ট কিনেছি। এরপর তিনি আর আসেননি। পরে আমি থানায় জিডি করার পর পুলিশ ছেলেটির হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর শনাক্ত করে তার ভাইকে ফোন করে। পুলিশ তাকে বলে তোমার ভাই একটি মেয়েকে নিয়ে গেছে এবং সন্ধ্যার মধ্যে তাকে থানায় নিয়ে আসতে বলে। এরপর রাত ১১টার দিকে ইশতিয়াক নিজেই আমাকে ফোন করে জানতে চায় ইয়াশা বাড়ি ফিরেছে কি না। পুলিশকে তার নম্বর দেওয়ার পর একজন কর্মকর্তা তাকে ফোন করেন। সে ফোন তুলে বলে আমি তোমাকে ২০ মিনিট পর বলব। তারপর ফোন কেটে দিল।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি সুকন্যা এখনো বেঁচে আছে। মামলাটি তদন্ত করছে ডিবি।
এদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, সুকন্যা তার কলেজ ছেড়ে প্রেমিক ইশতিয়াকের সঙ্গে চলে যায়। এরপর তারা বিভিন্ন স্থানে ঘুরে রেস্তোরাঁয় বসে খেতে ও সময় কাটান। পরে সেখান থেকে ফিরে আসেন। কিন্তু গেন্ডারিয়া ওই এলাকা থেকে উধাও হয়ে যায় সুকন্যা।
এ ঘটনায় ইশতিয়াকের প্রেমিকের এক বন্ধুকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, ওইদিন বিকেলে ইশতিয়াক তার বাড়িতে বেড়াতে যায়। যদিও কখনো তার বাড়িতে থাকতে যাননি। এটি চিশতীর বন্ধুকে সন্দেহজনক করে তুলেছিল এবং সে সময় সে কতটা বিচলিত ও চিন্তিত ছিল। তার বন্ধু তাকে হঠাৎ তার বাসায় এসে খারাপ লাগার কারণ জানতে চাইলে ইশতিয়াক বলেন, তার শরীর ভালো না থাকায় তিনি তার বাসায় বেড়াতে এসেছেন। কিন্তু পুলিশ মনে করে সুকন্যার সঙ্গে সেদিন এমন কিছু ঘটেছিল যা চিশতিকে চিন্তিত করেছিল। সে পরিস্থিতি কাটিয়ে ও নিজেকে আড়াল করতে বন্ধুর কাছে যায়।
প্রসঙ্গত, সন্তান হারানোর যে কতটা কষ্ট তা শুধু সেই বাবা-মা জানে যারা তাদের সন্তানকে হারিয়েছেন। এই মাও তার মেয়েকে হারিয়ে প্রায় পাগলই হয়ে গেছেন। অঝোঁরে শুধু কেঁদেই যাচ্ছেন আর আকুতি করছেন তার মেয়েকে ফিরে পাবার জন্য।