প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়ে থাকে। এদের মধ্যে অনেকেই মেধা গুনে অর্জন করছে নানা ধরনের সফলতা। এবার তেমনি সফল তিন শিক্ষার্থীর নাম উঠে এসেছে প্রকাশ্যে। প্রথম বারের মত তিন বাংলাদেশী এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পেলেন হাঙ্গেরিতে।
উচ্চশিক্ষায় ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে ২০১৭ সাল থেকে থেকে হাঙ্গেরি সরকার দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির আওতায় হাঙ্গেরি সরকার বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি বছর ১০০টিরও বেশি স্টাইপেন্ডিয়াম হাঙ্গেরিকাম নামক বৃত্তি দিয়ে আসছে। সর্বশেষ ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে অনার্স, মাস্টার্স এবং পিএইচডি কোর্সের জন্য প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থী এখন হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টসহ অন্যান্য শহরে অবস্থান করছে। গত ২৬ অক্টোবর হাঙ্গেরি সরকার এবং সেই দেশের পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড সনদ তুলে দেয়। স্টাইপেন্ডিয়াম হাঙ্গেরিকাম বৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফলের পাশাপাশি হাঙ্গেরিতে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক পরিবেশ সৃষ্টিতে তাদের ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরুপ এই পুরস্কার দেয়া হয় বলে অনষ্ঠানে জানানো হয়। প্রথমবারের মত প্রবর্তিত পুরষ্কারে বাংলাদেশের ২ জন স্নাতক শ্রেণীর এবং ১ জন স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থী এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছেন। শিক্ষার্থীরা হলেন আমিনুল ইসলাম সাদি, সাদন মোহাম্মাদ এবং সামীন ইয়াসির।
ঢাকার রাজউক উত্তর মডেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ২০২০ সনে হাঙ্গেরি সরকারের বৃত্তি পেয়ে বুদাপেস্ট আসেন সাদন মোহাম্মাদ। শহরের নিকটে হাঙ্গেরিয়ান ইউনিভার্সিটি অব এগ্রিকালচারাল এং লাইফ সায়েন্সে স্নাতক শুরু করেন। স্বল্পভাষী মিশুক সাদন এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাথে মেন্টর হিসেবে কাজ শুরু করেছেন। এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তির অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, “এই পুরষ্কার অর্জনের পেছনে বড় কারণ হচ্ছে আমার সিজিপিএ ভালো। পাশাপাশি আমি স্টাইপেন্ডিয়াম হাঙ্গেরিকামের একজন মেন্টর। দুইটি বিষয়ে এগিয়ে থাকা এবং সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক কমিউনিটি বিস্তারে আমি সাহায্য করেছি”। সামীন ইয়াসির স্নাতক তৃতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছেন দানিউবের তীরে বুদাপেস্ট ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড ইকোনোমিকসে। সদা পড়াশোনায় ব্যস্ত সামীন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে একটি পরিচিত নাম। ভালো ফলাফল তার এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তিতে বড় ভূমিকা রেখেছে বলেছে প্রতিবেদককে সে জানিয়েছে। সামীন তার অর্জন সম্পর্কে জানিয়েছেন, এই পুরস্কার তার শিক্ষা জীবনের জন্য এক অনন্য কৃতিত্ব। আমিনুল ইসলাম সাদি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক শেষ করে ২০২০ সালে স্টাইপেন্ডিয়াম হাঙ্গেরিকাম বৃত্তি পেয়ে হাঙ্গেরিতে পাড়ি জমান। হাঙ্গেরির ডেব্রেসেন শহরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই বছর স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন খাদ্য নিরাপত্তা ও গুনগত মান বিষয়ে। এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পুরষ্কার প্রাপ্তিতে সাদি সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশীদের সফলতা অর্জন দেশের জন্যও অত্যান্ত গৌরবের বিষয়। প্রায় সময় বিভিন্ন মাধ্যমে উঠে আসে এমন অনেক সফল ব্যক্তিদের নাম। সম্প্রতি আলোচনায় রয়েছেন হাঙ্গেরিতে এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড পাওয়া তিন বাংলাদেশী। বর্তমান সময়ে দেশটিতে আরও অনেক বাংলাদেশী শিক্ষার্থী রয়েছে।