প্রতিবছরেই বাংলাদেশ থেকে অসংখ্য পন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। এই খাত থেকে বাংলাদেশ উপার্জন করে থাকে বিপুল পরিমনের অর্থ। যা কিনা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও অগ্রনী ভূমিকা পালন করে থাকে। অবশ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিশ্ব জুড়ে ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেওয়ায় এই রপ্তানি আয়ের পরিমান অনেকটা কমে গেছে। অবশ্যে সম্প্রতি এই কার্যক্রম কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় এই খাতে আয়ের দিক দিয়ে একের পর এক রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ। গত অক্টোবার মাসে এই খাতে আয়ের দিক দিয়ে রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। এই বিষয়ে বিস্তারিত উঠে এলো প্রকাশ্যে।
করোনা পরিস্থিতির ভাটা কাটিয়ে রপ্তানি আয় বাড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি প্রবৃদ্ধিও হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পাশাপাশি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ। এদিকে একক মাস হিসেবে অক্টোবরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঙ্গে প্রবৃদ্ধিও হয়েছে। অক্টোবর মাসে ৪৭২ কোটি ৭০ লাখ ৫০ হাজার ডলার সমমূল্যের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এক মাসে এত বেশি রপ্তানি আয় আর কখনও দেশে আসেনি, যা একক মাসে রেকর্ড আয়। মঙ্গলবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ইপিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৮৯ কেটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ১ হাজার ৫৭৪ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া গত বছরের একই সময় আয় হয়েছে ১ হাজার ২৮৪ কোটি ৪৬ লাখ ডলার। সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ।
এদিকে একক মাস অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঙ্গে প্রবৃদ্ধিও হয়েছে। এ মাসে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ৪৭২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এ ছাড়া গত বছর একই সময় আয় হয়েছে ২৯৪ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। সেক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। ইপিবি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ১২২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ১ হাজার ২৬২ কোটি ১১ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় ১২ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক শূন্য ৭৮ শতাংশ। পাশাপাশি হিমায়িত খাদ্য খাতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ কোটি ২২ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ২২ কোটি ৫২ লাখ ডলার। আয় বেড়েছে ৩৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ ছাড়া গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ৪৬ কোটি ৪১ লাখ ডলার। আয় বেড়েছে ৩০ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
এ ছাড়া উৎপাদিত পণ্য খাতে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৩৮ কোটি ৩ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ১ হাজার ৫০৬ কোটি ১ লাখ ডলার। সেক্ষেত্রে আয় বেড়েছে ১২ দশমিক শূন্য ৫৫ শতাংশ। গত বছর একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২২ দশমিক ৫ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়েছে। এ সময় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩২ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ৩৬ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। আয় বেশি হয়েছে ১০ দশমিক ৭৯ শতাংশ। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। এ সময় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৫ কোটি ৩৬ লাখ ডলার। আয় হয়েছে ৩৩ কোটি ২৯ লাখ ডলার। এ খাতে আয় কম হয়েছে ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। পাশাপাশি গত বছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি কমেছে ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ।
বিভিন্ন ধরনের পন্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে রপ্তানি হওয়া পন্য গুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে চামড়াজাত পণ্যে ও তৈরি পোশাক এবং কৃষিপণ্য। তবে প্রথম অবস্থানে রয়েছে তৈরি পোশাক। বাংলাদেশে উৎপাদিত তৈরি পোশাক বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই বেশ জনপ্রিয়। এবং প্রতিবছরেই বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমান অর্থের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়ে থাকে।