Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / প্রতারনার ফাঁদে পরে নিঃস্ব ব্যবসায়ী আমিনুল

প্রতারনার ফাঁদে পরে নিঃস্ব ব্যবসায়ী আমিনুল

আমিনুল ইসলাম রাজধানীর কলা বাগানের বাসিন্দা। আমিনুল ইসলাম ভাই ভাই ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে পাথর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। পদ্মা সেতু নির্মাণে পাথর সরবরাহের জন্য তিনি পুরস্কার পান। আমিনুল দেশের বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে নির্মাণসামগ্রী সরবরাহ করেন। ছয় বছর আগে মো: আসাদুল ইসলাম ও আমির হোসেন নামে দুই প্রতারক তার স্বাক্ষর জাল করে তার ব্যাংক থেকে ১৪ কোটি টাকা তুলে নেয়। তাদের প্রতারণার শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে আমিনুল এখন নিঃস্ব ব্যবসায়ী। সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য। এদিকে ঘটনার পর থেকে দুই প্রতারক পলাতক রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এস্ট্রোটেক্স গ্রুপ নামের একটি পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মো: আসাদুল ইসলাম ও তার সহযোগী আমির হোসেন প্রতারণার পরিকল্পনা করছেন। জালিয়াতি ও জালিয়াতির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ঢাকা মহানগর আদালত ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

মামলার সূত্র জানায়, আমিনুল ২০১৮ সালে আসাদুল ও আমিরের সঙ্গে যৌথভাবে বিদেশ থেকে পাথর আমদানির ব্যবসা শুরু করেন। একই বছর অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি স্ট্যান্ডার্ড হলিং লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। আসাদুল ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব নেন। পরিচালক করা হয় আমিরকে। ভুক্তভোগীরা তাদের প্রতারণা স্বীকার করে ব্যবসার মূলধন হারায়। ওই দুই ব্যক্তি আমিনুলের চেক ও স্বাক্ষর জাল করে পাথর আমদানির জন্য ব্যাংকে রাখা ১৪ কোটি টাকা তুলে নেয়। এ ঘটনায় আমিনুল বাদী হয়ে মামলা করেন।

আসাদুল মামলা থেকে বাঁচতে ফের প্রতারণার আশ্রয় নেন। ভুয়া চুক্তিতে ভিকটিমকে আরও ৫ কোটি টাকা পাওয়ার হিসাব দেখান। ওই টাকা আসাদুলকে পরিশোধের নির্দেশ দেন আদালত। এর প্রতিকার চেয়ে আরও তদন্ত চেয়ে আদালতে আবেদন করেন আমিনুল। পরে আদালতের নির্দেশে মামলাটি তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্তে উঠে আসে আসাদুল ও আমিরের প্রতারণার বিষয়টি। দীর্ঘ তদন্ত শেষে সম্প্রতি সিআইডির উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাবিবুর রহমান আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আমিনুল স্ট্যান্ডার্ড হলিং লিমিটেডে বিনিয়োগ করেছেন ১৪ কোটি ২ লাখ ৬৮ হাজার ৩৯ টাকা। আসাদুল ও আমির স্বাক্ষর জাল করে যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে নেন। টাকা ফেরত চেয়ে আদালতে মামলা করেন ভিকটিম। মামলা এড়াতে আসামিরা সমঝোতার জন্য আইনজীবীদের মাধ্যমে মধ্যস্থতাকারী নিয়োগের প্রস্তাব দেয়। পরে মধ্যস্থতা সালিশে বিচারকদের সামনে বানোয়াট হিসাব উপস্থাপন করেন দুজন। সেই হিসেব দেখিয়ে নিজেদের পক্ষেই সিদ্ধান্ত নেন। পরে ভুয়া অ্যাকাউন্টের বিষয়টি উল্লেখ করে আদালতে মামলা করেন আমিনুল। 2023 সালে, আদালত মামলাটি তদন্ত করার জন্য সিআইডিকে দায়িত্ব দেয়।

দীর্ঘ তদন্তে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা ফরেনসিক প্রতিবেদনে বাদীর স্বাক্ষর জাল করে নতুন হিসাবের বিবরণ পাওয়া ও টাকা উত্তোলনের প্রমাণ উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি আসাদুল ও আমিরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। এরপর থেকে আসামিরা পলাতক। আমিনুল বলেন, দীর্ঘ ব্যবসায়িক জীবনে কখনো এমন বিপদে পড়িনি।

তারা আমাকে সদাচরণ করে রাস্তায় নামিয়েছে। তবে সিআইডির তদন্তে এখন প্রতারণার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হাবিবুর রহমান জানান, তদন্তে ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামের কাছ থেকে আসামিদের টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। স্বাক্ষর জাল করে দুই ভুক্তভোগীর টাকা আত্মসাৎ করেছে আসামি। ব্যাংক জালিয়াতির মাধ্যমে 14 কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি পলাতক থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

About Zahid Hasan

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *