বর্তমানে গণফোরামের নেতৃত্বে রয়েছেন মোস্তফা মহসিন মন্টু। এবার এই রাজনৈতিক দলটিতে নেওয়া হলো একটি বড় ধরনের ভিন্ন সিদ্ধান্ত। গনফোরাম থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে ডঃ কামাল হোসেনকে। শুধু তাই নয় তাকে দলটির প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে দলের নেতাদের মধ্যে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তবে হঠাৎ করেই দলটি থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়নি, এমনটাই জানিয়েছেন মোস্তফা মহসিন মন্টু। অব্যাহতি দেয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে ডঃ কামাল কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
এছাড়া মিজানুর রহমানকে সভাপতি পরিষদের সদস্যপদসহ সব ধরনের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কামাল হোসেন এই দলের প্রধান উপদেষ্টা এবং মিজানুর রহমান সভাপতি পরিষদের সদস্য ছিলেন।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের খালাস ও বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। মোস্তফা মহসিন মন্টুর নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন তিনি কি খারাপ রাজনীতি করছেন, ভালো রাজনীতি করছেন না? সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আবু সাইদ ড. কামালের রাজনৈতিক জীবনের অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর সহচরের ব্যাখা দিয়ে বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন কখনোই জনপ্রিয় ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুর কারণেই তিনি ড. কামাল হোসেন। তিনি চেম্বার রাজনীতি করেন। শুধু তাই নয়, তিনি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ড. কামাল হোসেন ও মোঃ মিজানুর রহমান গত ১৭ সেপ্টেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে গণফোরামের কমিটি ঘোষণা করেন। ওই কমিটি সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক। কারণ গত ২৬ এপ্রিল গণফোরামের বিশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। কামাল হোসেন সভাপতি ও ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে মাত্র ১ বছরের জন্য ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করেন।
আমি গণফোরামের সভাপতি হতে চাইনি: ড. কামাল হোসেন
কিন্তু ওই কাউন্সিল অনুষ্ঠানের পর আড়াই বছরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, স্থায়ী কমিটি বা সম্পাদক পরিষদের কোনো বৈঠক ডাকা হয়নি, ফলে দলে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে গণফোরামে অচলাবস্থা রয়েছে। এ কারণে ২০২১ সালের ৩ ডিসেম্বর ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কামাল হোসেনের অনুমতি ও সহযোগিতায় গণফোরামের ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অত্যন্ত সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলে প্রায় তিন হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট উপস্থিত ছিলেন। গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা মহসিন মন্টুকে সভাপতি ও সাবেক কার্যকরী সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৭ সদস্যের গণফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি তাদের সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হয়।
এই কাউন্সিল অধিবেশনের আগে গণফোরামের সিনিয়র নেতা ড. কামাল হোসেন কাউন্সিল অধিবেশনে যোগদান ও সভাপতিত্ব করতে চান। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তিনি কাউন্সিল অধিবেশনে যোগ দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এ সময় ড. কামাল হোসেন নিজে গণফোরামের উপদেষ্টা হতে সম্মতি দেন এবং তিনি লিখিতভাবে পরিষদের সাফল্য কামনা করেন এবং পরিষদে উপস্থিত সকলকে অভিনন্দন জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময়ের সঙ্গে দেখেছি যে, দীর্ঘদিন সম্পর্কহীন, দল থেকে পদত্যাগকারী, বিভেদ সৃষ্টিকারী ও নিষ্ক্রিয় কিছু ব্যক্তি নিয়ে গণফোরাম নাম দিয়ে ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি ও মো. মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। যা সংবিধান বিরোধী এবং জালিয়াতির সাথে জড়িত।
এর আগে গত শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণফোরামের কাউন্সিল (মোকাব্বির খাঁন) অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রপতি ও ড. মিজানুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দলগুলো তাদের দলকে শক্তিশালী এবং সুসংগঠিত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দল নেতৃত্ব বিবেচনা করে অনেক পদস্থ নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হচ্ছে। যার একটি হল গণফোরাম। এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট থেকে জামায়াতে ইসলামীকে সরিয়ে দিয়ে দলটির কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।