বৈধ মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে প্রবাসীদের উৎসাহিত করতে বিদ্যমান ২.৫ শতাংশ প্রণোদনা ছাড়াও এবার আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেবে ব্যাংকগুলো। নতুন নিয়মে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে বৈদেশিক আয়ের রেমিট্যান্সে মোট ৫ শতাংশ প্রণোদনা পাওয়া যাবে।
বর্তমানে প্রবাসী আয় ব্যাংকে ১ ডলারের বিপরীতে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা পাওয়া যাচ্ছে। সরকার এতে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেয়। এক ডলার ১১৩ টাকা ২৬ পয়সা।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যাংকগুলো এখন আরো আড়াই শতাংশ পরিশোধ করবে। ফলে এক ডলারে প্রবাসীরা পাবেন ১১৬ টাকার একটু বেশি।
বাফেদার চেয়ারম্যান এবং সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আফজাল করিম জানান, আগামীকাল রোববার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
ডলারের রিজার্ভ কমছে ডলারের রিজার্ভ কমছে
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেডা) গত শুক্রবার রাতে ভার্চুয়াল আলোচনায় এই সিদ্ধান্ত নেয়।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, প্রবাসী আয়ের টাকা বেশি দামে কিনতে হয় রেমিট্যান্স হাউস থেকে। নির্ধারিত মূল্যে ডলার পাওয়া যায় না। তাই ডলার সংকট কাটানোর সিদ্ধান্ত।
ব্যাংকাররা আশা করছেন নতুন সিদ্ধান্ত প্রবাসীদের বৈধ উপায়ে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করবে। তারা বলছেন, প্রণোদনা বাড়াতে হবে। নইলে ‘হুন্ডিওয়ালাদের’ সঙ্গ পাওয়া কঠিন হবে। তাদের মতে, ডলারের মূল্য বাজারে ছেড়ে দেওয়াই হবে ‘যৌক্তিক সিদ্ধান্ত’।
১৩ দিনে ৭৮০ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে ৭৮০ মিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স ১৩ দিনে এসেছে
একটি বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, “বর্তমানে অনেক ব্যাংকই ডলারের সংকটে রয়েছে। অনেকেই এলসি খুলতে পারছেন না। প্রবাসীদের আয় বাড়াতে এবিবি ও বাফেটার পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে আয় বৃদ্ধি পাবে। ডলার সংকট কেটে যাবে প্রবাসীদের আয়।
বেশ কিছুদিন ধরেই ডলার সংকটের কারণে বাফেডা ও এবিবির নির্ধারিত হারের চেয়ে পাঁচ-ছয় টাকা বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনছে ব্যাংকগুলো। ফলে প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম বেড়েছে ১১৫-১১৬ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনানুষ্ঠানিক পরামর্শে ডলারের এই দাম দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ডলারের বাজারে অস্থিরতা রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডলারের দাম ১১১ টাকা ছাড়িয়েছে। আর খোলা বাজারে ১২০ টাকা। ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখতে হিমশিম খাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমাগত কমছে। গত এক সপ্তাহে রিজার্ভ কমেছে প্রায় ১১ কোটি ডলার। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রিজার্ভের পরিমাণ কমেছে ২১ বিলিয়ন বা ২ হাজার বিলিয়ন ডলার।
ডলারের দাম আবার বেড়েছে ১২০ টাকা ডলারের দাম আবার বেড়েছে ১২০ টাকা
এমন পরিস্থিতিতে ডলারের বাজারে করণীয় নির্ধারণে গত শুক্রবার রাতে এবিবি ও বাফেদা ব্যাংকের সঙ্গে ভার্চুয়াল আলোচনায় বসে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈঠকে ডলারের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফজাল করিম। তিনি বলেন, ব্যাংকটি নিজস্ব আয় থেকে প্রবাসীদের আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দেবে। আমদানিকারকদের কাছ থেকে তা ফেরত নেওয়া যাবে না।
লেনদেনে ভারসাম্য স্বাভাবিক হয়েছে বলে জানা গেছে। অর্থাৎ আমদানি-রপ্তানির ব্যবধান কমতে শুরু করেছে। এবিবি ও বাফেডা ডলারের বাজার পর্যবেক্ষণ করবে এবং দু-একদিনের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ বিষয়ে অবহিত করবে।
ডলার সংকটে বেপরোয়া অর্থ বিনিময় ডলার সংকটে বেপরোয়া অর্থ বিনিময়
2019-20 অর্থবছরে প্রথমবারের মতো, সরকার রেমিটেন্সের উপর 2 শতাংশ প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্তের কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রেরিত প্রবাসী আয়ের পরিমাণ বেড়ে ১৮ দশমিক ২০ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৮২০ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি। ২০২০ -২১ অর্থবছরে ২৪ .৮০ বিলিয়ন ডলারে রেমিট্যান্স এসেছে, যা ২০১৯ -২০ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩৬ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) হিসাব ব্যবস্থা অনুযায়ী গত বুধবার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৯৬ বিলিয়ন ডলার। তার এক সপ্তাহ আগে ১১ অক্টোবর তা ছিল ২ হাজার ১০৭ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাব ব্যবস্থা অনুযায়ী ২০২১ সালের আগস্টে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮ বিলিয়ন বা ৪৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। গত বছরের ১৮ অক্টোবর সেই রিজার্ভ কমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৬১১ মিলিয়ন ২৬ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারে। গত বুধবার তা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৬৮ মিলিয়ন ডলারে।
এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নেট বা রিয়েল রিজার্ভের আরেকটি হিসাব আছে, যা শুধুমাত্র আইএমএফকে দেওয়া হয়। যে অ্যাকাউন্ট প্রকাশিত হয় না. আইএমএফ সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৭ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার কম।