গত ১৮ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের ফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে গেল কাঁতারে আয়োজিত বিশ্বকাপ ফুটবল। কিন্তু কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে অঘটন ঘটেছে অনেকটা শুরু থেকেই। সাবেক বিশ্বকাপ ফুটবল চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দেয় অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল সৌদি আরব। কিন্তু সেই আর্জেন্টিনায় শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি জয় করে নিল। তাছাড়া রেফারিদের সিদ্ধান্তও বেশ কয়েকবার আলোচনায় আসে, দেখা দেয় প্রশ্ন। ফাইনালে একটি বিষয় নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়।
কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিকসহ মোট আট গোল করে গোল্ডেন বুট জিতেছেন ফরাসি ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পে। তবে এই স্বীকৃতিটা লিওনেল মেসির হাতেই হতে পারত। ম্যাচ রেফারি শুধুমাত্র ভিআর-এর সাহায্য নিলে এমবাপ্পের শেষ গোলটি গোলটা তো হতই না, উল্টো টাইব্রেকারের আগেই ম্যাচ জিতে যেত আলবিসেলেস্তেদের।
গত রোববার কাতারের লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ২২তম আসরের ফাইনালে মাঠে নামে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। নির্ধারিত সময়ে খেলা ২-২ গোলে ড্র থাকায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের ১১৬তম মিনিটে ফরাসি ফুটবলার কিংসলে কোয়েম্যানের কর্নার কিক থেকে বলটি হেড করেন সতীর্থ উপমেকানো। এরপর বল চলে যায় এমবাপ্পের পায়ে। এমবাপ্পে বল শট নিলে তা চলে যায় আলবিসেলেস্তার ডিফেন্ডার মন্টিয়েলের হাতে। আর পেনাল্টি পায় ফ্রান্স। তবে মন্টিয়েলের হ্যান্ডবলের আগে বল ক্যাচ দিয়েছিলেন ফরাসি সেন্টার-ব্যাক উপমেকানো।
তবে, আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা যদি ফাইনাল ম্যাচের পোলিশ রেফারি সাইমন মার্সিনিয়ার কাছে ভিআরের জন্য আবেদন করতেন এবং রেফারি তার সাহায্য নিতেন, তাহলে ম্যাচের ভাগ্য বদলে যেতে পারত। এমনকি ৩-২ গোলে ম্যাচ জিতেছে আলবিসেলেস্তা। সে সময় মেসি ও এমবাপ্পের সমান ৭ গোল ছিল। যাইহোক, যেহেতু মেসি অ্যাসিস্টে এগিয়ে ছিলেন, তাই ‘এলএমটেন’ গোল্ডেন বুট জিততে পারত।
তবে রবিবারের ফাইনাল ম্যাচ নিয়ে ফ্রান্সের অভিযোগের শেষ নেই। অতিরিক্ত সময়ের ১০৮ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে ৩-২ গোলে এগিয়ে দেন মেসি। বেশ কয়েকটি ফরাসি মিডিয়া দাবি করেছে যে রেফারির গোলটি বাতিল করা উচিত ছিল। তাদের দাবি, মেসির গোলের সময় মাঠে ছিলেন ১১ জনের বেশি আর্জেন্টাইন ফুটবলার। তাছাড়া, বিকল্প হিসেবে মাঠে নামার জন্য সাইডলাইনে অপেক্ষা করছিলেন আলবিসেলেস্তাসের একজন ফুটবলার। গোলের সময় তিনি নিয়ম ভেঙে মাঠে নামেন বলেও জানান তারা।
এ প্রসঙ্গে ফ্রান্সের এক বিশেষজ্ঞ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী কেউ মাঠে অতিরিক্ত থাকতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে হতে পারে ফুটবলার, কোচ বা অন্য কেউ। রেফারির উচিত ছিল আর্জেন্টিনার তৃতীয় গোলটি বাতিল করা।
তবে সংবাদ সম্মেলনে সমালোচকদের অভিযোগের কড়া জবাব দেন পোলিশ রেফারি সাইমন মার্সিনিয়া। সাংবাদিকদের একটি ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, এই ছবি নিয়ে ফরাসিরা কথা বলল না কেন? এমবাপ্পে গোল করলেও ফ্রান্সের অতিরিক্ত ৭ ফুটবলার মাঠে কী করছিলেন?
মার্সিনিয়ার ফোনে থাকা একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে ফ্রান্সের রিজার্ভ বেঞ্চের সাতজন খেলোয়াড় মাঠে হাঁটছেন কারণ এমবাপ্পে অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি নেন। সেই ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, আর্জেন্টিনার গোল বাতিল হলে এমবাপ্পের গোলও বাতিল করতে হবে। তার জবাবের পর ফ্রান্সের সমালোচকরা আর মুখ খোলেননি।
কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলে নানা ধরনের প্রশ্ন দেখা দেওয়া এবং বিতর্ক সৃষ্টি হলেও সফলতার সাথে সম্পন্ন হয়ে গেল ‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত বিশ্বকাপ ফুটবল। কাতারে দর্শনার্থীদেরও পড়তে হয়েছিল নানা ধরনের বিধি-নিষেধে, যার কারণে অনেক দেশের দর্শনার্থীরা কিছুটা বিপাকে পড়েন। কারণ সেখানে তাদের স্বাধীনতাটা পুরোপুরি ছিল না।