শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমীর রাতে একটি পূজামণ্ডপে অনুষ্ঠিত একটি অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র গীতা থেকে শ্লোক পাঠ করে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী নেতা অধ্যাপক মতিয়ার রহমান ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ঘটনার ৫ মিনিটের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। শনিবার (১২ অক্টোবর) তিনি একটি ভিডিও বার্তায় গীতা পাঠের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য তুলে ধরেন।
ভিডিওর শুরুতে অধ্যাপক মতিয়ার রহমান বলেন, “প্রিয় এলাকাবাসী, আমার সালাম ও শুভেচ্ছা নেবেন। আমি মো. মতিয়ার রহমান, ঝিনাইদহ-৩ আসনের জামায়াত মনোনীত এমপি পদপ্রার্থী।” তিনি জানান, গত বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের সাথে মতবিনিময় করতে যান, যাতে তারা নিরাপত্তার সাথে তাদের ধর্মীয় পূজা উৎসব পালন করতে পারে। কোটচাঁদপুর পৌরসভা ও এলাঙ্গি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার পূজা উদযাপন কমিটির সাথে আলোচনা করে তিনি মানবসেবা, অমুসলিমদের অধিকার, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান পালনের বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করেন।
অধ্যাপক মতিয়ার রহমান বলেন, “ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম, যা জাতি, ধর্ম, বর্ণ ও গোত্র নির্বিশেষে মানবতার অধিকারকে সুরক্ষা করে।” এই বক্তব্যের সমর্থনে তিনি বেদ থেকে কিছু শ্লোকও পাঠ করেন। এরপর তিনি মন্তব্য করেন যে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তার বক্তব্যের কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে, যা জনগণকে বিভ্রান্ত করছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিতে গিয়ে গীতা থেকে শ্লোক পাঠ করেন। এই সময়ে উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা উলুধ্বনি দেন এবং শঙ্খ বাজান। তিনি বলেন, “যদি আগামীতে নির্বাচিত হই, তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসব পালনে সহযোগিতা করবো।”
অধ্যাপক মতিয়ার রহমান আরও উল্লেখ করেন, “এই কোটচাঁদপুরের আলো-বাতাস, মাটি ও মায়া-মমতাই আমাকে গড়ে তুলেছে। আমি একজন ইসলামী আদর্শের অনুসারী, তবে আমার ভেতর একজন ভালো সনাতনী হিন্দু ব্রাহ্মণ, একজন ভালো খ্রিস্টান এবং একজন ভালো মুসলিমও বাস করেন।”
এমন বক্তব্যের পর জামায়াত নেতা অধ্যাপক মতিয়ার রহমানের ভিডিওটি বিভিন্ন সামাজিক প্ল্যাটফর্মে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। অনেকেই তার বক্তব্যকে ইতিবাচক বলে অভিহিত করেছেন, আবার কেউ কেউ এ নিয়ে সমালোচনাও করেছেন। সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্ব এবং ধর্মীয় ভেদাভেদ দূর করার আহ্বানও উঠেছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ধর্মীয় সম্প্রীতির ধারণা এবং একে অপরের ধর্মীয় অধিকারকে সম্মান করার প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত হয়েছে। জামায়াতের নেতা অধ্যাপক মতিয়ার রহমানের বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছে, যা ধর্মীয় সম্প্রীতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে।