রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ এলাকায় অবৈধ পার্কিংয়ের অভিযোগে প্রাইভেটকারের বিরুদ্ধে মামলা করায় সার্জেন্ট হাসিনা খাতুনকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তাসফিয়া ইসলাম (২২) ও তার মা দিলারা আক্তারকে (৫০) আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) মোহাম্মদপুর থানায় সার্জেন্ট বাদী হয়ে মামলা করেন।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সার্জেন্ট হাসিনা খাতুন বলেন, মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত শিয়া মসজিদ ক্রসিং এলাকায় আমার ডিউটি চলছিল। বিকেল ৫:৩০ টার দিকে, তাজমহল রোডে অবৈধভাবে পার্ক করা দুটি প্রাইভেট কারকে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৮৭ ধারায় বাধা দেওয়ার জন্য মামলা করা হয়েছিল। কিছুক্ষণ পর ঢাকা মেট্রো-জি-৪২-১৩০১ এর মালিক দিলারা আক্তার গাড়িতে কেন ৫ হাজার টাকার মামলা দিয়েছি সে বিষয়ে আমার কাছে জানতে চায়।
এসময় তিনি ‘কেন তুই আমার গাড়িতে মামলা দিলি’ -একথা বলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে পুলিশ বক্স থেকে বেরিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর তার মেয়ে তাসফিয়া ইসলাম আমার কাছে এসে ভিডিওটি দেখতে চাইলে আমিও তাকে ভিডিওটি দেখিয়ে বুঝিয়ে বলি। কিন্তু তারা সে বিষয়ে পাত্তা না দিয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং ও মা মেয়ে মিলে আমাকে কিল, ঘুষি, চড়-থাপ্পড় মারতে থাকে। আমার মুখ শরীরে বিভিন্ন জায়গায় খামচি দিয়ে জখম করে। তারা আমার ওয়াকি টকি বডি ক্যামেরা এবং গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন রাস্তায় ফেলে দেয়, যা এখনো পাওয়া যায়নি। পরে কর্তব্যরত দুই কনস্টেবল আমার সাথে এসে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করলেও তারা আরও আগ্রাসী হয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে বলেও জানান সার্জেন্ট। পুলিশ আসার পর মা-মেয়েও তাদের ওপর হা”মলা চালায়। এক পর্যায়ে তাদের আটক করে নিয়ে যায় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। খবর পেয়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থানায় আসেন। এরপর আমি বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় তাসফিয়া ইসলাম ও তার মা দিলারা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করি। পরে চিকিৎসার জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী কয়েকজন পুলিশ সদস্যের মতে, দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তার গায়ে হাত দেওয়া খুবই গুরুতর অপরাধ। আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর অনেকবার তাদের নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করলেও তারা আমাদেরকে নানা অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে। তাদের থানায় আনতে চাইলেও তারা থানায় আসতে চায়নি। পরে অতিরিক্ত ফোর্স নিয়ে তাদের থানায় নিয়ে আসা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুল হক ভূইয়া জানান, গতকাল সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদ এলাকায় একটি প্রাইভেটকার পার্কিংয়ের অভিযোগে ডিউটি সার্জেন্ট হাসিনা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। পরে প্রাইভেটকারের মালিক এসে সার্জেন্টকে গালিগালাজ ও মারধর করেন। পরে আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে মা ও মেয়েকে আটক করে মোহাম্মদপুর থানায় নিয়ে আসি। ঘটনার বিবরণ জানার পর সার্জেন্ট হাসিনা খাতুন বাদী হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় আজ তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে তা দুঃখজনক ঘটনা। তারা কোনোভাবেই দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাকে এভাবে স্পর্শ করতে পারে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গ্রেফতারকৃত তাসফিয়া ইসলামের বাবা মফিজুল ইসলাম দাবি করেন, আমরা বর্তমানে আদালতে আছি। পরিবর্তে তারা আমার মেয়ে ও স্ত্রীকে পুলিশ বক্সে নিয়ে গিয়ে মারধর করে। এ ঘটনায় আমাদের মামলা করার কথা থাকলেও তারা উল্টো মামলা করেছে।