Friday , November 15 2024
Breaking News
Home / Countrywide / পুলিশের বলছে সেই পর্যটক নারী পূর্ব পরিচিত আশিকের, র‌্যাব বলছে না

পুলিশের বলছে সেই পর্যটক নারী পূর্ব পরিচিত আশিকের, র‌্যাব বলছে না

সম্প্রতি কক্সবাজারের স্বামী এবং সন্তানকে জিম্মি করে রেখে গৃহবধুকে ধর্ষণের অভিযোগ আসার পর থেকে নড়ে বসেছে কক্সবাজারের প্রশাসন। সবথেকে দুঃখজনক ব্যাপার আসামি ধরা পড়লেও ভিন্ন ভিন্ন প্রশাসনের তথ্যের কোন মিল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এতটুকু জানা গেছে চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না পেয়ে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে তারা। কিন্তু এটা কেমন নির্মমতা স্বামী সন্তানকে জিম্মি করে রেখে গৃহবধূকে ধর্ষণের মতো ঘটনা। ঘটনা অনুযায়ী টুরিস্ট পুলিশ বলছে ওই মহিলার সঙ্গে নাকি ধর্ষকদের পূর্ব থেকেই পরিচয় যেখানে র‍্যাব বলছে না, যেটা এখন আলোচনার সবথেকে বড় বিষয়।

চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না পেয়ে স্বামী-সন্তানকে জিম্মি করে কক্সবাজারের সেই নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেন আশিকুল ইসলাম আশিক ও তার সহযোগীরা।

ধর্ষণের শিকার ঐ নারী তার আট মাস বয়সি শিশুর চিকিৎসার ১০ লাখ টাকা জোগাতে তিন মাস ধরে সেখানে অবস্থান করছিলেন। আশিক তাদের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল। টাকা না পেয়ে সে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

এর আগে তদন্তসংশ্লিষ্ট ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আশিকসহ কয়েক জন ঐ নারীর পূর্বপরিচিত। কিন্তু র‌্যাব জানিয়েছে, তথ্যটি সঠিক নয়। ঘটনার মাত্র এক দিন আগে সৈকতে তাদের পরিচয় হয়। ভুক্তভোগী ঐ নারী ধর্ষকদের পূর্বপরিচিত ছিলেন না।

গত ২২ ডিসেম্বর রাতে কক্সবাজারে গণধর্ষণের শিকার হন ঐ নারী। এ ঘটনায় ভিকটিমের স্বামী বাদী হয়ে চার জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরো দুই-তিন জনকে অজ্ঞাত আসামি করে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। ঐ ঘটনায় ট্যুরিস্ট পুলিশ, জেলা পুলিশসহ ছায়া তদন্ত করছে র‌্যাব। আলোচিত এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আশিককে (২৯) রবিবার মাদারীপুর থেকে গ্রেফতার করে সংস্থাটি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে র‌্যাবের কাছে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছে। এছাড়া তার আরো তিন সহযোগীকে রিমান্ডে নিয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা টু্যরিস্ট পুলিশ।

গতকাল সোমবার রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্হাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, শিশুসন্তানকে বাঁচাতেই তিনি (ভুক্তভোগী নারী) পর্যটকদের কাছে হাত পাতেন। কক্সবাজারে দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটকের উপস্থিতি থাকায় সেখানেই তিন মাস অবস্থান করেন। এতে ঐ নারীর শিশুসন্তানের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব হয়ে ওঠে। গত ২২ ডিসেম্বর লাবণী বিচ এলাকার রাস্তা থেকে ঐ নারীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যায় চক্রটি। সেখানে একটি ঝুপড়ি ঘরে আটকে রেখে সব কেড়ে নেয়।

তিনি আরো বলেন, ঐ নারী সংঘবদ্ধ চক্রটির পূর্বপরিচিত ছিলেন না। ঘটনার এক দিন আগে সৈকতে তাদের পরিচয় হয়। সে সময় ঐ নারী শিশুসন্তানের চিকিৎসার জন্য ট্যুরিস্টদের কাছে অর্থসহযোগিতা চাইছিলেন।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতার আশিক কক্সবাজারে পর্যটক এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের মূল হোতা। এই চক্রের সদস্যসংখ্যা ৩০-৩৫। আশিক ২০১২ সাল থেকে কক্সবাজার পর্যটক এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সে ২০১৪ সালে অস্ত্রসহ প্রথম গ্রেফতার হয়। আশিক ও তার সিন্ডিকেট কক্সবাজারে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, জিম্মি, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। সে পর্যটন এলাকায় বিভিন্ন হোটেলে ম্যানেজারের সঙ্গে যোগসাজশে ট্যুরিস্টদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করত।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার আশিক আরো জানায়, আশিক ও তার সহযোগীরা ভিকটিম ও তার পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। ভিকটিম ও তার পরিবার চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর লাবণী বিচ এলাকার রাস্তা থেকে ভিকটিমকে সিএনজি অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আশিকুল ভিকটিমকে জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে আটকে রেখে ধর্ষণ এবং ভিকটিমের স্বামীর কাছে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ঘটনা জানাজানি হলে দেশ জুড়ে তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। এরপর আশিক আত্মগোপনে চলে যায়। পরে বেশভূষা পরিবর্তন করে ঘটনার দুই দিন পর কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসে। পরে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার পথে মাদারীপুরে গ্রেফতার হয়।

পুলিশ যা বলেছিল: ঘটনার পরপর মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্মকর্তারা বলছিলেন, এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত আশিকসহ কয়েক জন ঐ নারীর পূর্বপরিচিত। অভিযোগকারী নারী তিন মাস ধরে কক্সবাজারে আছেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ভুক্তভোগী আদালতকে জানান, তার সন্তান জন্মের পর থেকেই অসুস্থ। সন্তানের চিকিৎসার টাকা জোগাড় করতেই তিন মাস আগে তারা কক্সবাজারে আসেন।

সে সময় কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান জানান, চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোনে অভিযান চালিয়ে বেআইনি কাজে জড়িত অভিযোগে ৫৪ জন নারী-পুরুষকে আটক করা হয়। আটকদের মধ্যে ঐ নারীও ছিলেন। পরদিন পুলিশের করা একটি মামলায় ২৭ নম্বর আসামি হিসেবে তার নাম রয়েছে। ঐ মামলায় ‘মানব পাচার, পতিতালয় পরিচালনা এবং পতিতাবৃত্তি ও সহায়তার’ অভিযোগ আনা হয়। একই মাসের ২৭ তারিখ জামিনে বের হয়ে তিনি আবারও পূর্বের পেশায় যুক্ত হন বলে উল্লেখ করেন পুলিশ সুপার।

আড়াই বছর জেলে ছিলেন আশিক: অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন, চাঁদাবাজিসহ ১৮টি মামলা রয়েছে আশিকের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ১২টি মামলা চলমান রয়েছে। আগে সে পাঁচবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সে আড়াই বছর কারাভোগ করেছে। তার বিরুদ্ধে এক পুলিশ কনস্টেবলকে নারী দিয়ে ফাঁসিয়ে চাঁদা আদায়েরও অভিযোগ আছে। এছাড়া কক্সবাজারের পাঁচ শতাধিক হোটেল থেকে প্রতিদিন চাঁদাবাজি করার অভিযোগও রয়েছে আশিকের বিরুদ্ধে।

হোটেলমালিকেরা বলছেন, চাঁদা না দিলে জিম্মি ও মারধর করত আশিকের বাহিনী। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির প্রশ্রয়ে আশিক দিনে দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

তিন আসামি রিমান্ডে: এই ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার ৩ আসামিকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। গতকাল বিকালে কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর মো. ফারুকি তাদের দুই দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন। ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রিমান্ডে নেওয়া আসামিরা হলো-রেজাউল করিম, মামুনুর রশিদ ও মেহিদী হাসান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক রুহুল আমিন জানান, এই মামলায় জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

প্রশাসনের কাজ সুষ্ঠু তদন্ত। বাংলাদেশ র‍্যাব বরাবরই সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রশংসিত। তাহলে উক্ত ঘটনায় র‍্যাবের তথ্যকে মিথ্যা বলা যায় না। এখন প্রশ্ন তাহলে টুরিস্ট পুলিশ কেন মিথ্যা বলল? তাহলে কি ধর্ষকদের সাথে টুরিস্ট পুলিশের কোন যোগাযোগ আছে? এ সব প্রশ্ন এখন মানুষের মনে মনে। তবে এখন দেখার বিষয় শেষ পর্যন্ত আসল ঘটনাটা কি দাঁড়ায় আর অপরাধীর সাজা পায়।

About Ibrahim Hassan

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *