সম্প্রতি দেশজুড়ে আলোচনায় উঠে আসে মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগমের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি এবং সেই সাথে শুরু হয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম লেখালেখি। দীর্ঘ ২৯ দিন নিখোঁজ থাকার পর মরিয়ম মান্নানের মাকে ফরিদপুরের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। মরিয়ম মান্নানসহ তার বোনেরা দাবি করে আসছেন যে, তার মাকে অপহরণ করা হয়েছে। কিন্তু মরিয়ম মান্নানের মাকে উদ্ধার করার পর পুলিশের এক প্রশ্নে খুলে গেলো অপহরন নাটকের জট।
২৯ দিন নিখোঁজ মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগমকে ফরিদপুর থেকে উদ্ধারের পর তার কাছ থেকে একটি শপিং ব্যাগ পেয়েছে পুলিশ। ওই ব্যাগ দেখে পুলিশের মনে হয়েছে তাকে অপহরণ করা হয়নি। রহিমাকে খুলনার ভি’কটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় নগরীর হাজী মহসিন রোডস্থ পিবিআই খুলনা কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ব্রিফিংয়ে পিবিআই খুলনার পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, আমরা এখনও মামলাটি তদন্ত করছি। তবে প্রাথমিকভাবে তার কাছ থেকে একটি সাদা শপিং ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে ছিল ওড়না, হিজাব, আয়না, শাড়ি, চোখের ড্রপ, ওষুধ। তাঁর পরিধেয় সালোয়ার–কামিজ ছিল, সঙ্গে ছোট একটি অর্নামেন্টাল পার্টস ছিল। একজনকে অপহরণ করলে স্বাভাবিকভাবেই এসব থাকার কথা নয়। তবে আমরা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। বিস্তারিত তদন্তের পর আমরা আপনাদের সবকিছু জানাব। তবে দৃশ্যত এটি অপহরণ নাও হতে পারে।’
পুলিশ সুপার মুশফিকুর রহমান জানান, রহিমা বেগম কিছুটা ‘নার্ভাস’ বোধ করছিলেন। তিনি বলেন, রহিমাকে বিশ্রামে রাখা হয়েছে। একটু স্বাভাবিক হলেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তার নিখোঁজের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা করা হবে।
রহিমা বেগমের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তার মেয়ে মরিয়ম মান্নানের ফে”সবুকে বিভিন্ন পোস্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিভ্রান্ত করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া ময়মনসিংহে এক অজ্ঞাত নারীর নিথর দেহ তার নিখোঁজ মা রহিমা বেগমের বলে দাবি করায় প্রশাসন বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, রহিমা বেগমকে অপহরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার ছয়জনের বিষয়ে আদালতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া রহিমাসহ তিনজনকে ফরিদপুর থেকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়ার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। তবে এ ঘটনায় কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি জড়িত হবে না। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে পাঠানো হবে। আদালত থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।
এর আগে সকালে রহিমা বেগমকে ভি”কটিম সহায়তা কেন্দ্র থেকে পিবিআই কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ভি”কটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে নেওয়ার সময় দৌলতপুর থানার উপ-পরিদর্শক দোলা দে বলেন, রহিমা বেগম তার নিখোঁজের বিষয়ে কিছু বলেননি। তিনি সন্তান ও স্বামীর কাছে যেতে চান না। সকালে তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান তার সঙ্গে দেখা করতে আসলেও তার সঙ্গে দেখা করতে চাননি। পরে রহিমা বেগম তাদের সঙ্গে দেখা করলেও কথা বলেননি।
গত ২৭ আগস্ট রাত ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকায় বাড়ির আঙিনায় টিউবওয়েলে পানি আনতে যান রহিমা বেগম। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
তার পরের দিন রহিমা বেগমের মেয়ে আদুরী আক্তার থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন এবং সেখানে অভিযুক্ত করা হয় বেশ কয়েকজন অজ্ঞাত ব্যক্তিদের। এ ঘটনার পর পুলিশ অভিযানে নামে এবং ছয় জনকে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে মায়ের খোঁজ পেতে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন করতে ছুটে যান তার সন্তানেরা।