ফরিদপুরের নগরকান্দায় বিএনপি নেতার বাড়িতে পুলিশের অভিযানকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন বিএনপি নেতার স্ত্রী আঞ্জুয়ারা লিপি (৪০) নামে এক গৃহবধূ।
শনিবার রাতে নগরকান্দার চর্যাশোহরদী ইউনিয়নের চাঁদহাট দহিসারা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
তবে থানা পুলিশের দাবি, তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না।
তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন জানান, পুলিশের অভিযানে স্কুল শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আঞ্জুয়ারা লিপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নং ৫২ চাঁদহাটে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার স্বামী এস এম ইকরাম আলী নগরকান্দা উপজেলা বিএনপি, পল্লী উন্নয়ন ও স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক ও দেওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ।
শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে চাঁদহাট দহিসাড়া গ্রামে বিএনপি নেতা ইকরাম আলীর বাড়িতে ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল অভিযান চালায় বলে জানা গেছে। এ সময় তাকে (ইকরাম আলী) পাওয়া যায়নি এবং তার বাড়ির বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালানো হয়। একপর্যায়ে তার স্ত্রী (ইকরাম আলী) লিপি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় পাশের বাড়ি থেকে তার ভাতিজা রবিউলের স্ত্রীকে ফোন করে। খবর পেয়ে ইউপি সভাপতি কামরুজ্জামান সাহেব ফকিরের ছেলে বিপ্লব ফকির ও উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের নেতা দেলোয়ার হোসেন নামে আরও দুইজন সেখানে পৌঁছান।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সভাপতি বিপ্লব জানান, খবর পেয়ে তিনি ইকরাম আলীর বাড়িতে গিয়ে তাকে (লিপি) অসুস্থ অবস্থায় সোফায় বসে থাকতে দেখেন। মুখ দিয়ে ফেনার মত কিছু একটা বের হল। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও বলেন, পুলিশ ইকরাম আলীর বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর এ ঘটনা ঘটে। ‘পুলিশ কি আর এমন কিছু করে কিনা? তারা কি সন্ত্রাসী নাকি? তারা আইস্যা খুঁজছে, না পাইয়্যা চইল্যা গ্যাছে। তারপরে তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নিহতের স্বামী ইকরাম আলী জানান, বিকেলে বাড়ি ফেরার পথে জয়বাংলা ও বিশ্বরোডের মোড়ে পুলিশ দেখেন। ওই রাতে তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। ছেলেকে বাড়িতে থাকতেও নিষেধ করেন। রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার স্ত্রী ফোন করে জানায় পুলিশ বাড়িতে এসেছে। দরজা খুলতে বলছে।ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এ সময় তিনি তাকে দরজা খুলে দিতে বলেন।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, এরপর প্রায় ২০ থেকে ২৫ পুলিশ সদস্য বাড়িতে ঢুকে সব কক্ষে তল্লাশি চালায়। তারা আলমারি ছাড়া সবকিছু লুটপাট করে। প্রায় ২০ মিনিট পর পাশের বাড়ি থেকে ভাতিজা রবিউলের স্ত্রীকে ফোন করে পুলিশ। তারা এসে দেখে লিপি অসুস্থ সোফায় বসে আছে। মুখ দিয়ে ফানা বের হচ্ছে। পরে তাকে মুকসুদপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ইকরাম আলী জানান, তার স্ত্রীর সাথে খু্বই খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। আরো কিছু হয়তো হয়েছে। কিন্তু ঘটনার পর আমি তার মোবাইলে ফোন করলেও তিনি ফোনটি ধরতে পারছিলেন না। পরে বাড়িতে এসে দেখি আমার স্ত্রী মারা গেছেন।
এ বিষয়ে নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।
উপ-পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সার্কেল) মোঃ আসাদুজ্জামান শাকিল জানান, নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে পুলিশ ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে। তবে পুলিশ বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে কি না তা জানি না।