Monday , December 23 2024
Breaking News
Home / opinion / পুরো ডকুমেন্টটা পড়লাম,ইলিয়াস আলীর গুমের আসল রিপোর্ট এটা,গুমের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়েছিলেন জিয়া:সেনা কর্মকর্তা

পুরো ডকুমেন্টটা পড়লাম,ইলিয়াস আলীর গুমের আসল রিপোর্ট এটা,গুমের আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়েছিলেন জিয়া:সেনা কর্মকর্তা

বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের অন্যতম আলোচিত একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে গুমের বিষয়টি। গেল কয়েক দশকে বাংলাদেশে গুমের ঘটনা ঘটেছে অনেক। যার মধ্যে সব থেকে বেশি আলোচনা হচ্ছে বিনপির আলোচিত নেতা ইলিয়াস আলীর গুম নিয়ে। এবার এই বিষয় নিয়ে একটি গুতুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তার সেই লেখনী তুলে ধরা হলো হুবহু :-

আমি ব্যাগ গুছানো বাদ দিয়ে পুরো ডকুমেন্টটা পড়লাম। এটা জিয়ার নেতৃত্বে র‍্যাব ইন্টালিজেন্সের ইলিয়াস আলির গুম বিষয়ক তথ্যবহুল রিপোর্ট। গুম চলাকালে সেই এলাকায় আটটি নতুন সেলফোন ব্যাবহার আর জিয়ার অধীনে চাকুরীরত দুই ক্যাপ্টেনের অবস্হান আর কার্যক্রম নিশ্চিত ভাবে প্রমান করে এটা তাদের কাজ। এছাড়া সুদানে মিসনে থাকাকালীল এক র‍্যাব অফিসারের কাছে জিয়ার সরাসরি এই অপারেশন পরিচালনার কথা আগেই শুনেছিলাম।পাঠ শেষে মনে হলো, এখন আমার কী করা উচিত? কার সাথে কথা বলা উচিত? ভাবনার কূলকিনারা না পেয়ে নিজেই ব্রেন স্টর্মিং শুরু করলাম।

প্রথমত: ডিজিএফআই এবং র‍্যাব-১ এই তদন্ত করে ইলিয়াস আলী গুমের রহস্য উন্মোচন করেছে তার মানে এই নয় যে, এই ডকুমেন্ট পাবলিক হলে তারা এটা সমর্থন করবে। দ্বিতীয়ত, যেহেতু এই ঘটনায় ইলিয়াস আলীর ভারত বিরোধী অবস্থান একটা ফ্যাক্টর তাই ভারতের “র” এটা জিয়াউল আহসানকে দিয়ে করিয়েছে এবং অবশ্যই এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। পরবর্তিতে আমি জানতে পারি ইলিয়াস আলী গুমের ৭/৮ দিন আগে জিয়া প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে যায় সিকিউরিটি এ্যডভাইজারের সাথে দেখা করবে বলে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করে এবং এটা অনুমেয় যে সে ইলিয়াস আলীর বিষয়ে সেদিন গ্রীন সিগন্যাল পেয়েছিল।

২০১২ সালে ভারত আমাদের সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করলেও সরকারের বাহিনীগুলোকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতো না তাই তখন অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী/গোয়েন্দা সংস্হাকে আড়ালে রেখে ইলিয়াস আলীর গুম অপারেশন পরিচালনা করে র‍্যাব এর গোয়েন্দা শাখা বা কর্নেল জিয়া।ডিজিএফআই তখন তাদের রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে থেকে তৎকালীন ডিজি এর অনুমোদনেই এই তদন্ত পরিচালনা করে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমি বুঝতে পারলাম সরকার পুরোপুরি দেশের প্রতি করা ওয়াদা ভংগ করেছে! আমার অবস্থান থেকে এই ডকুমেন্ট দেশী-বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে সংবাদটি দিলেও তারা এটা ট্র‍্যাক করে আমাকে ধরে ফেলবে এবং ইলিয়াস আলীর সাথে লে: কর্নেল মোস্তাফিজের নামটাও যোগ হয়ে যাবে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করার।

নেত্র নিউজ ইতিমধ্যেই এই তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে একটি রিপোর্ট পাবলিস করেছে তবে তাতে দুটো তথ্য শুধু মৌখিক প্রমানের কারণে বাদ দিয়েছে! তা হল ইলিয়াস আলি গুমের দিন সেনাবাহিনীর সার্জেট তাহের (২৫ এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারী) এবং পুলিশের এসআই জাহাংগীর এই দুইজন ইলিয়াস আলীকে মটরসাইকেলে হোটেল সোনারগাঁ থেকে অনুসরণ করছিল। তাদের এই ছবি প্রথমআলোতে প্রকাশিত হয়েছে। পরবর্তীতে ৭ই মে সার্জেন্ট তাহেরকে তার নিজ ইউনিটে এবং এসআই জাহাংগীরকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে কিশোরগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িত জিয়া ফেরত পাঠায়।

ভোটচোরা বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারকে টিকিয়ে রাখতে জিয়া আর তার সহযোগী লুটেরার দল হেন কাজ নেই যে করেনা। সরকারের অনুচরদের কাছে জিয়া একজন দেশপ্রেমিক অকুতোভয় সৈনিক।

এবারে নিজেকে প্রশ্ন করুন, একজন দেশপ্রেমিক সরকারী কর্মকর্তা দেশের জন্য যে অবস্থান থেকেই চাকুরী করুক না কেন, তার কী সরকারী চাকুরীতে বহাল থেকে অন্য একটি দেশের নাগরিকত্ব/পাসপোর্ট থাকা উচিত? জিয়াউল আহসানের একটি ভিন্নদেশের পাসপোর্ট আছে যার মেয়াদ গতকাল(২০ সেপ্টেম্বর ২০২২) শেষ হয়ে গেছে। জানিনা সে তার এবং তার পরিবারের সেই ভিনদেশী পাসপোর্ট রিনিউ করিয়েছে কিনা! জিয়া তার বিদেশী পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সময় দেখিয়েছে তার রিয়েল এস্টেট হোল্ডিংস আছে $ ২০,৯০,৭৫০ যা বাংলাদেশী টাকায় ২৩ কোটি টাকা, অন্যান্য আরও টাকা/সম্পদের হিসাবতো রয়েছেই। মিরপুর ডিওএইচএস এর ৮ নং রোডের ৫৪১ নম্বর বাসাটা জিয়ার (জ্বী, ডকুমেন্ট অনুযায়ী পুরো বাসাটা তার, সেখানকার একটি ফ্ল্যাট নয়)। মিরপুর ডিওএইচএস এ আমাদের ব্যাচমেটদের কারো প্লট পাবার কথা নয়। আমার জানামতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অধিকাংশ জেনারেলই অবসর গ্রহণের পর ব্যাংক লোন ছাড়া শুধুমাত্র নিজের টাকায় বাড়ী করতে পারেন না। কিন্তু মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান ব্রীগেডিয়ার পদবীতে চাকুরীরত থেকেই দুটি বাড়ী করতে পেরেছেন, মাশাআল্লাহ। অপরটি আমাদের ব্যাচ জলসিঁড়ি আবাসনের যে প্লট পেয়েছে সেখানেও সে বহুতলা বিশিষ্ট একখানা বাড়ী তুলে রেখেছে, যার কিছু ফিনিশিং কাজ বাকী থাকলেও আলীশান বাড়ি রেডি।

জিয়া এবং মাহবুব ধীরে ধীরে আমাদের কোর্সমেটদের একটা বলয় তৈরী করেছে। যারা এই দুইজনকে নিয়মিত তৈলমর্দন করতে পারবে তাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল। যে কোর্সমেট দেশে ব্যবসা বানিজ্য করছে মন না চাইলেও সে বাধ্য হয়ে তাল মিলিয়ে চলে। কোর্সমেটদের হাতে রাখতে কিছুদিন পর পর জিয়া নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ক্ষমতাবল প্রদর্শন করে।ছোট একটা উদাহরণ দেই তাহলে: আমার এক বন্ধু লে: কর্নেল। তার সামনে প্রোমেশন বোর্ড। সব অংক কষে বন্ধু বুঝল যে, তার প্রোমোশন পাবার সম্ভাবনা অতি ক্ষীণ। বুদ্ধিমান বন্ধু তাই অভিনব কায়দায় তার লয়ালিটি প্রদর্শন করল অতি গোপনে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব তখন সাভারের একটি পদাতিক ব্রীগেডের কমান্ডার। সেই কোর্সমেট তখন মাহবুবের জন্মদিনে রাত বারোটায় ভাবীসহ উপহারের ডালি এবং জন্মদিনের বিশাল কেক নিয়ে ঢাকা থেকে সাভারে গিয়ে মাহবুবের দরজায় উপস্থিত হলো। এবারে মাহবুব খুশী-তাই সরকারও কোর্সমেটের প্রতি খুশী। ফলাফল হলো, নেক্সট প্রোমোশন বের্ডে বন্ধুবর ফুল কর্নেল। এমন আরও অনেক ঘটনা মনে পড়ছে। তবে এই পরিস্থিতি বিশ্লেষণের জন্য যথেষ্ট। অথচ আমার বেশ কিছু কমপিটেন্ট কোর্সমেট তাদের প্রতি লয়ালিটি প্রদর্শন না করতে পারায় পদ বঞ্চিত।

গত পর্বটা লিখার পর আমার দুই একজন কোর্সমেট আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করল আমি জিয়াকে ভুল বুঝেছি। জিয়া কখনই তোর আর বোরহানের কল রেকর্ড নিয়ে জেনারেল তারেক সিদ্দিকীর কাছে যায় নি। বোরহান তো এটা জানেইনা। সব শুনে আমি বলি, বোরহান দেশে ব্যবসা বাণিজ্য করে রুটিরুজির ব্যবস্থা করে। তোরা তাকে যা’ই বলতে বলবি সে তো এখন তা’ই বলবে। আমি বল্লাম, দেখ জিয়া সেই রেকর্ড নিয়ে জেনারেল তারেকের কাছে যাওয়ার পর আমার তৎকালীন অধিনায়ক কর্নেল হামিদ স্যারকে জেনারেল তারেক ডেকে সেই রেকর্ড শোনায়। স্যার আমাকে ডেকে বিস্তারিত বলেছেন। এখানে সন্দেহের কোন অবকাশই নাই।

বন্ধু: তুই তো সব মানুষের কথা শুনে লাফাইতেছিস, দোস্ত
আমি: তোর মনে হয় হামিদ স্যার আমাকে মিথ্যা বলছেন?
বন্ধু: আমি জিয়ার কথাটা বিশ্বাস করব
আমি: ইট’স ইওর চয়েস। হাউএভার, ডোন্ট পুশ মি টু বিলিভ ইয়োর্স।
পরবর্তী কনভারসেশন:
: তোর পেনশন জিয়া কেমনে বন্ধ করবো ক! আমি তার সাথী কথা বলেছি জিয়ার সামনে (এখানে ‘তার’ মানে হলো, যে কোর্সমেট আমার পেনশন কোন এক্সপ্লেনেশন ছাড়া তুলতে অস্বীকার করেছিল)।

সে বলেছে তুই পিএনজি ছিলি তাই সে ভেবেছে তোর পেনশন তুলে তোর সাথে যোগাযোগ রাখাটা ঠিক হবেনা।

আমি: সে যখন আমার পেনশন তুলতে অস্বীকার করে তার আগের দিন জিয়া আমাকে লে: কর্নেল তৌহিদ স্যারকে নিয়ে লিখালিখি বন্ধ করতে বলে। উল্লেখ্য যে এর ছয় মাস পরে আমার পিএনজির চিঠি প্রকাশিত হয়।

এরপর আমার শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু দূর্বল যুক্তি দিয়ে জিয়ার পক্ষে বা জিয়া এই পেনশন বন্ধের জন্য চাপ দেয়নি বোঝানোর চেষ্টা করে। যাহোক এই পর্যায়ে আমি বুঝতে পারলাম যে, আই এম উইথ রং ক্রাউড! ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে যখন সেই বন্ধু আমার পেনশন তুলতে পারবেনা বলে জানায় তখন আমি আমাদের ২৪ লং কোর্স ফেইসবুক গ্রুপে জিয়ার নাম উল্লেখ করে আমার পেনশন বন্ধের ঘটনাটি লিখে তাদের সাহায্য চাই। দুইদিন অতিবাহিত হবার পরও আমার কোন বন্ধু সেই গ্রুপে এই অন্যায়ের প্রতিবাদ তো দূরে থাক কেউ টু শব্দটি করেনি। আমার পোস্টটা যেন কেউ দেখেইনি।

দুইদিন পরে আমি লিখলাম, ‘২৮ বছর চাকুরীর পরে পেনশন পাওয়া আমার ন্যায্য অধিকার আর সেই অধিকার রক্ষার জন্য তোরা কেউ আমার পাশে দাঁড়ালিনা! এমন বন্ধুদের আমার প্রয়োজন নেই!’

বন্ধু নামধারী ক্ষমতাবলয়ের পদলেহনকারী অথবা ব্যক্তিস্বার্থের জন্য নিশ্চুপ হয়ে থাকা কোর্সমেটদের সেই আমি গ্রুপ ত্যাগ করি।

‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলোরে’।

সত্য সমাগত। মিথ্যা বিতাড়িত

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে হটাৎই নিজের বাড়ির সামনে থেকে গুম হয়ে যান ইলিয়াস আলী। আর সেই থেকে ১১ টি বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো তার মেলেনি কোনো হদিস। পরিবার থেকে সরকারের কাছে বার বার আহব্বান জানানো হচ্ছে তাকে খোঁজার বিষয়ে। কিন্তু মেলেনি কোনো ধরণের সদুত্তর।

About Rasel Khalifa

Check Also

আগামীকাল ঢাকায় বড় কিছু ঘটানোর পরিকল্পনা, আপাতত যানবাহন তল্লাসি করুন: ইলিয়াস হোসেন

আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার উদ্দেশ্যে কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন, যারা সংখ্যালঘু হিন্দুদের মধ্যে রয়েছে, পরিকল্পিতভাবে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *