ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী মহাসমাবেশ আয়োজনে বিরোধী দলের সঙ্গে পরিকল্পনার যে মন্তব্য রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা করেছেন তা বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘ”র্ষিক বলে দাবি করেছে বিএনপি। শনিবার (২৫ নভেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন।
রাশিয়ার মন্তব্যের সমালোচনা করে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “২২শে নভেম্বর, ২০২৩ তারিখে, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক (এফএমএ) মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা তার এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করার টুইটটি বাংলাদেশের জনগণ এবং বিএনপির কাছে দৃশ্যমান হয়েছে। এই টুইটে তিনি (মারিয়া জাখারোভা) বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী মহাসমাবেশ আয়োজনে বিরোধী দলের সঙ্গে পরিকল্পনার অভিযোগ তুলেছেন।
এর মাধ্যমে তিনি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগও তোলেন। গত ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে এ খবর প্রকাশিত হয়। ঢাকায় রাশিয়ান দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেও মিস জাখারোভার বক্তব্য পোস্ট করা হয়। ‘
মারিয়া জাখারোভার মন্তব্য স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা ও অবস্থানের পরিপন্থী উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘বিএনপি এই মিথ্যা তথ্য ও অপব্যাখ্যার সঙ্গে একমত নয়। ‘
২০১৪ ও ২০১৮ সালের প্রহসনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে, ভোট ডাকাতির অভিনব সব পন্থা অবলম্বন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কলঙ্কিত ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ‘
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনার অধীনে অতীত নির্বাচনের অভিজ্ঞতা, চলমান সর্বগ্রাসী মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিগুলো একটি সর্বজনীন সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। আমরা সবাই বিশ্বাস করি, অবৈধ ও অনির্বাচিত বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ফ্যাসিস্ট সরকারকে রাষ্ট্রক্ষমতায় রেখে, বাংলাদেশে কোনো অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। ’
তিনি আরও বলেন, তাই বিএনপি সকল গণতন্ত্রপন্থী রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একযোগে আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের লুণ্ঠিত ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। নির্দলীয় সরকার ও নিরপেক্ষ প্রশাসনের অধীনে আন্তর্জাতিক মানের একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দাবিতে দেশের জনগণ আজ রাজপথে নেমেছে, আমাদের আন্দোলনকে গতি দিয়েছে। ‘
বিএনপির এই নেতা বলেন, “বিএনপির শান্তিপূর্ণ ও অহিংস কর্মসূচিতে জনগণের অটুট নৈতিক সমর্থন রয়েছে। আওয়ামী অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ আজ প্রমাণ করেছে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ মোকাবেলা করে অনিবার্য সাফল্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যৌথ হামলা ও দলীয় সন্ত্রা”সে নিমজ্জিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি চিহ্নিত অংশ ধ্বংস করছে।’
তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহর এবং সারাদেশে আমাদের সব কর্মসূচিতে ধারাবাহিকভাবে ব্যাপক উপস্থিতি ও ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে সরকারের বহুমাত্রিক প্রতিকূলতা ও প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে প্রতিটি সমাবেশে লাখ লাখ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছে। একটি রাজনৈতিক দলের ডাকে বাংলাদেশের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের এই বিপুল উপস্থিতি ইতিহাসে নজিরবিহীন। ‘
বিএনপির সমাবেশ আয়োজনে কোনো বিদেশি কূটনীতিক সহায়তা করেছেন, এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত অভিযোগ এর আগে হয়নি দাবি করে রিজভী বলেন, ‘এ ধরনের বাস্তবতা-বিবর্জিত বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আকাঙ্ক্ষার বিরোধী বলে প্রতীয়মান। কার্যত, মিস জাখারোভার দৃষ্টিভঙ্গি গণতন্ত্রকামী জনগণের স্পৃহাকে অবমূল্যায়নের মাধ্যমে দুর্নীতিগ্রস্ত আওয়ামী লীগ সরকারের ফ্যাসিস্ট শাসনব্যবস্থাকেই সমর্থন করে। ’
মারিয়া জাখারোভার মন্তব্য গণতন্ত্রপ্রেমী বাংলাদেশীদের অনুভূতিতে আঘাত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অবশ্যই রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্য গণতন্ত্রপ্রেমী বাংলাদেশীদের অনুভূতিতে আঘাত করেছে। অধিকার ও স্বাধীনতা হারিয়ে আজ আওয়ামী বৃত্তের বাইরের সবাই নিজ দেশে পরাধীন। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের দমন-পীড়নে যাদের স্বজনরা শহীদ হয়েছেন, হাজার হাজার পরিবার এখনো শোকাহত। আজও লাখ লাখ মানুষ গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাজপথে আন্দোলন করছে। ‘
রিজভী আরও বলেন, ‘ইতিহাসের এই সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের জনগণ কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর ইতিবাচক সমর্থনকে, যার উদ্দেশ্য গণতন্ত্র, সুশাসন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা। দেশের মানুষ এও প্রত্যাশা করে যে, গণআকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে গিয়ে অন্য কোনো রাষ্ট্র, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের জনবিচ্ছিন্ন ও গণবিরোধী অপশাসনকে অযাচিত সমর্থন করবে না। ’
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ও রাশিয়া পারস্পরিক বাণিজ্য ও অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক স্বার্থে দীর্ঘদিনের বন্ধু। আমরা মুক্তিযুদ্ধে রাশিয়ার অবদানকে গভীরভাবে স্বীকার করি এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের মূল্যায়ন করি। আমাদের প্রত্যাশা, রাশিয়া বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, স্বাধীনতার সংকল্প ও মহান আত্মসত্যাগের উপযুক্ত সম্মান করবে। ’
তিনি বলেন, আমরা আশা করি, জনগণের ভোটাধিকার, মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধারের চলমান সংগ্রামে রাশিয়ার সমর্থন ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশকে উৎসাহিত করবে। আর তাই বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণতন্ত্রকামী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি রাশিয়া ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে বিএনপি বিশ্বাস করে বলে বিবৃতিতে রিজভী বলেন।