সম্প্রতি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের ৭ উচ্চপদস্থ প্রশাসন কর্মকর্তাদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে করে বেশ অস্তিতিশীল পরিবেশের মধ্যে পতিত হয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি দেশ জুড়ে এই নিয়ে চলছে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনা। যুক্তরাষ্ট্রকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। এমনকি বাংলাদেশের কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে বেশ কিছু কথা জানালেন।
যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, আপনারা বাংলাদেশের র্যাব ও কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এ নিষেধাজ্ঞা উন্নয়নশীল দেশের পা টেনে ধরার মতো। এটা অন্যায়, ভিত্তিহীন। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা কোনো মানবতা বা হিউম্যান রাইটস লঙ্ঘন করিনি। আইনের ভিত্তিতেই দেশ পরিচালিত হচ্ছে। র্যাব দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে জ/ঙ্গি, ধর্মীয় স/ন্ত্রা/সী/দের দমনে যে সফলতা দেখিয়েছে এটা সারা পৃথিবীতে একটা উদাহরণ। ধর্মান্ধ বা স/ন্ত্রা/সী/রা সারা পৃথিবীতে বিস্তার করেছে, বাংলাদেশকেও ধর্মীয় রাষ্ট্র করার জন্য চেষ্টা করেছে। এসব ধর্মীয় স/ন্ত্রা/সী/কে আমরা যেভাবে সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছি, তা সারা পৃথিবীতে প্রশংসিত হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে শনিবার বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি পরিষদের বিশেষ সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী একথা বলেন। বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. ফজলে আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সাবেক রাষ্ট্রদূত নীম চন্দ্র ভৌমিক, বিশিষ্ট সাংবাদিক বাসুদেব ধর ও সংগঠনটির বিভিন্ন স্তরের নেতারা বক্তব্য দেন।
সভায় অধ্যাপক মো. ফজলে আলীকে চেয়ারপারসন, সাংবাদিক বাসুদেব ধরকে নির্বাহী চেয়ারপারসন ও মমতাজ চৌধুরীকে মহাসচিব করে ৫ বছরের জন্য ৭১ সদস্যের নতুন কেন্দ্রীয় কার্যকর পরিষদ গঠন করা হয়। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বিরাজমান সম্প্রীতি রক্ষায় সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি নষ্টে এখনও সক্রিয় ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ও সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কের ভিত্তি রক্তের। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এ দেশের মানুষ রক্ত দিয়েছেন, তেমনি ভারতের অনেক মানুষও রক্ত দিয়েছেন। অন্যদিকে ভাষা, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক, অর্থনৈতিকসহ নানা কারণে প্রতিবেশী দেশ হিসাবে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম, আফগানিস্তানেও ভুল করেছে। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিয়েছে, এটি কোনোভাবেই সঠিক হয়নি। এতে বাংলাদেশের ক্ষতি হবে। একটা দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, আপনার পা টেনে ধরছেন। আমি যুক্তরাষ্ট্রকে রিভিউ করে অতি তাড়াতাড়ি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ করছি। কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ, যেখানে জনগণের নির্বাচিত সরকার রয়েছে। নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা ক্ষমতায় এসেছি ও সংবিধানের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করছি। আমরা মানবতার কোনো কিছু লঙ্ঘন করিনি। বিএনপিসহ কোনো বিরোধী নেতাকর্মীকেই দেশে বিচারবহির্ভূতভাবে হ/ত্যা করা হয়নি। যু/দ্ধা/প/রা/ধীদের সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী ফাঁ/সি ও জে/ল দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ছোট একটি দেশে এতগুলো টিভি, পত্র-পত্রিকা ও অনলাইন পত্রিকা রয়েছে যা পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। সারা দিন যে যা বলছে নিউজে আসছে। বাকস্বাধীনতা রয়েছে। কোথায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, এটা আমার বোধগম্য নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি বিশ্বের গনতান্ত্রিক দেশের সরকার প্রধানদের নিয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। তবে এই সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আমন্ত্রন পেলেও বাংলাদেশ এই সম্মেলনে আমন্ত্রন পায়নি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের গনতন্ত্রও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। শুধু তাই নয় দেশের বিভিন্ন শ্রেনীর বিভিন্ন পেশার মানুষ ও সুশীল সমাজের অনেকেই নানা প্রশ্ন তুলেছে। এরই মধ্যে আবার ৭ উচ্চপদস্থ প্রশাসন কর্মকর্তাদের প্রতি নিষেধাজ্ঞা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এক সংকটে পড়েছে।