পাসপোর্ট-বোর্ডিং পাস ছাড়াই রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি বিমানে ওঠে পড়ে জোনায়েদ মোল্লা (১২) নামের এক শিশু। সে বিমানের ভেতরে করিডোরে হাঁটাচলা করছিল। এ সময় কেবিন ক্রু তাকে সিটে বসার কথা বলেন। তারপর একটা আসনে বসে জোনায়েদ।
একপর্যায়ে পাশের সিটের যাত্রী তাকে তার বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে বসতে বলেন। কিন্তু জোনায়েদ তার বাবা-মা সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি। পরে দেখা যায় সে ওই ফ্লাইটের যাত্রী নয়।
গত সোমবার দিবাগত (১১ সেপ্টেম্বর) রাত ৩টা ১০ মিনিটে ঢাকা থেকে কুয়েতগামী কুয়েত এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট (কেইউ-২৮৪) পাসপোর্ট ও বোর্ডিং পাস ছাড়াই বিমানে উঠে পড়ে জোনায়েদ মোল্লা। পরে তাকে নামিয়ে বিমানবন্দর থানার হেফাজতে রাখা হয়।
জোনায়েদ মোল্লা গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারিহাটি গ্রামের ইমরান মোল্লার ছেলে। এ ঘটনায় উপজেলায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শি”শুটিকে এক নজর দেখার জন্য বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন মানুষজন।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের পারিহাটি গ্রামের বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে জোনায়েদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িতে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছে। জোনায়েদকে দেখতে আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের লোকজন এসেছে। এ সময় দোচালা টিনশেডের ঘর থেকে পুরোনো একটি গেঞ্জি ও পাজামা পরে বের হয় জোনায়েদ। জোনায়েদের পরনের কাপড় দেখে মনে হচ্ছিল সে মাদ্রাসার ছাত্র। পরে জিজ্ঞাসা করলে জানা যায়- সে আগে মাদ্রাসার ছাত্র ছিল। পরে তার বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কেউ কথা বলতে রাজি হননি। এ সময় বাড়ির পাশ থেকে হেঁটে জুনায়েদদের বাড়িতে আসে তার চাচা ইউসুফ মোল্লা। এ সময় কথা হয় তার সঙ্গে।
শিশুটির চাচা ইউসুফ মোল্লা বলেন, “আমার ভাতিজা জোনায়েদ মোল্লা ছোটবেলা থেকেই খুব দুরন্ত। তাকে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়। বারবার সেখান থেকে পালিয়ে আসায় তাকে মাদ্রাসা থেকে এনে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় আবার একা ফিরে আসে। এক সপ্তাহ আগে সে বাড়ি থেকে পালিয়েছিল। পরে আমরা তাকে খুঁজে পাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি সে সেখান থেকেও পালিয়ে গেছে। বিমানে উঠে পড়ার ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। বিমানবন্দর থানা থেকে আমাদের ফোন করা হলে তাকে বিমানবন্দর থানা থেকে গতকাল রাতে নিয়ে আসছি। বর্তমানে সে আমাদের বাড়িতেই আছে।
শিশু জোনায়েদ মোল্লার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তারক্ষীদের চোখ এড়িয়ে বিমানে উঠেছি। শখের বসে প্লেনে উঠে পড়ছিলাম। প্লেনে উঠার পর আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এজন্য ভেতরে হাঁটাচলা করেছিলাম।
“আপনি কি জানেন বিমানে উঠতে বোর্ডিং পাস, পাসপোর্ট এবং ভিসা লাগে?” জোনায়েদ বললো, আমি এসবের কিছুই জানি না। এর আগে কখনো বিমানকে কাছ থেকে দেখেনি। ওইখানে (এয়ারপোর্ট) গিয়ে ভিতরে ঢোকার পর প্লেন দেখতে পেয়ে হাঁটতে হাঁটতে প্লেনের কাছে গিয়ে উঠে পড়ি।
বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক মিয়া জানান, শি”শুটি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। তার বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলায়। তার অভিভাবককে খবর দেওয়া হয়। পরে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে শিশুটির চাচা ইউসুফ মোল্লার কাছে হস্তান্তর করা হয়।
মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, এয়ারপোর্ট থানা থেকে আমাদের থানায় ফোন করা হলে আমরা তার খোঁজ খবর নিয়ে পরিবারকে খবর দেই। খবর পেয়ে বিমানবন্দর থানা থেকে তাকে নিয়ে আসে তারা। শিশুটি বর্তমানে বাড়িতে রয়েছে।