পালিয়ে যাওয়া আ.লীগের মন্ত্রী-এমপিদের দেখা মিলল লন্ডনে

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চাপে গত ৫ আগস্ট ভারতের দিকে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। তার সঙ্গেই আত্মগোপনে চলে যান দলটির বেশ কিছু নেতা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা। এতদিন তাদের অবস্থান অজানা থাকলেও, সম্প্রতি তাদের কয়েকজনকে লন্ডনে দেখা গেছে।

৮ ডিসেম্বর, রোববার বিকেলে লন্ডনের ইস্ট লন্ডনের ইম্প্রেসন ভেন্যুতে একটি ভার্চুয়াল সমাবেশে অংশ নেন শেখ হাসিনা। এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের একাধিক সাবেক মন্ত্রী, এমপি এবং এক সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

প্রকাশ্যে দেখা মেলে সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান, সাবেক প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের।

আব্দুর রহমান ছিলেন ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য, শফিকুর রহমান চৌধুরী সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি, এবং হাবিবুর রহমান হাবিব ছিলেন সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ার আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রসঙ্গত, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার আগে অন্তত ১,৫৮১ জন নিহত এবং প্রায় ৩১ হাজার মানুষ আহত হয়েছিলেন। আহতদের মধ্যে অনেকেই স্থায়ীভাবে হাত, পা, বা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। এই আন্দোলনের মধ্যেই শেখ হাসিনা এবং তার দলের অনেক নেতা আত্মগোপনে চলে যান। তবে, লন্ডনে তাদের উপস্থিতি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।


হাসিনার কাছে যে বার্তা পৌঁছে দিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবকে জানালেন অন্তর্বর্তী সরকার

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং ভারতে বসে দেওয়া বক্তব্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই অসন্তোষের বার্তা ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রির মাধ্যমে শেখ হাসিনার কাছে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন।

বাংলাদেশ ও ভারতের ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) এই বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। এ প্রসঙ্গে মো. জসীম উদ্দিন বলেন, “ভারতে অবস্থানরত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আমাদের পছন্দ নয়। আমরা ভারতের পররাষ্ট্র সচিবকে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি নোট নিয়েছেন এবং বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।”

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সংক্ষিপ্ত সফরে সোমবার সকালে ঢাকায় আসেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠিত এফওসিতে দুই দেশের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন এবং ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিক্রম মিশ্রি। দুই সচিবের আলোচনা প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলে।

বৈঠকে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যক্রমের প্রভাব নিয়ে আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “ভারতে অবস্থান করে তিনি (শেখ হাসিনা) যে বক্তব্য রাখছেন, সেটি এই সরকার পছন্দ করছে না। আমরা বিষয়টি তাদের (ভারতের) কাছে উত্থাপন করেছি এবং জানিয়েছি, তার বক্তব্য দুই দেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে, তার বক্তব্য আমাদের জন্য গ্রহণযোগ্য নয়।”

ভারতের পররাষ্ট্র সচিব মিশ্রি বাংলাদেশের বার্তা গ্রহণ করেছেন এবং বিষয়টি যথাযথভাবে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন।