লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুলিতে মেধাবী ছাত্র সাদ আল আফনান হত্যার ঘটনায় মামলা করার পর থেকে হুমকির মুখে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তার মা ও বোন। গত ১৪ আগস্ট রাতে আফনানের মা নাছিমা আক্তার বাদী হয়ে ৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫০০-৭০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে সন্ত্রাসীদের হুমকিতে পড়েন তারা। নিরাপত্তাহীনতার কারণে ঘরে তালা দিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন। সরেজমিন শহরের বাস টার্মিনাল এলাকার আরমান মিজি মসজিদ বাড়িতে আফনানের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, তাদের বসতঘরের দরজায় তালা ঝুলছে। প্রতিবেশীরা জানান, সন্ত্রাসীদের ভয়ে বাড়িছাড়া আফনানের মা ও একমাত্র বোন।
পরে আন্দোলনরত অন্যদের সহযোগিতায় প্রায় এক ঘণ্টা পর গোপন আশ্রিত জায়গা থেকে বাড়িতে আসেন মা ও বোন। এ সময় আফনানের সহপাঠীদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। আফনানের মা নাছিমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘তিন মাস আগে আমার স্বামী সালেহ আহমদ বিদেশে মারা গেছেন। সেই শোক সইতে না সইতে আমার ছেলেকে হারালাম। তারা (সন্ত্রাসীরা) আমার মেধাবী ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। আমরা মামলা করেছি। এখন বিভিন্ন ফোন থেকে আমাদের আত্মীয়-স্বজনদের হুমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নিতে। এমন পরিস্থিতিতে কার কাছে যাব আমরা!’
মা সরকারের কাছে আফনানের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দাবি করেন। তাদের আর দেখার আর কেউ নেই বলে অচেতন হয়ে পড়েন তিনি।। আফনানের বোন জান্নাতুল মাওয়া তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলেন, আদরের ভাইকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। তিন মাসের ব্যবধানে বাবা ও ভাইকে হারিয়ে তিনি এখন শোকের মধ্যে রয়েছেন। স্মৃতি রয়ে গেছে একটি সাইকেল।। তিনি তার ভাই হত্যার কঠোর বিচার দাবি করেন। সহপাঠীরাও একই দাবি করেছেন। লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন আফনান।
সেদিনের ঘটনার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়ে সহপাঠীরা জানান, বন্ধুদের সঙ্গে প্রাইভেট পড়ার সময় আফনান কাঁধে বইয়ের ব্যাগ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নামেন। অতর্কিত হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মীরা।সহপাঠী এক শিক্ষার্থীকে (ছাত্রী) বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয় আফনান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী আরমান হোসেন, বায়েজীদসহ অন্যারা বলেন, ‘৪ আগস্ট মাদাম ব্রিজে আমাদের এক নারী সহযোদ্ধাকে বাঁচাতে গিয়ে আফনান গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে বেধড়ক পেটায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মেধাবী শিক্ষার্থী সাদ আল আফনান হত্যার বিচার দাবি করে সহপাঠী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান। এ ছাড়া লক্ষ্মীপুর উত্তর তেমুহনী চত্বরকে ‘আফনান চত্ত্বর’ হিসেবে ঘোষণা করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানান। লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, ‘আফনান হত্যার ঘটনায় তার মা নাছিমা আক্তার বাদি হয়ে হত্যা মামলা করেন। তবে বাদিকে হুমকির ঘটনা বা পালিয়ে বেড়ানোর বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি।’