Saturday , September 21 2024
Breaking News
Home / Countrywide / পাপলু গেল, হাজী সাহেবও যাবে নাকি, পদ নিয়ে শুরু হয়েছে টানা টানি

পাপলু গেল, হাজী সাহেবও যাবে নাকি, পদ নিয়ে শুরু হয়েছে টানা টানি

হাজী সেলিমের আত্মসমর্পণ ও কারাগারে অবস্থান করা নিয়ে অনেক নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র পতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তিনি সুধু রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যেই নয় সমালোচিত হচ্ছে সাধারণ মানুষের থেকেও। চায়ের আড্ডায়ও তাকে নিয়ে মানুষের কুরুচি পূর্ণ সমালোচনা লক্ষ্য করা যায়। দুর্নীতির মামলায়  তকে ১০ বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত।  এখন তিনি কারাগারে অবস্থান করছেন।

গত রোববার ২২ মে ( May ) দুপুরে  তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। তবে এক রাত ( Night ) কারাগারে কাটানোর পর তিনি এখন কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে ( Bangabandhu Medical College ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তিনি কারাগারে যাওয়ার পর থেকে সংসদ সদস্য থাকবেন কি না তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। কেউ বলছেন তিনি এমপি থাকবেন, আবার কেউ বলছেন তিনি থাকবেন না। কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের ( Kazi Shahid Islam Papul ) পদ হারানোর বিষয়টি আলোচনার টেবিলে টেনে নিচ্ছেন অনেকে। কারণ, কুয়েতের ( Kuwait ) আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে তার সদস্যপদ বাতিল করে দেন স্পিকার।

আইন অনুযায়ী, ফৌজদারি অপরাধে কোনো ব্যক্তির দুই বছরের বেশি কারাদণ্ড হলে তিনি আর সংসদ সদস্য পদের যোগ্য নন। হাইকোর্টের ( High Court ) একজন সিনিয়র আইনজীবী বলেন, আগে দেখা যাক আইন কী বলে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে কোনো ব্যক্তিকে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলে, মুক্তির পর তিনি আর পাঁচ বছর সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য নন। একজন ব্যক্তি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য হবেন না যদি- (ক) তিনি একটি উপযুক্ত আদালত কর্তৃক অপ্রাকৃতিক ঘোষণা করেন (খ) দেউলিয়া ঘোষণার পর তাকে দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় না (গ) যদি তিনি একজন বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিক একজন বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য অর্জন বা ঘোষণা করে

কোনো সংসদ সদস্য গ্রেফতার, আটক বা কারারুদ্ধ বা মুক্তি পেলে সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে স্পিকারকে জানাতে হবে। জানার পর সংসদকে অবহিত করেন স্পিকার ড.

তবে রোববার পর্যন্ত সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষ হাজী সেলিমের রায়ের বিষয়ে সংসদকে অবহিত করেননি বলে জানা গেছে। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা রায়ের বিষয়ে সরকারি কিছু জানি না। সেটা জানাজানি হলে পরবর্তী আলোচনার বিষয় উঠে আসবে।

সংসদ সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, হাজী সেলিমের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি। তিনি আপিল করতে পারেন। উচ্চ আদালতে জামিন চাইতে পারেন। তাদের নিষ্পত্তি হওয়ার আগে সদস্যপদ সম্পর্কে কিছু বলার সময় আসেনি।

হাজী সেলিম সংসদ সদস্য দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান এর আগে বলেছিলেন, সংবিধানের ৬ (ডি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নৈতিক স্খলনের কারণে কোনো ব্যক্তির দুই বছর বা তার বেশি সাজা হলে তিনি সংসদ সদস্য হতে অযোগ্য হবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যেহেতু তিনি দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, এটা তার নৈতিক স্খলন। এ কারণে তিনি সাংবিধানিকভাবে সংসদ সদস্য হওয়ার অধিকার হারিয়েছেন। তার এমপি পদ বাদ দেওয়া হবে। তবে বিষয়টি স্পিকার সিদ্ধান্ত নেবেন। তাই হাইকোর্টের রায় পাওয়ার পর তা দুদকের মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে।

এদিকে হাজী সেলিমের এ ঘটনায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের নামও আলোচনায় এসেছে। কারণ, কুয়েতের আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে তার সদস্যপদ বাতিল করে পার্লামেন্ট। পাপুলকে ২০২০ সালের জুন মাসে কুয়েতে অর্থ ও মানব পাচার ও ঘুষের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। বিচারের পর গত বছরের ২৬ জানুয়ারি কুয়েতের একটি আদালত তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দেয়। পরে ওই দিনই তার সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়।

সোমবার (২৩ মে) বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় এলাকায় সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা চা পান করার সময় বর্তমান রাজনীতির প্রসঙ্গ তুলে আনছেন হাজী সেলিম। মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা তার বাকি সহকর্মীদের বলছিলেন, পাপলু চলে গেছে, হাজী সাহেবও যাবেন। পাশের আরেক নেতা বলেন, কোন পথে যাবেন বোঝা যাচ্ছে না।… পরিচয় প্রসঙ্গে উপস্থিত নেতারা বলেন, রাজনীতিতে চড়াই-উতরাই থাকে। আমি এখানে প্রকাশ্যে মন্তব্য করব না ভাই। সরকারের জমি সংক্রান্ত আইন আছে। দলীয় ফোরামে দলীয় অবস্থান ঠিক করা যাবে, আদালতের বিষয়ে সিনিয়র নেতাদের বিষয়ে কিছু বলব না। পরে নেতা-কর্মীরা আলোচনা ভেঙে নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি যৌথভাবে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। সমাবেশ শেষে প্রেসক্লাবের ভেতরে কয়েকজন নেতাকর্মী ঝুলে পড়েন। এক পর্যায়ে একজন জানতে চায় হাজী সেলিমের মামলা কোন দিকে যাচ্ছে। উপস্থিত আরেক নেতা বলেন, ভেতরে কী চলছে তা পরিষ্কার নয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের এক কর্মী জানতে চান, তিনি ভিআইপি আছেন বলে শুনেছি। উত্তরে উপস্থিত এই নেতা বলেন, কারাগার আর বাড়ি তাদের কাছে একই জিনিস। তিনি কিনা সেটাই দেখার বিষয়।

ঢাকা-৮ আসনে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন হাজী সেলিম। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যও। তিনি ১৯৯৬ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। পরের বার তিনি বিএনপির নাসিরউদ্দিন পিন্টুর কাছে হেরে যান।

যদিও তিনি ২০১৪ এবং 201৮ সালে এমপি হিসাবে পুনঃনির্বাচিত হন, তবে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় দুর্নীতির অভিযোগের কারণে তিনি 2008 সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। আপিল বিভাগ পুনঃবিচারের আদেশের পর হাজী সেলিম, যার রায় পরিবর্তন করা হয়েছিল, হাইকোর্টে মামলাটি খারিজ হওয়ার পর সমস্যায় পড়েছিলেন।

২০০৭ সালের ২৪শে অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশন মামলাটি দায়ের করে। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জরুরি অবস্থার পরের বছরের ২৭ এপ্রিল আদালত রায় দেন। হাজী সেলিমকে দুটি ধারায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অবৈধ সম্পদ অর্জনের জন্য ১০ বছর এবং সম্পদ গোপন করার জন্য তিন বছরের কারাদণ্ড। তার স্ত্রী গুলশান আরা বেগমকেও সহায়তা ও মদত দেওয়ার দায়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রায়ের বিরুদ্ধে হাজী সেলিম ও তার স্ত্রী হাইকোর্টে আপিল করেন এবং ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট তাদের সাজা বাতিল করেন। এরপর সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে দুদক। আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে আপিল বিভাগ হাজী সেলিমের আপিল হাইকোর্টে পুনরায় শুনানির নির্দেশ দেন। সেই শুনানির পর গত বছরের ৯ মার্চ হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি ধারায় হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রাখলেও অন্য ধারায় তিন বছরের সাজা থেকে অব্যাহতি দেন। গুলশান আরা মারা যাওয়ায় তার আপিল খারিজ হয়ে যায়।

বেঞ্চের দুই বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের স্বাক্ষরের পর ৮ পৃষ্ঠার রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে হাজী সেলিমকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। হাজী সেলিমের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা জানান, সুপ্রিম কোর্টে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাজী সেলিম সংসদ সদস্য থাকবেন।

এখনো পর্যন্ত হাজী সেলিমকে সংসদ সদস্য থেকে অবাহতি দেওয়া হয়নি। তিনি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। সে যথা সময়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে পরলে আবারো সংসদ সদস্য হিসেবে দ্বায়ীত্ব পালন করতে পরবেন।

About Nasimul Islam

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *