শীতকাল মানেই হাওয়া বদলের অন্যতম একটি সময়। প্রায় প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজারও পর্যাটকরা হাওয়া বদলের উদ্দেশ্যে দল বেধে ঘুরতে যান নানা মনোমুগ্ধকর স্থানে। তবে ঘুরতে গিয়ে অনেক সময় নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে অনেককে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি আবারও এমনটি একটি ঘটনা ঘটেছে।
জানা যায়, বান্দরবান থেকে নৌকাতে করে সাঙ্গু নদীপথে বেতছড়ায় বেড়াতে আসেন ১০ পর্যটক। এরপর শখের বসে তারাছার বাধরা ঝর্ণার পাশে সাঙ্গু নদীতে গোসল করতে নেমে স্রোতে ভেসে যান তারা।
এ ঘটনায় দুই ভাইবোন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) ৩টার দিকে ওই নদীতে গোসল করতে নেমেছিলেন তারা। তাদের সঙ্গে ছিল আরও ৬ পর্যটক। একসঙ্গেই নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে বান্দরবনে ঘুরতে এসেছিলেন তারা। গোসল করতে নামার পর নদীর স্রোতে ভেসে যান তারা সবাই। ছয় জনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করলেও এখন সন্ধান মেলেনি দুই ভাইবোনের। নিখোঁজ দুজন হলেন- মো. আহনাফ আকিব (২২) ও আদনিন (১৬)। এদিকে, উদ্ধার ছয় জনের একজন হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা গেছে। তার নাম- মারিয়া ইসলাম।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বান্দরবান থেকে ১০ পর্যটক নৌকাতে করে সাঙ্গু নদীপথে বেতছড়ায় বেড়াতে আসেন। এ সময় বেতছড়ার বাধরা ঝর্ণার পাশে নদীতে গোসল করতে নামলে ওই আট জনই নদীর স্রোতে ভেসে যায়। হাসপাতালে আনার পথে এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। দুজন নিখোঁজ রয়েছেন। ঘটনার পরপরই পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা নিখোঁজ ভাইবোনের উদ্ধারে কাজ শুরু করে। দুর্গম এলাকা ও পানি অত্যধিক ঠান্ডা হওয়ায় রাত ৮টার পর উদ্ধার কাজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এদিকে সন্তানদের নিখোঁজের খবরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে ছুটে যান মা সাইদা শিউলী ও মামা শামীম। উদ্ধারকাজ বন্ধ করে উদ্ধারকর্মীরা চলে গেলেও ঘটনাস্থল নদীর পাড়ে বসে আছেন তিনি। অপেক্ষায় আছেন দুই সন্তানকে ফিরে পাওয়ার।
হোটেল দ্য প্যারাডাইসের ম্যানেজার চম্পক চক্রবর্তী বলেন, ‘১০ পর্যটক বুধবার সকালে হোটেলে অবস্থান নেয়। তারা দুদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছেন। আজ রাতের বাসে তাদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল। এরই মধ্যে একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। বিষয়টি আসলেই মর্মান্তিক।
এদিকে এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কর্মী প্রদীপ ত্রিপুরার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, নদীর পানি ঠান্ডা হওয়ার ফলে উদ্ধার কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে আজ শনিবার থেকে আবারও উদ্ধার কাজ শুরু হবে বলেও নিশ্চিত করেছেন তিনি।
এদিকে এখনও ঐ দুই পর্যাটকের কোনো খোঁজ না পেয়ে রীতিমতো হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন তাদের পরিবার-পরিজন। সর্বদা তাদের অপেক্ষায় রাতা পার করছেন তারা।