বাংলাদেশে নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে ২০২৩ এ। আর এই শিক্ষা বর্ষের নতুন বই নিয়ে সারা দেশে শুরু হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা আর সমালোচনা। আর এর একমাত্র কারন হলো পাঠ বইয়ের ভুল। এবার এ নিয়ে কথা বলেছেন দেশের বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী।শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, পাঠ্যবই নিয়ে একটি মহল মিথ্যাচার করছে। তিনি বলেন, “স্বাধীনতাবিরোধীরা ষড়যন্ত্রের আর কোনো পথ খুঁজে না পেয়ে এখন পাঠ্যক্রমের ওপর হামলা করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঠ্যপুস্তক নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। কিন্তু পাঠ্যপুস্তকে ধর্ম বিরোধী কিছু নেই।
শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ আরেফিন নগরে অবস্থিত এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের স্থায়ী ক্যাম্পাসে এ সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন পাঠ্যপুস্তকে ইসলামবিরোধী কন্টেন্ট রয়েছে বলে একটি মহল ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। এটাও বলা হচ্ছে যে, ইসলাম সম্পর্কিত সব জিনিস সরিয়ে দিয়ে বিভিন্ন জিনিস আনা হয়েছে, এটা একেবারেই অসত্য। মূলত তিন বছর আগের ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি বইয়ের ছবি দিয়ে এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সেই বই এখন সেখানে চলে না। অশুভ শক্তি আমার ছবি লাগিয়েও নানাভাবে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। আপনারা সবাই তাদের চেনেন। তারা মিথ্যাচার করে শুধু দেশের শিক্ষাব্যবস্থাই ধ্বংস করতে চায় না, দেশের স্থিতিশীল পরিবেশও ধ্বংস করতে চায়।
পাঠ্যপুস্তকে যারা ভুল চিহ্নিত করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “নম-দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে কিছু ভুল চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই ভুলগুলোর মধ্যে একটি খুব বড় তথ্যগত ভুল, বঙ্গবন্ধুর শপথ নিয়ে। তবে মজার ব্যাপার হলো, ২০১৩ সাল থেকে প্রতিবছরের বইয়ে এই ভুল ছিল।কিন্তু কেউ দেখেনি।এ বছর ভুল ধরা পড়েছে কারণ শিক্ষার্থীরা খুব মনোযোগ দিয়ে বই পড়ে।শিক্ষা পরিবারের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানাই।পাঠ্যবইয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের এই মনোযোগ পাঠ্যপুস্তকের মান উন্নত করতে এবং সেগুলোকে আরও নির্ভুল করতে সাহায্য করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।’
কাগজের সংকটের কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “গত বছর কাগজ শিল্প বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়েছিল। ডলারের অবস্থার কারণে আমরা আমদানি পর্যন্ত করতে পারিনি। এরপরও সব শিল্পের সহযোগিতায় আমরা সক্ষম হয়েছি। ১ জানুয়ারি দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮০ শতাংশ বই পৌঁছে দেবে। বাকি বই এ মাসের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেব।
এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনকে উদ্দেশ্য করে দীপু মনি বলেন, ‘যে উদ্দেশ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল তা আজ অত্যন্ত সফল। এখানকার নারীরা সমাজ পরিবর্তন ও নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছেন। সমাবর্তনের মাধ্যমে যারা স্নাতক হয়েছেন তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফলতা পাবেন। আমাদের পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকরা এখান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আজ সফল উদ্যোক্তা হয়েছেন। তারা পোশাক শিল্পে প্রতিনিয়ত অবদান রাখছে।
অনুষ্ঠানে ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লার্স রাসমুসেন বলেন, “বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে নারী শিক্ষা বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বিশেষ করে আফগানিস্তান, ইরাক, মায়ানমারের মতো দেশে নারী শিক্ষা খুবই কঠিন। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন তাদের জন্য দারুণ সুযোগ তৈরি করেছে। নান্দনিক ও মনোরম পরিবেশে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস পড়াশোনায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।’
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রুবানা হক বলেন, “এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন বিগত বছরগুলোতে ব্যাপক অগ্রগতি সাধন করেছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন এখনো অব্যাহত রয়েছে। এখান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে দেশ-বিদেশের শিক্ষার্থীরা একটি চিহ্ন তৈরি করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাফল্য।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে প্রাক্তন ব্রিটিশ ফার্স্ট লেডি চেরি ব্লেয়ার, সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস জন সেক্সটন।
সমাবর্তনে ৬ জনকে এনডি মাতসুই পুরস্কার দেওয়া হয়। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা ১৮টি দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। মহামারীর কারণে গত তিন বছর কোনো সমাবর্তন হয়নি। এ কারণে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি ২০২০, ২০২১, ২০২২ সালে স্নাতক হওয়া তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর হাতে সনদ তুলে দেন।
প্রসঙ্গত, এ দিকে চলতি বছরের পাঠবইয়ের ভুল নিয়ে এখনো থামেনি সমালোচনা। সকলেই দাবি করছেন বই পরিবর্তনের।জানা গেছে এ নিয়ে ইতিমধ্যে নতুন একটি পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছে সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রনালয়।