সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষা পাঠ্যক্রম থেকে ধর্মীয় শিক্ষা বাদ দেওয়ার বিষয়ে একটি খবর ছড়িয়ে পড়ে। যেটা সঠিক ছিল না বরং ছিলো উদ্দেশ্য প্রণোদিত। অবশ্য সংসদে একজন সংসদ সদস্য দেওয়া বক্তব্যে অনেকটা এমন প্রসঙ্গ তোলা হয়েছিল। এরপর থেকেই এই খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবার এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি দেশের পাঠ্যক্রম থেকে ধর্মীয় শিক্ষাকে ‘বাদ দেওয়া’র খবর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা চলছে সেটাকে ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ধর্মীয় শিক্ষা তুলে দেওয়ার বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই।
একজন সংসদ সদস্যের সাম্প্রতিক বক্তৃতার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য, আমি তখন দেশে ছিলাম না। একজন সংসদ সদস্য আমাদের পাঠ্যবই নিয়ে সংসদে দাঁড়িয়ে কথা বলেছেন। পরে তিনি স্পিকারের কাছে একটি চিঠি লিখে জানান যে তার তথ্য ভুল এবং তার বক্তব্য বর্তমান বইয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তিনি এসব প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, আমরা যেখানেই থাকি না কেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলার সময় সবচেয়ে ভালো সঠিক তথ্য জেনে নিয়ে কথা বলা। এবং একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে আমাদের চাওয়াটাও অনেক বেশি। আমি তাকে অন্তত এতটুকু ধন্যবাদ জানাতে চাই যে তিনি পরে তথ্য যাচাই করার পর তার ভুল স্বীকার করে প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি একজন সংসদ সদস্য অভিযোগ করেছেন যে ইসলাম সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বিষয় পাঠ্যপুস্তক থেকে “মুছে ফেলা হয়েছে” এবং অন্যান্য ধর্মের বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, এগুলো কিসের আলামত?
সমালোচনা শুরু হলে তিনি নিজেই বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য স্পিকারের কাছে আবেদন জানান।
তবে তার বক্তব্যের ভিডিও ফে”সবুকে ‘ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে’ উল্লেখ করে দীপু মনি বলেন, ধর্মের দোহাই দিয়ে বিভিন্ন সময় আমাদের অগ্রসর হওয়া থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তারা সেটি ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। কাজেই তিনি যা বলেছেন সেটি কেবল সেখানেই শেষ না, যেখানে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এটার ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে।
“এই বক্তব্যের কয়েকদিন আগে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছিল, যা আমার নজরে এসেছিল,” তিনি বলেছিলেন। আমাদের নতুন শিক্ষাক্রম থেকে নাকি ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে। এটা সর্বৈব মিথ্যা। ধর্ম শিক্ষা বরাবরই ছিল, এখনও আছে। না থাকার কোনো কারণ নেই বলেও জানান তিনি।
দীপু মনি বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষায় বারবার বলেছি জ্ঞান ও দক্ষতা যেমন থাকবে, তেমনি থাকবে সঠিক মূল্যবোধ, নৈতিকতার ধর্ম শিক্ষা যেটা আবশ্যিক বিষয়। তাই ধর্মীয় শিক্ষাকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা দেইনি।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন কারিকুলামে আমরা যেমন সবকিছু করে শেখার দিকে এগোচ্ছি, তেমনি শুধু ধর্মীয় শিক্ষার বই পড়লে চলবে না। তারা ধর্মের শিক্ষা বুঝুক, নৈতিকতা বুঝুক। বইগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে সেগুলো তাদের জীবনে চর্চা করতে পারে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তাই যারা আজ ধর্ম শিক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছে বলে ধোঁয়াশা তুলছেন, তাদের উদ্দেশ্য ধর্ম রক্ষা নয়, পক্ষে থাকা নয়, উদ্দেশ্য ধর্মকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করা। দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষকে উ”স্কে দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করা। আমি মনে করি এটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।
এই ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা তথ্য যাতে আর না ছড়ানো হয় সে বিষয়ে সতর্ক করেন শিক্ষা মন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন এ ধরনের বক্তব্য অযাচিত, যার কোনো ভিত্তি নেই। তিনি যে কথা বলেছেন, সেটার কোনো যৌক্তিকতা ছিল না। পরবর্তীতে সংসদ সদস্য সেটা প্রত্যাহার করে নেন, এবং তার বক্তব্য যে ভূল সেটার জন্য তিনি অনুতপ্ত, সেই রকম একটি বিষয় ছিল।