Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এক অসহায় মায়ের চিঠি, ছিল অন্য রকম আর্জি

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে এক অসহায় মায়ের চিঠি, ছিল অন্য রকম আর্জি

বাংলাদেশের মসজিদগুলোর মধ্যে একটি ভিন্ন ধরনের এবং নামকরা মসজিদ হলো কিশোরগঞ্জের অবস্থিত ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। কথিত আছে, এই মসজিদে যারা দান করেন, তাদের মনের বাসনা পূরণ হয়ে থাকে। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ-এই মসজিদের দান বাক্স পাওয়া যায়। মানুষ তাদের আশা পুরনের জন্য এই মসজিদের দানবাক্সে দান করে থাকেন। এবার পাগলা মসজিদের দান বাক্সে একটি চিঠি পাওয়া গিয়েছে, যে চিঠিতে এক অসহায় মায়ের আবেগঘন প্রার্থনা ছিল। চিঠিটি পড়ে বোঝা গিয়েছে, ওই মা তার এক প্রতিবন্ধী মেয়ের সুস্থতা কামনা করে ওই চিঠিটি দিয়েছিলেন।

কথিত আছে, কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদে মানত করলে মনের ইচ্ছা পূরণ হয়। এবার মসজিদের দান বাক্সে এক অসহায় মা তার প্রতিবন্ধী মেয়ের সুস্থতা কামনা করে প্রার্থনামূলক চিঠি দিয়েছেন।

এই চেস্টগুলি প্রতি তিন মাস অন্তর খোলা হয়। এবারও ৩ মাস ১ দিন পর শনিবার (১ অক্টোবর) দান বাক্সগুলো খোলা হয়েছে। এ সময় চিঠিটি পাওয়া যায়।

সন্তানের সুস্থতা কামনা করে চিঠিতে মা লিখেছেন, ‘হে পাগলা বাবার মসজিদে আর্জি দিচ্ছি যে, আমার মেয়ে প্রতিবন্ধী আপনার উছিলায় যাতে আমার মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া ভাল হয়ে যায়। আমি আপনার দরবারে একটি ছাগল দিব। আমার আর্জি কবুল করেন।’

শনিবার (১ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টায় মসজিদের ৮টি দানবাক্স খোলা হয় বলে জানা গেছে। দান বাক্স থেকে ১৫ বস্তা টাকা গণনা শেষে রেকর্ড ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা পাওয়া গেছে।

এদিকে মসজিদ পরিচালনা কমিটি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলা হয়। দান বাক্স খোলা হয় এবং অনুদান গণনার জন্য প্রথমে ১৫ বস্তায় ভর্তি করা হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে টাকা গণনার কাজ শেষ হয়।

মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি খলিলুর রহমান বলেন, এই মসজিদে মানত করলে মনের বাসনা পূরণ হয় এই ধারণা থেকে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই এখানে দান করেন।

তিনি আরও বলেন, শনিবার সকাল থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এটিএম ফরহাদ, সহকারী কমিশনার জোহরা সুলতানা যুথি, মো. নাবিলা ফেরদৌস, মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান ও রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম, সিবিএ নেতা আনোয়ার পারভেজসহ অন্যান্য কর্মকর্তা, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য এবং মসজিদ কমপ্লেক্সে অবস্থিত মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, “কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী পাগলা মসজিদে একটি সুন্দর আন্তর্জাতিক ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে। যার নামকরণ হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’। এর নির্মাণে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা।

উল্লেখ্য, গত ২ জুলাই পাগলা মসজিদের আটটি দানবাক্স খোলা হয়। এ সময় ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৮ হাজার ৪১৫ টাকা ও বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়। এ ছাড়া গত ১২ মার্চ পাগলা মসজিদের আটটি দান বাক্স খোলা হয়। এ সময় রেকর্ড ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৫ টাকা এবং বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়। ওই সময় বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রোগের কারণে চার মাস ছয় দিন পর দান বাক্সগুলো খোলা হয়।

দান বাক্সে প্রার্থনামূলক চিঠি দেয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। অনেকে নগদ অর্থ এবং স্বর্ণলঙ্কার দেয়ার পাশাপাশি এই ধরনের চিঠি দান বাক্স দিয়ে থাকেন, বিভিন্ন প্রার্থনা করে। অনেকের প্রার্থনায় থাকে রোগ মুক্তি কিংবা বড় কোনো ইচ্ছা পূরণের কামনার বিষয়। তবে অনেকেই বলে থাকেন পাগলা মসজিদের কোন কিছু সে প্রার্থনা করলেন সেটা পূরণ হয়। সেই বিশ্বাস থেকেই প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ দান করে থাকে মানুষেরা।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *