স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হতে আর মাত্র ২৩ দিন বাকি। আগামী ২৫ জুন ( June ) উদ্বোধন হতে যাচ্ছে পদ্মা সেতু। উদ্বোধনকে ঘিরে বর্ণাঢ্য কর্মসূচির আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সরকারের ( government ) মূল আয়োজন থাকবে পদ্মার দুই তীরে। আর এবার আওয়ামী লীগ তাদের দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচিতে পদ্মা সেতু যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী ২৩ জুন ( June ) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পদ্মা সেতু উদ্বোধনসহ সারাদেশে একযোগে উদযাপন করবে আওয়ামী লীগ।
পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশ্লেষক ড. মালিকা-ই-আবিদা ( Dr. Malika–Abida ) খট্টক বৃহস্পতিবার ( Thursday ) দেশের বহুল প্রচারিত ‘ডেইলি টাইমস’-এ একটি নিবন্ধে লিখেছেন যে বাংলাদেশের ( Bangladesh ) বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু একটি স্বপ্নের প্রকল্প। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেতুটি আগামী ২৫ জুন ( June ) উদ্বোধন করবেন এবং সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ( Sheikh Hasina ) উদ্বোধন করবেন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার যাত্রীরা বাংলাবাজার-শিমুলিয়া রুটে ফেরি করে পদ্মা নদী পার হয়। দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রী ও চালকদের। চালু হলে, এটি হবে বাংলাদেশের ( Bangladesh ) বৃহত্তম সেতু এবং সড়ক চলাচলের জন্য প্রথম নির্দিষ্ট নদী পারাপার। দ্বি-স্তর বিশিষ্ট স্টিল ট্রাস ব্রিজটির শীর্ষে একটি চার লেনের হাইওয়ে এবং নীচে একটি সিঙ্গেল-ট্র্যাক রেলপথ থাকবে। দক্ষিণাঞ্চলের কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন চলতি মাসেই শেষ হবে। পদ্মা বহুমুখী সেতু ( Padma Multipurpose Bridge ), মুন্সীগঞ্জের ( Munshiganj ) মাওয়া পয়েন্ট এবং শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের সাথে সংযোগকারী বাংলাদেশের ( Bangladesh ) একটি স্বপ্নের প্রকল্প, যা যাত্রী ও মালবাহী যানবাহনের জন্য যাতায়াতের সুবিধা দেবে এবং ধীরে ধীরে দেশের জিডিপি ১.৩-২% বৃদ্ধি করবে।
পদ্মা সেতু, দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল-ট্রাস কম্পোজিট কিপিং রোডের উপরে এবং নীচে ডিজাইন করা হয়েছে, এটি বিশ্বের গভীরতম ভিত্তি সেতু। আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর নদীর ওপারে বিশাল জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এটি তার প্রথম প্রকাশ্য উপস্থিতি। ডা. মালেকা বলেন, দেশের উন্নয়নের মূর্তিমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর মতো বিশ্বের কাছে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আত্মবিশ্বাস ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। বিশাল বাধার মধ্য দিয়ে তাকে হেঁটে যেতে হয়েছে কিন্তু সে তার গন্তব্যে পৌঁছেছে। সেতু নির্মাণের সময় যে ষড়যন্ত্র ছড়িয়ে পড়েছিল তার দৃঢ়তার সাথে মোকাবিলা করে সত্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের স্বাক্ষর বহন করে। শেখ হাসিনার শাসনামলে বিশ্ববাসী আবারো বাংলাদেশের সক্ষমতা জানার সুযোগ পেয়েছে। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেটি বারবার তার সক্ষমতা দেখিয়েছে। পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় শেষের দিকে। বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগে তার প্রতিশ্রুতি প্রত্যাহার করে এবং অন্যান্য দাতারা তা অনুসরণ করে। পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে এবং পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ অনিশ্চিত। বিশ্বব্যাংক ও দাতারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। তখন সমালোচকরা হাসিতে ফেটে পড়েন।
ষড়যন্ত্রকারীরা শেখ হাসিনার পক্ষে পদ্মা সেতু করা সম্ভব হবে না বলে বিরূপ মন্তব্যের ঝড় তোলে। বিশ্বব্যাংক এক ব্যক্তির যোগসাজশে বোর্ড মিটিং ছাড়াই ব্রিজ নির্মাণে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়, মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগ এনে, যা পরবর্তীতে ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। পদ্মা সেতু নিয়ে ঘুষ কেলেঙ্কারির কোনো প্রমাণ পায়নি কানাডার একটি আদালত। তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতে হয়। এই পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরু। কিন্তু নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে সরকার। নদী শাসন এবং পাইলিংয়ের ক্ষেত্রে সাহসী এবং যুগান্তকারী প্রকৌশল দক্ষতা প্রয়োজন ছিল। একই সময়ে নির্মাণ ব্যয় বাড়তে থাকে। ডাঃ মালেকা আরো বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলেও সেতুটির নির্মাণ কাজ পুরোদমে চলছে। শেখ হাসিনার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণে সেতুর কাজ একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। করোনা মোকাবিলায় পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়েছে। সবাই যখন দেখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেতুর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে তখন কিছু অসাধু ও ষড়যন্ত্রমূলক গুজব ছড়াতে শুরু করে। গুজব ছড়িয়েছিল যে সেতুটি তৈরি করতে মানুষের মাথা লাগবে। সরকারও দক্ষতার সঙ্গে তা মোকাবেলা করেছে।
শেখ হাসিনার অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে শুধু পদ্মা সেতুই নয়, মেট্রোরেল ও দেশের বৃহত্তম টানেলের কাজও প্রায় শেষের দিকে। সেগুলি এ বছর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে অনেক মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি প্রকল্প, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু, পায়রা সমুদ্র বন্দর, বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরীসহ অনেক উল্লেখযোগ্য প্রকল্প। তবে পদ্মা সেতু নির্মাণ ছিল সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং। পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতু নয়; এটি দেশের একটি বড় সম্পদ। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল উত্তর-পূর্ব অংশের সঙ্গে যুক্ত হবে। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১৮.১০ মিটার চওড়া সেতুটির নির্মাণ কাজ ৭ ডিসেম্বর, ২০১৪ সালে শুরু হয়েছিল। আজ পদ্মা সেতু দৃশ্যমান। গর্বের সেতু আজ দাঁড়িয়ে আছে। নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর একটি সাহসী সিদ্ধান্ত তাকে একজন আত্মবিশ্বাসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিয়েছে। বর্তমানে অর্থনৈতিক অগ্রগতি, ধারাবাহিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
এই সেতুর জন্য প্রধানমন্ত্রী যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের সফলতা সেই ত্যাগের ন্যায্যতা দিয়েছে। প্রথম দিকে নির্মাণ খরচ কম ছিল। কিন্তু পরে তা কয়েক পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৩.৮৬৮ বিলিয়ন ডলারে। নির্মাণের সময় এবং নির্মাণ ব্যয় উভয়ই বৃদ্ধি পায়, যদিও নির্মাণ ব্যয় সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে। তবে সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক বিষয় হল সেতুটি সম্পূর্ণ হয়েছে এবং জুন মাসে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। সেতু রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও সামাজিক অনুষ্ঠানে গভীরভাবে জড়িত। সেতু নির্মাণ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছিল। সেতুটি চালু হলে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। দেশের অর্থনীতির কাঠামো বদলে যাবে। কৃষির ব্যাপক উন্নয়ন হবে। সেতুটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে রাজধানীতে কৃষি পণ্য পরিবহনে যুগান্তকারী অধ্যায় তৈরি করবে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম পাবে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক শিল্পায়ন ঘটবে। পদ্মা সেতু হয়ে উঠতে পারে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের একটি অংশ। যোগাযোগ ও পরিবহনে বিপ্লব ঘটবে। সেতুটি পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাবে। দেশের মুন্সীগঞ্জ ও শরীয়তপুর সেকশনে একটি ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে যা খুবই নজরকাড়া ও চিত্তাকর্ষক।
সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা রাখবে এই সেতু। এই সেতুকে ঘিরে গড়ে উঠবে রিসোর্ট, হোটেল ও রেস্তোরাঁ। যেখানে বাঙালি খাবার পরিবেশন করা হবে, যা বিদেশিদের কাছে বাঙালি সংস্কৃতিকে আরও পরিচিত করে তুলবে। পদ্মা সেতু দেশের জিডিপি বাড়াবে এবং মাথাপিছু আয় বাড়বে। এই সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগ আরও মজবুত করবে। মানুষ ঢাকা থেকে স্বল্প সময়ে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারবে। সেতুকে ঘিরে গড়ে উঠবে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। পদ্মা সেতুর নাম উচ্চারণ করলে শেখ হাসিনার নাম উচ্চারণ করতে হবে। শেখ হাসিনার নাম ও পদ্মা সেতু একে অপরের পরিপূরক। তাদের আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। শেখ হাসিনার নামে পদ্মা সেতুর নাম না হলেও শেখ হাসিনার কারণেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পরিচিত হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণের বড় চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে জয়ী হয়েছেন শেখ হাসিনা।
উল্লেখ্য, পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে সেতু এলাকায় চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। মাওয়া ও জাজিরায় ৪০ ফুট লম্বা দুটি ম্যুরাল স্থাপন করা হচ্ছে। দুটি ম্যুরালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে। এর পাশেই নির্মাণ করা হচ্ছে উদ্বোধনী ফলক। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে সেতুটি উদ্বোধন করবেন এবং শুভেচ্ছা সমাবেশে অংশ নেবেন। এরপর তিনি গাড়িতে করে সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে আরেকটি উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। সেতু এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।