নাসিক নির্বাচন নিয়ে সারাদেশে চলছে আলোচনা সাথে উত্তেজনা। খবরের পাতা উল্টাতে দেখা যাচ্ছে এক একটি কেন্দ্রের ভোটের গণনা। মানুষ চেয়ে বসে আছে কখন একটা আপডেট খবর পাওয়া যাবে। কেনইবা এত কৌতুহল মানুষের থাকবে না যেখানে আইভী এবং তৈমূরের মনের মত প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। অবশেষে পাওয়া গেল ৮১ টি কেন্দ্রের ফলাফল। জানা গেল আইভী কতটা এগিয়ে তৈমুরের থেকে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পর ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। ১৯২টি কেন্দ্রের মধ্যে এ পর্যন্ত ৬১টি কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। ওই ৭১টি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী মো. সেলিনা হায়াৎ আইভী পেয়েছেন ৫৬ হাজার ২১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৈমুর আলম খন্দকার হাতি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৬১৮ ভোট।
এর আগে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হতো। প্রথমে ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। কোনো সমস্যা ছাড়াই ভোট সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনের সময় কোনো বিরূপ ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সাধারণ নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন প্রার্থী ও ভোটাররা।
তবে ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন থাকলেও ভোটের গতি ছিল ধীরগতিতে। এর জন্য ইভিএমকে দায়ী করছেন ভোটাররা। তারা আরও বলেন, ইভিএমে ভোট দিতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। তবে ইভিএমে ভোট দিতে পেরে উচ্ছ্বসিত নতুন ভোটাররা।
কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীদের এজেন্ট ছিল। নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি। ভোট নিয়ে মেয়র বা কাউন্সিলের কোনো প্রার্থী লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি।
বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ভোট দিতে এসে একই কথা বলেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একে শামীম ওসমান। আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর তিনি বলেন, ভোট সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে।
এবার সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার ৫ লাখ ১৮ হাজার ৩৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৫৯ হাজার ৭৩৯ জন, মহিলা ভোটার ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫১৮ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৪ জন। এখানে 192টি ভোটকেন্দ্র এবং 1,333টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে।
এবারের নির্বাচনে মোট ১৪টি দল অংশ নিয়েছে। মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন ৬ জন। সাধারণ কাউন্সেলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সেলর পদে ৩৪ জন নির্বাচনে অংশ নেন।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ছিলেন ৩০ জন ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতিটি কেন্দ্রে কমপক্ষে 4 থেকে 5টি আইন প্রয়োগকারী দল ছিল; প্রতিটি দলে ৪-৫ জন পুলিশ এবং ২০-২২ জন আনসার সদস্য রয়েছে।
নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন- খিলাফাহ মজলিসের এবিএম সিরাজুল মামুন (দেয়াল ঘড়ি), বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের মাওলানা মোহাম্মদ মাছুম বিল্লাহ (হাত পাখা), খিলাফাহ আন্দোলন বাংলাদেশের মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন (বটগাছ), মোহাম্মদ রাশেদ ফেরদৌস (ঘড়ি) বাংলাদেশ কল্যাণ। দলীয় ও স্বতন্ত্র কামরুল মো. ইসলাম বাবু (ঘোড়া)। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার (হাতি) ছিলেন দেশের আলোচিত। উভয় প্রার্থীই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
এবারের নির্বাচনে ২৭টি সাধারণ জেলা ও পৌর কর্পোরেশনের ৯টি সংরক্ষিত মহিলা জেলায় সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৬ জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গত শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) রাতে প্রার্থীরা তাদের প্রচারণা শেষ করেন।
এটা পরিষ্কার যে আইভীকে কোনোভাবেই থামানো সম্ভব না। নারায়ণগঞ্জ যে নৌকার ঘাঁটি সেটা আইভী এবং সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের মতো নেতাদের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। অবশেষে শামীম ওসমানের কথা ও সত্য হলো। এইবার দিয়ে যদি আইভী নির্বাচিত হয় তাহলে চারবার নারায়ণগঞ্জের মেয়র।