২৬ ফেব্রুয়ারী শনিবার পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় ঘটে যায় এক রুদ্ধশ্বাস ঘটনা। ২৪ বছর বয়সী সালমান নামক এক যুবক পাওনাদারদের ধাওয়া থেকে পালানোর সময় এক ভবনের ছাদে উঠে সেখান থেকে পড়ে যান। ভাগ্যক্রমে অক্ষত থাকলেও যেজায়গায় পড়েন সেটি ছিলো চার ভবনের সংযোগস্থলের খালি জায়গায় ৪০ ফুট গভীরে।
নিচে পড়ে গিয়ে বাঁচার কোনো পথ না পেয়ে চিৎকার করতে থাকেন। এ অবস্থায় ওই যুবকের করুণদশা দেখে প্রত্যক্ষদর্শীরা রাতে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল রাত একটার দিকে ঘটনাস্থলে পৌছায়। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে এসে চারটি ভবনের সংযোগস্থলে তিন ফুট বাই দুই ফুটের অপ্রশস্ত খালি জায়গায় ৪০ ফুট গভীরে পড়ে থাকা সালমানের গোঙানির শব্দ শুনতে পান। পরে সবকিছু নিশ্চিত হয়ে রাত দেড়টার দিকে পরে সবকিছু নিশ্চিত হয়ে রাত দেড়টার দিকে ওই যুবককে উদ্ধারে অভিযানে নামেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। প্রায় একঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর চেষ্টায় ৪০ ফুট গভীর থেকে সালমানকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হন ফায়ার সার্ভিস। সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, শনিবার রাতে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষে খবর আসে, গেন্ডারিয়ার ডিস্টিলারি রোডে একটি চারতলা বাড়ির ভয়েড স্পেসের ৪০ ফুট গভীরে এক যুবক আটকে আছেন। ওই যুবক চিৎকার করে স্থানীয়দের বাঁচানোর জন্য আকুতি জানাচ্ছেন। এ খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল রাত ১টা ১০ মিনিটের দিকে ঘটনাস্থলে পোঁছায়। পরে উদ্ধারকারীরা ভবনের ছাদে গিয়ে দেখেন, ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার কিছু দেখা যাচ্ছে না। পরে লাইটের আলো ফেলে অস্পষ্টভাবে দেখতে পান পড়ে থাকা যুবককে। চারটি ভবনের সংযোগস্থলে তিন ফুট বাই দুই ফুটের অপ্রশস্ত খালি জায়গায় ওপর থেকে দেখলে মনে হয় মাটির নিচে চলে যাওয়া কোনো অন্ধকার সুড়ঙ্গ বা গর্ত। নিচে পড়ে থাকা ব্যক্তির তখনো চেতনা আছে, আহত অবস্থায় সে অল্প সাড়াশব্দ করছে। উদ্ধারকারীদের প্রশ্নে রেসপন্স করতে পারছেন তিনি। এরপর সব বিষয় বিবেচনা করে রাত দেড়টার দিকে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। অভিযানে উদ্ধারকর্মী মুক্তারকে ব্রিদিং অ্যাপরেটাস পরিয়ে ফুলবডি হারনেস বেঁধে নামানো হয় ওই অন্ধকার সুড়ঙ্গে। সঙ্গে দেওয়া হয় অতিরিক্ত আরেকটি ফুলবডি হারনেস। ওপর থেকে হারনেসের প্রান্ত ধরে রাখেন অপর উদ্ধারকর্মীরা। দুরন্ত সাহস আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অন্ধকারের ভয়কে জয় করে সহকর্মীদের সহায়তায় মুক্তার পৌঁছে যান সুড়ঙ্গের শেষপ্রান্তে, আহত অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়ে থাকা যুবকের কাছে।
মো. শাহজাহান শিকদার আরও জানান, উদ্ধারকর্মীকে কাছে পেয়ে বিচলিত যুবক বেঁচে থাকার আঁকুতি জানান। তাকে অভয়বাণী শুনিয়ে ফায়ারফাইটার মুক্তার সঙ্গে নেওয়া অতিরিক্ত ফুলবডি হারনেসে সুরক্ষিত করে বেঁধে ফেলেন আহত ব্যক্তিকে। এবার ওপরে সংকেত পাঠান আহত ব্যক্তিকে টেনে তোলার। সকলের সহযোগিতায় রাত আড়াইটার দিকে চারতলা থেকে পড়ে যাওয়া এবং সুড়ঙ্গের নিচে আটকে থাকা সালমানকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে আনেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, উদ্ধারের পর সালমানকে অ্যাম্বুলেন্সে করে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সর্বশেষ রবিবার রাত ৯টায় ফায়ার সার্ভিস খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সালমান সুস্থ আছেন এবং তিনি ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। উদ্ধারের পর সালমান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের জানান, সালমান ওই এলাকার বাসিন্দা। তার কাছে অনেক লোক টাকা পান। ঘটনার দিন পাওনাদারদের ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় সেই ৪০ ফুট গভীরে পড়ে যান তিনি।
জীবনের ঝুঁকি নিয়েও ফায়ারফাইটার মুক্তারের এই সাহসিকতা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবীদার। একজন সাধারণ মানুষ হয়েও তাঁর এই কাজ সবসময়ই অসাধারণ হিসেবে বিবেচিত হবে।