পর্দা প্রতিটি মুসলিম নারীর জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটা মুসলিম নারীর জন্য পর্দা করা হয়েছে ফরজ। আর এই কারনে মুসলিম নারীরা চেষ্টা করে থাকেন পর্দা করার। তবে এবার পর্দা করে ভাইভা দিতেই গিয়েই শিক্ষকের হয়রানীর শিকার হয়েছেন এক শিক্ষার্থী।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের এক ছাত্রীকে মৌখিক পরীক্ষায় হিজাব পরিধান করায় ‘উগ্র জঙ্গি’ আখ্যা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে মো. জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে।
রোববার (২১ আগস্ট) বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ব্যবসায় পরিসংখ্যান-২ কোর্সের মৌখিক পরীক্ষার সময় এ ঘটনা ঘটে। পরে বিষয়টি একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে।
নির্যাতিতা শিক্ষার্থীর সহপাঠীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ব্যবসায় পরিসংখ্যান-২য় কোর্সের মৌখিক পরীক্ষায় ভিকটিম হিজাব পরিধান করলে কোর্স শিক্ষক মোঃ জসিম উদ্দিন তিরস্কার করেন। এবং বললেন, আপনি কি ভাইবা দেওয়ার ম্যানার শিখেন নাই?ভ্রাতৃত্ব প্রদানের পদ্ধতি হলো হিজাব খুলে ফেলতে হবে। অন্য শিক্ষক আর আমি এক নই। আপনি যেভাবে প্রচার করতে এসেছেন তা জঙ্গি মৌলবাদীর মতো।
ভিকটিম ছাত্রী পর্দার কথা বললে অভিযুক্ত শিক্ষক তাকে কক্ষ থেকে বের করে দেন।
অভিযুক্ত ছাত্রের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে তার সহপাঠীরা জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বিভাগে ডেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলার জন্য হুমকি দেন। জসিম উদ্দিন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ড. জসিম উদ্দিন বলেন, আস্তাগফিরুল্লাহ! আমি একজন ধার্মিক মানুষ। আমি এসব করতে যাব কেন? আমি শুধু তাকে ডেকেছিলাম এবং কর্পোরেট আচরণের কিছু দিক সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছিলাম।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলার হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্র আসছে। তবে, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমি শুধু তাকে বলেছিলাম আমি জানি না আমি তোমাকে বোঝাতে পেরেছি কিনা। তিনি আমাকে বললেন আমি বুঝতে পেরেছি।
এ প্রসঙ্গে বিভাগীয় প্রধান মো. এমদাদুল হক বলেন, আমার কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি, অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টি শুনেছি, তদন্ত করে দেখব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ধর্মীয় স্বাধীনতা একজন নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। এ ধরনের কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে এলে আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি তদন্ত করে ফলাফলের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ.এফ.এম. আব্দুল মঈন।
প্রসঙ্গত, এ দিকে এই ঘটনায় এখন বেশ সমালোচনার সৃ্ষ্টি হয়েছে সবখানে। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এমন ব্যবহার আশা করেননি কেউ। এ ছাড়াও এই শিক্ষকে নিয়ে এর আগেও রয়েছে অনেক অভিযোগ। এর আগে গত ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে এই কর্মসূচিতে অংশ না নিলেও অনলাইনে ক্লাস নেন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। এ সময় সকাল ১১টায় অনলাইন ক্লাস শুরু হলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিনি ক্লাস নেন।পরে বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে এম আহবায়ক রায়হান উদ্দিন, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাসকে সদস্য ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার আমিরুল হক চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।