Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / International / পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে, দেওলিয়া হওয়ার পথে এশিয়ার অন্যতম সুন্দর দেশ শ্রীলঙ্কা
Sri Lanka money Rupee, banknotes and coins.

পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে, দেওলিয়া হওয়ার পথে এশিয়ার অন্যতম সুন্দর দেশ শ্রীলঙ্কা

দক্ষিণ এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা। দেশটির মোট জনসংখ্যা ২ কোটি। বর্তমান সময়ে দেশ টির নানা ধরনের সংকট দিয়েছে। এই প্রধান মূলে রয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। এই মুদ্রাস্ফীতিকে ঘিরে দেশটি হুমকির সম্মুখীন হয়েছে। এমনকি মোটা অঙ্কের ঋন ও রয়েছে দেশটির। মুদ্রাস্ফীতি ও মোটা অঙ্কের ঋন রেকর্ড মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় দেউলিয়া হওয়ার পথে শ্রীলঙ্কা। এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত উঠে এলো প্রকাশ্যে।

শ্রীলঙ্কা একটি গভীরতর আর্থিক ও মানবিক সংকটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। ২০২০ সালে মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড মাত্রায় বেড়ে যাওয়ার কারণে পরিস্থিতি এমন যে দেশটি দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। এর আগে, গত বছরের ৩০ আগস্ট শ্রীলঙ্কা সরকার দেশের মুদ্রার তীব্র পতনের পরে আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছিলেন যা দেশে খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কলম্বো গেজেটের কলামিস্ট সুহেল গুপ্তিল জানাচ্ছেন, শ্রীলঙ্কা ক্রমাগত জোড়া ঘাটতির মুখোমুখি হচ্ছে। এক রাজস্ব ঘাটতি, দুই বাণিজ্য ঘাটতি। ২০১৪ সাল থেকে শ্রীলঙ্কার ঘাড়ের ওপর বৈদেশিক ঋণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং ২০১৯ সালে সেটি GDP-র ৪২.৬ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। গুপ্তিল ব্যাখ্যা করেছেন যে, দেশের ক্রমবর্ধমান বিদেশী ঋণ ২০১৯ সালে ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অংকে পৌঁছে গিয়েছিল, যা গোটা দেশের উপর বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এর পরে স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস, মুডি’স এবং ফিচসহ বেশ কয়েকটি ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি শ্রীলঙ্কার ক্রেডিট রেটিং C থেকে B-তে নামিয়ে এনেছে। যার জেরে আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ড (ISBs) এর মাধ্যমে তহবিল প্রাপ্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রীলঙ্কায় আর্থিক সংকটের জন্য প্রাথমিকভাবে দায়ী নিম্ন প্রবৃদ্ধির হার, বর্তমানে যা দাঁড়িয়েছে মাত্র চার শতাংশে। সেই সঙ্গে বিশাল ঋণ শোধ না করার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এদিকে আগামী ১২ মাসের মধ্যে শ্রীলঙ্কার সরকারি এবং বেসরকারি খাতকে দেশি ও বিদেশী ঋণ পরিশোধ করতে হবে আনুমানিক ৭.৩ বিলিয়ন ডলারের মতো। ২০২২ সালের জানুয়ারির মধ্যে আন্তর্জাতিক সার্বভৌম বন্ড -খাতে দিতে হবে ৫০০ মিলিয়ন ডলার। শ্রীলঙ্কার জন্য সবচেয়ে চাপের সমস্যাগুলির মধ্যে একটি হলো- এর বিশাল বৈদেশিক ঋণ এবং ঋণ পরিষেবার বোঝা, বিশেষ করে চীনের প্রতি। চীনের কাছে ইতিমধ্যেই ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি ঋণ নিয়েছে শ্রীলঙ্কা এবং গত বছর তীব্র আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পেতে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছে যা কিস্তিতে পরিশোধ করছে শ্রীলঙ্কা ।এটি অনুমান করা হচ্ছে যে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২২সালের জানুয়ারির মধ্যে সম্পূর্ণরূপে হ্রাস পাবে এবং প্রয়োজনীয় অর্থপ্রদানের জন্য কমপক্ষে ৪৩৭ মিলিয়ন ডলার ধার করার প্রয়োজন পড়বে। রাজাপাকসে শ্রীলঙ্কাতে অর্থনৈতিক জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার পরে, সেনাবাহিনীকে চাল এবং চিনি সহ প্রয়োজনীয় জিনিসগুলি নিশ্চিত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল, যা নির্ধারিত সরকারী দামে বিক্রি হয়েছিল – তবে এটি জনগণের দুর্ভোগ কমাতে খুব কমই কার্যকর হয়েছে।

প্রাক্তন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ডব্লিউএ উইজেবর্ধন সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, সাধারণ মানুষের সংগ্রাম আর্থিক সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। যা তাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলবে। বিশ্বব্যাংক অনুমান করেছে যে, মহামারীর শুরু থেকে শ্রীলঙ্কার ৫ লক্ষ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে জীবন কাটাচ্ছে। সাময়িকভাবে সমস্যাগুলি সহজ করার লক্ষ্যে সরকার অস্থায়ী ত্রাণ নীতি গ্রহণ করেছে যেমন তার প্রতিবেশী মিত্র ভারত থেকে খাদ্য, ওষুধ এবং জ্বালানি আমদানির জন্য ক্রেডিট লাইন, পাশাপাশি ভারত, চীন ও বাংলাদেশ থেকে মুদ্রা বিনিময় এবং ওমান থেকে পেট্রোলিয়াম কেনার জন্য ঋণ নিয়েছে। শ্রীলঙ্কা সরকার ইরানের সাথে তাদের অতীতের তেলের দেনা মিটিয়ে নেবার পরিকল্পনা করেছে তাদের দেশে চা পাঠানোর মাধ্যমে। তদুপরি, কলম্বো চলমান আর্থিক সংকট এবং ডলারের সংকটের মুখে ব্যয় কমাতে২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে তিনটি বিদেশী কূটনৈতিক মিশন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাইহোক, এই ব্যবস্থাগুলি শুধুমাত্র স্বল্পমেয়াদী ত্রাণ প্রদান করবে। দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য এখন রাতের ঘুম যেতে বসেছে শ্রীলঙ্কা সরকারের।

ইতিমধ্যে দেশটির সরকার মুদ্রাস্ফীতি প্রতিরোধে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। শুধু তাই নয় ঋন পরিশোধে বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে বিনিময় প্রথা চালু করেছে। ঋনের অর্থ পরিশোধে ঋন গ্রহীতা দেশ গুলোতে চাহিদা সম্পন্ন নানা ধরনের পন্য প্রেরন করছে। নিরলস ভাবে দেশ ও জাতিকে সংকট থেকে উত্তরেনর জন্য কান করে যাচ্ছেন শ্রীলঙ্কার বর্তমান সরকার।

About

Check Also

বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানিতে বড় পতন

বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানিতে বড় পতন হয়েছে। শুধু আগস্টেই রপ্তানি কমেছে ২৮ শতাংশ। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ভারতের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *