ডিজেল এবং কেরোসিন তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাড়া বাড়নোর জন্য পরিবহন মালিকরা ধর্মঘট ডেকেছে। এত করে জন-জীবন বাঁধার মুখে পড়েছে। তবে এই সংকট নিরসনের জন্য পরিবহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে সরকার পক্ষের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা। এই বৈঠকে ৪০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে পরিবহন মালিকরা। এতে করে কোন বাসে কী পরিমান ভাড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে এই প্রসঙ্গে বিস্তারিত উঠে এলো প্রকাশ্যে।
ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়লেও প্রতি কিলোমিটারে বাসের ভাড়া ৪০ শতাংশের বেশি বাড়িয়ে নতুন করে ভাড়া সমন্বয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। রোববার (৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রেক্ষাপটে গণপরিবহনে ভাড়া পুনর্নির্ধারণে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের বৈঠক থেকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়। নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দূরপাল্লার বর্তমান বাসভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা, তা বাড়িয়ে ২ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ এতে কিলোমিটারপ্রতি যাত্রীকে বাড়তি ৫৮ পয়সা গুনতে হবে। ভাড়া বৃদ্ধির এ হার ৪০ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তাতে দেখা যাচ্ছে দূরপাল্লার একজন যাত্রীকে প্রতি পাঁচ কিলোমিটারে ২ টাকা ৯০ পয়সা বেশি ভাড়া দিতে হবে।
মহানগরে বাসের বর্তমান ভাড়া কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা, প্রস্তাব হয়েছে ২ টাকা ৪০ পয়সা করার। এতে ৭০ পয়সা ভাড়া বাড়বে। বাড়তি ভাড়ার এ শতকরা হার ৪১ দশমিক ১৮ শতাংশ। ফলে মহানগর এলাকায় একজন বাসযাত্রীকে পাঁচ কিলোমিটার ভ্রমণের জন্য বাড়তি ৩ টাকা ৫০ পয়সা গুনতে হবে। এছাড়া মহানগরে মিনিবাসের বর্তমান ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সা। এটি বাড়িয়ে ২ টাকা ৪০ পয়সা করার প্রস্তাব হয়েছে। এতে ভাড়া বাড়ে কিলোমিটারপ্রতি ৮০ পয়সা। ভাড়া বৃদ্ধির এ হার ৫০ শতাংশ। ফলে মহানগর এলাকায় চলাচলকারী মিনিবাসের ভাড়া পাঁচ কিলোমিটারে ৪ টাকা বাড়বে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম ঊর্ধ্বগতির কারণে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ডিজেল-কেরোসিনের দাম পুনর্নির্ধারণ করে সরকার। গত বুধবার (৩ নভেম্বর) রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। নতুন দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়েছে। যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়।
ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানোর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরদিনই পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এরপর শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকাল ছয়টা থেকে রাজধানীসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু করে বাস, ট্রাকসহ পণ্যবাহী যানবাহনের মালিকেরা। এতে সারাদেশে মানুষকে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ধর্মঘট অনির্দিষ্টকালের হওয়ায় দুর্ভোগ কবে শেষ হবে, এ নিয়েও অনিশ্চয়তায় পড়ে মানুষ। তবে তেলের দাম বাড়ানোর পর শুরু থেকেই পরিবহন মালিক ও সংশ্লিষ্টরা বলছিলেন, ডিজেলের দাম না কমানো হলে গণপরিবহনসহ অন্যান্য পরিবহনে ভাড়া সমন্বয় করতে হবে। এনিয়ে গত বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) বিআরটিএকে চিঠি দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
এমনিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশে বেশ কিছু নিত্যেপ্রয়োজনীয় খাদ্যে দ্রব্যের দাম মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই নিয়ে অস্থিরতা বিরাজ করছে জনসাধারনের মাঝে। এরই মধ্যে আবার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মারাত্মক সংকটে পড়েছে দেশের জনগন। এখন নিয়ে সর্বত্র চলছে ব্যপক আলোচনা-সমালোচনা।