বাংলাদেশে কিছু বড় ধরনের মোবাইল চোর সিন্ডিকেট রয়েছেন। যাদের অত্যাচারে রীতিমতো অতিষ্ট দেশের জন জনগন। মানুষের বহুল দামি দামি ফোন নাম মাত্র টাকায় তারা চুরি, ছিনতাই করে সংগ্রহের মাধ্যমে বিক্রি করে থাকেন। এতে অনেক বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুক্ষিনও হন অনেক সাধারন জনগন। কেউ যেন আর চুরি বা অবৈধ ফোন বাজারজাত বা ব্যাবহার করতে না পারে সেই লক্ষ্যে সরকার উদ্দ্যেগ নিয়েছিলেন তবে সেটি এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
ব্যাংকিং তথ্য, গোপন পাসওয়ার্ড, ব্যক্তিগত ছবি, গুরুত্বপূর্ণ নথি এখন মোবাইলে। মুহূর্তেই ওই মোবাইল ফোন কেড়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারী। লাখ টাকা মূল্যের হ্যান্ডসেট বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ হাজার টাকায়। গত বছর রাজধানীর বিজয় সরণি থেকে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয় চোখের পলকে। অভিযানে চোরকে আটক করা হলেও রাজধানীর ১৬টি স্থানে প্রতিদিন শতাধিক মোবাইল ফোন চুরি হয়, যার বেশিরভাগেরই হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না। গত ২০ জুলাই কারওয়ান বাজার এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ছাত্রী পারিশা আক্তারের মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়। ফোনটিতে প্যারিশের থিসিসের জন্য এক বছরের মূল্যের ডেটা ছিল। শিক্ষার্থীর বক্তব্য- লাখ টাকা দিয়েও সেই তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব নয়।
চুরি, অবৈধ ও নকল হ্যান্ডসেট বিক্রি বন্ধে সরকার জাতীয় সরঞ্জাম পরিচয় নিবন্ধন বা এনইআইআর প্রকল্পের মাধ্যমে সব অবৈধ হ্যান্ডসেট বন্ধের উদ্যোগ নিলেও মাঝপথে তা বন্ধ হয়ে গেছে। বারবার সময় বাড়ানো সত্ত্বেও উদ্যোগটি বাস্তবায়িত হয়নি। গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে সব অবৈধ হ্যান্ডসেট পর্যায়ক্রমে বন্ধ করার কথা ছিল। সে অনুযায়ী কাজও শুরু হয়। কিন্তু বিদেশ থেকে ফেরত যাত্রীদের বহন করা বৈধ সেট নিবন্ধনের জটিলতার কারণে উদ্যোগটি ভেস্তে যায়। এদিকে চুরি করা সেট বিক্রি ও ব্যবহারের অবাধ সুযোগে মোবাইল ফোন চুরি বন্ধ হচ্ছে না। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তথ্যমতে, রাজধানীর ব্যস্ততম ১৬টি স্থানে প্রতিদিন শতাধিক মোবাইল ফোন চুরি হয়। একই সঙ্গে অবৈধভাবে আমদানি করা, চোরাই ও নকল হ্যান্ডসেটে ভরে গেছে দেশের বাজার। এতে শুধু গ্রাহকরাই প্রতারিত হচ্ছে না, সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) মতে, দেশে প্রতি বছর বিক্রি হওয়া মোবাইল হ্যান্ডসেটের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কর ফাঁকির মাধ্যমে বাজারে প্রবেশ করে।
সরকার ৮০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির মহাপরিচালক (স্পেকট্রাম) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল মোবাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অবৈধ সেট বন্ধ করতে বিটিআরসির এনইআইআর সিস্টেম শতভাগ প্রস্তুত। কিন্তু তবুও ব্যবহারকারী হ্যান্ডসেটটি নিবন্ধন বা নিবন্ধনমুক্ত করার বিষয়ে সচেতন নন। সেট রেজিস্ট্রেশন মেসেজ পাঠানোর পরও অনেকে সময়মতো তা দেখেন না। সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য NEIR কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। সরকারের নির্দেশনা পেলে আবার শুরু করব। বিটিআরসি ও বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে বছরে গড়ে ৩.৫ কোটি হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়। ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি ও উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের সংখ্যা ছিল ৪ কোটি ১২ লাখ। মোবাইল ফোন উৎপাদন ও এসেম্বলিং সেক্টরে বর্তমানে 12-14টি কোম্পানি দেশে ৫০০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করছে, যাদের উৎপাদন ক্ষমতা 4 কোটি ইউনিটের বেশি। অনেকেই নতুন বিনিয়োগ নিয়ে উৎপাদনের অপেক্ষায় রয়েছেন। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে মোবাইল ফোন রপ্তানির সুযোগ থাকলেও কর ফাঁকি দিয়ে ২৫-৩০ শতাংশ হ্যান্ডসেট অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করছে। এতে সরকারের রাজস্ব ক্ষতির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের মোবাইল শিল্পও।
এদিকে, গত বছরের ১ জুলাই থেকে পাইলট NEIR কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর অবৈধ সেটের সংখ্যা অনুমান করা হয়। গ্রাহকের হাতে হ্যান্ডসেট নিবন্ধন শুরু হয় ১লা জুলাই থেকে। গত ১ অক্টোবর থেকে তিন মাসের মেয়াদে অবৈধ সেট বন্ধ করার কথা ছিল বিটিআরসির। ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, বাংলাদেশে প্রায় ১.৮ মিলিয়ন নতুন হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৩.১ মিলিয়ন অবৈধ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। কথা অনুযায়ী ১ অক্টোবর থেকে নতুন অনিবন্ধিত হ্যান্ডসেট বন্ধ করা শুরু করবে বিটিআরসি। প্রথম তিন দিনে তাদের নেটওয়ার্কে নতুন করে ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৬৫২টি সেট ধরা পড়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ২৪ হাজার ৮৬১টি হ্যান্ডসেট বন্ধ করা হয়েছে। পরবর্তীতে, বিদেশ থেকে আসা বৈধ হ্যান্ডসেটগুলির নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা শুরু হলে, সরকার বৈধ এবং অবৈধ উভয় ধরণের হ্যান্ডসেট বন্ধ না করার ঘোষণা দেয়।
এদিকে বিটিআরসি সূত্র বলছে, অবৈধ সেট বন্ধ করা হলে ব্যবহারকারীরা ফোন ব্যবহারে আরও নিরাপত্তা উপভোগ করতে পারবেন। চুরি হওয়া ফোন বিক্রি বন্ধ হবে। সরকারের রাজস্ব বাড়বে। দেশীয় মোবাইল ফোন অ্যাসেম্বলি শিল্প উপকৃত হবে। নকল সেট কিনে মানুষ প্রতারিত হবে না। NEIR প্রোগ্রাম চালু হলে, অনিবন্ধিত সেটে সিম ঢোকানোর সাথে সাথে বার্তাটি চলে যাবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেট নিবন্ধন করার নির্দেশনা থাকবে বার্তায়। ছিনতাইকৃত সেটের ব্যবসা বন্ধ হবে। কারণ, একজন ব্যবহারকারী একবার একটি সেট নিবন্ধন করার পরে, তিনি যদি এটি অন্য কারও কাছে বিক্রি করতে চান, তবে তাকে সেই সিমটি দিয়ে ‘ডি-রেজিস্টার’ করে বিক্রি করতে হবে। চলতি বছরে বেশ কয়েকটি অভিযানে মোবাইল চোর চক্রের অনেককে গ্রেফতার করেছে ডিবি। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা জুড়ে মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছে অন্তত ২০টি চক্র। শত শত ফোন চুরি।
উল্লেখ্য, দেশের মোবাইল শিল্পে, চুরি করা বা অবৈধ ফোনের ব্যাবহারের প্রবনতার ফলে সরকার বড় ধরনের রাজস্ব হারাচ্ছে। আর পাশাপাশি সাধারন জনগন পরছে নানাবিধ সমস্যায়। বর্তমানে অনেকের ফোনেই অনেক প্রকার বহু মুল্যবান তথ্য সংগ্রহ করে থাকে যেটি উক্ত মোবাইলের চেয়ে অনেক মুল্যবান। তবে ফোনটি চুরি হয়ে গেলে উক্তভোগী ব্যাক্তিটি চরম বিপাকে পরেন। আর এরকমের সমস্যায় অনেকই অহরহ পরছেন।