Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / National / পররাষ্ট মন্ত্রী মোমেনের সেই মন্তব্যের কড়া জবাব দিল ভারত

পররাষ্ট মন্ত্রী মোমেনের সেই মন্তব্যের কড়া জবাব দিল ভারত

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং পররাষ্টমন্ত্রী আবদুল মোমেনের বিষয়টি নিয়ে চলেছে ব্যপক আলোচনা এবং সমালোচনা সেই সাথে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়েছে বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগ তার এই মন্তব্য নিয়ে বেশ বিব্রত।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমের দাবি, সম্প্রতি চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর এক সভায় যোগ দিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেছেন, তিনি ভারতে গিয়ে শেখ হাসিনার সরকার টিকিয়ে রাখার আবেদন করে এসেছেন। যা নিয়ে বাংলাদেশ তো বটেই ভারতেও প্রবল আলোচনা শুরু হয়েছে। কোনো দেশের বিদেশমন্ত্রী কীভাবে, কোথায় এমন কথা বললেন, তা নিয়ে তোলপাড় রাজনৈতিক মহল।

ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অবশ্য এবিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেয়নি। ডয়চে ভেলে এবিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তারা কোনো মন্তব্য করেনি। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ভারত সরকারিভাবে এবিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করতে চাইছে না। তবে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে।

দীর্ঘদিনের সাংবাদিক এবং পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় এবিষয়ে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ”আবদুল মোমেন আদৌ এই মন্তব্য করেছেন কি না, জানা নেই। যদি করেন, তা হলে তা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। পরম্পরাগতভাবে ভারত অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলায় না, অন্য কোনো দেশকেও ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে দেয় না। ফলে এই মন্তব্যের কোনো সারবত্তাই নেই।”

প্রবীণ সাংবাদিক এবং পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ শরদ গুপ্তা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ”পররাষ্ট্র সম্পর্কের এক ধরনের ভাষা আছে। যাকে কূটনৈতিক ভাষা বলা হয়। কোনো দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে এমন ভাষায় কথা বলতে শুনিনি কখনো। খুবই আশ্চর্য লাগছে। আর সাম্প্রতি ইতিহাস দেখেছে, অন্য দেশের নির্বাচন বিষয়ে ভারত কথা বললে তার ফল ভালো হয় না।” শরদ মনে করিয়ে দিয়েছেন, মার্কিন নির্বাচনের আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের কথা। গুজরাটে ট্রাম্পকে পাশে নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ‘হাউডি ট্রাম্প’ অনুষ্ঠান করেছিলেন। সভা থেকে অ্যামেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয়দের উদ্দেশ্যে সরাসরি ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন মোদী। কিন্তু ট্রাম্প জিততে পারেননি। শরদের বক্তব্য, সেই ইতিহাস ভারত এবং বাংলাদেশ দুই দেশের রাজনৈতিক মহলেরই মনে রাখা উচিত।

কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপির আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা সায়ন্তন বসু ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ”হাউডি ট্রাম্পের বিষয়টির সঙ্গে এই মন্তব্য গুলিয়ে ফেললে ভুল হবে। ভারত কখনোই অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। বাংলাদেশের জনগণ ঠিক করবেন, তারা কাকে ক্ষমতায় আনবেন। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সবসময়ই কূটনৈতিক সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইবে।”

এ বিষয়ে তৃণমূলের এক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিল ডয়চে ভেলে। কিন্তু তিনি সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তার বক্তব্য, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর এই মন্তব্য দুই দেশের রাজনীতিকেই প্রভাবিত করতে পারে। ফলে এনিয়ে তিনি কথা বলতে চান না।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, আবদুল মোমেনের মন্তব্য দুই দেশের অতি দক্ষিণপন্থিদের উসকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। বিশেষ করে বাংলাদেশে এর ফলে ভারত-বিদ্বেষী মনোভাব আরো প্রকট হবে। যা কখনোই অভিপ্রেত নয়।

আবদুল মোমেন অবশ্য পরে তার মন্তব্য থেকে দূরত্ব তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে– এই অভিযোগ ডাহা মিথ্যা। আমি এই অভিযোগের ধারে কাছেও নেই।’

ভারতীয় কূটনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, মোমেন এখন ‘ড্যামেজ কন্ট্রোলের’ চেষ্টা করলেও ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গেছে।

উল্লেখ্য, একের পর এক বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে পররাষ্ট মন্ত্রী আবদুল মোমেন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশের মানুষ বেহেস্তে আছে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়ে গিয়েছিলেন এবং এর পর তিনি আবারো একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে বসলেন

About Rasel Khalifa

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গুজব ছড়িয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপকে লিজ দিচ্ছে। তবে প্রধান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *