সাম্প্রতিক সময়ে ড. এ কে আব্দুল মোমেন এর এক বক্তব্যে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনার শুরু হয়েছে। যেখানে তিনি বলেছেন, হাসিনার সরকারকে ফের ক্ষমতায় রাখার জন্য তিনি ভারতকে অনুরোধ করেছেন। তার এই ধরনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে এ দিকে আব্দুল মোমেন তার বক্তব্যের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বলে জানা যায়। তবে বাংলাদেশের প্রভাব মানুষের উপর অন্য দেশের প্রভাব কখনো মেনে নেয়া হবে না এমনটাই জানিয়েছে ওবায়দুল কাদের।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য রাষ্ট্রের প্রভাব বা রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ আওয়ামী লীগ কখনো বরদাশত করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না- বলেছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সোমবার (২২ আগস্ট) দলের মহাসচিব ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে সকল গণতন্ত্রকামী, স্বাধীনতাকামী মানুষ ও রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পবিত্র সংবিধানে পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র হলো- সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়। শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের এই নীতির কোনো বিকল্প নেই, যা বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতায় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকর বাংলাদেশ গড়তে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা পারস্পরিক ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সহযোগিতা-সহানুভূতি, মানবিক মূল্যবোধ, নীতি ও আদর্শের সম্প্রীতি সৃষ্টি করে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করি এবং বন্ধুত্বের গতি ও প্রকৃতি নির্ধারণ করি।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্রভাব ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কখনোই বরদাস্ত করেনি এবং কখনোই বরদাস্ত করবে না। আওয়ামী লীগ সব সময়ই সব ধরনের সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরোধিতা করেছে এবং এর জন্য সংগঠনটিকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। তারপরও আওয়ামী লীগ দেশের ভেতরে বা বাইরে কোনো ক্ষমতার গ্যারান্টার হিসেবে যায় না।
তিনি বলেন, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সর্বদা জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের অভিভাবক।
বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতারা তাদের স্বাভাবিক মিথ্যার রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে এবং বহুমুখী ষড়য”ন্ত্র ও অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও হৃদয়ে ধারণ করে ১৫ আগস্টের নির্ম/”ম ও ব’র্ব/র মানসিকতা এবং ২১ আগস্টের বর্ব”রতা ও পৈশা”চিকতা। ঐতিহাসিকভাবে বিএনপি স্বৈরাচারী আচরণ ও জ’/’ঙ্গিবাদ-স”ন্ত্রা’/স ও প্রতিহিংসার রাজনীতি লালন করেছে।
গণতান্ত্রিক অধিকার ও মূল্যবোধের প্রতি দায়িত্ব সমান্তরালভাবে চলে। বিএনপি কখনো গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে মনের মধ্যে নেয় না এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তার চর্চা করে না বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, একটি ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব ও কর্তব্য তারা কখনোই পালন করেনি। সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধ বন্দুকের জোরে ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়েছে বিএনপির। তাদের প্রতিষ্ঠাতা নৃ/শং’স স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে ক্ষমতা দখল করেন। জিয়াউর রহমান একই সাথে সেনাপ্রধান, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক এবং রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হন, বিএনপি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন, কারফিউ-মার্কা গণতন্ত্র চালু করেন এবং সামরিক শাসন বজায় রেখে বেশ কয়েকটি প্রহসনমূলক নির্বাচন পরিচালনা করেন।
বিএনপিকে হ/”ত্যা-কাণ্ড, ষড়য’ন্ত্র-চক্রা’ন্ত, দুর্নীতি-অপরাধ, সন্ত্রা’/স ও জ”/ঙ্গিবাদের মূল পৃষ্ঠপোষক উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতির পিতাকে সপরিবারে হ”/ত্যার পর থেকে দেশের মুক্তিকামী মানুষকে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়েছে। গণতন্ত্র, মানবমুক্তি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পথে সংকট। সৃষ্টি করেছেন সংকটের প্রেক্ষাপট। এই অপরাজনীতির কারণে জনরোষের মুখে বিএনপি যখন নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন মনে করে তখন তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং দেশবিরোধী ষড়য’ন্ত্রে লিপ্ত হয়। ক্ষমতায় থাকতেও জনরোষের মুখে পদত্যাগ করতে হয়েছে তাদের।
উল্লেখ্য, মোমেনের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আ.লীগের অনেক নেতা জানিয়েছেন, তিনি আ.লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কেউ নন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন যেহেতু তিনি তাঁর বক্তব্য দিয়ে আ.লীগকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছেন, তাই দলটির নেতারা বিষয়টি রাখঢাক করতেই নানা ধরনের বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।