বর্তমানে ডিএমপি কমিশনার পদে দায়িত্বরত আছেন শফিকুল ইসলাম। তবে তার মেয়াদ আর বেশিদিন নেই খুব শীঘ্রই তাকে তার চাকরী থেকে অবসর নিতে হবে। যদিও গত বছরের একটি সংবাদ সূত্রে জানা যায়, তার মেয়াদ ২০২১ সালের ৩০ অক্টোবার শেষ হয়ে গিয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার চাকরির মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর পরামর্শ দেয়। অবশেষে তাই হয়, পরবর্তী একটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তার চাকরির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধি করা হয়েছে এ বছরই ২০২২ সালে অক্টোবরে 30 তারিখ সেই এক বছর পুরণ হতে চলেছে এবং তার চাকরির মেয়াদ শেষ হতে চলেছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এর পরে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পদগুলির মধ্যে একটি। পুলিশের সবচেয়ে বড় ইউনিটের বর্তমান প্রধান মো. শফিকুল ইসলামের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩০ অক্টোবর।
দিন যত ঘনিয়ে আসছে ডিএমপির ৩৬তম কমিশনার হিসেবে কে আসছেন তা নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন মহলে চলছে জল্পনা-কল্পনা। সার্বিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা, ক্যারিয়ারে সাফল্য, বিশ্বাসযোগ্যতা- এমন সমীকরণে পার হতে হয় ঢাকার পুলিশ প্রধানের পদ পেতে। পুলিশ মহলে ডিএমপি কমিশনার হিসেবে বেশ কয়েকজনের নাম আলোচিত হচ্ছে। তারা হলেন ঢাকা রেঞ্জের বর্তমান উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হাবিবুর রহমান, বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজিপি আতিকুল ইসলাম ও মাহবুবুর রহমান।
ঢাকা রেঞ্জের বর্তমান ডিআইজি হাবিবুর রহমান, যিনি ১৭তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন, ১৯৬৭ সালে গোপালগঞ্জের চন্দ্র দিঘলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সাহস, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার জন্য তিনি তিনবার বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) এবং দুবার রাষ্ট্রপতি পুলিশ মেডেল (পিপিএম) পেয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি), ডিএমপি সদর দফতরের ডেপুটি কমিশনার, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন), ডিআইজি প্রশাসনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পেশাগত ও মানবিক কাজের পাশাপাশি একজন সফল ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এবং এশিয়ান কাবাডি ফেডারেশনের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এছাড়া মানুষের সেবা করার জন্য তিনি উত্তরণ ফাউন্ডেশন নামে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তাঁর একক প্রচেষ্টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে টেলিকম ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয় পুলিশ লিবারেশন মিউজিয়াম। ২০১৮ সালে, ডিআইজি হাবিব মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের গৌরবময় ভূমিকা তুলে ধরে ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ শীর্ষক একটি বই সম্পাদনা করেন। এ ছাড়া এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় হাবিবুর রহমানের গবেষণামূলক বই ‘থার: বেদের ভাষা’ প্রকাশিত হয়েছে। তাছাড়া তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ওপর একটি বই সম্পাদনা করেছেন। ‘নন্দিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান’ বইটি ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয়।
মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের হাট বাসুদেবপুর গ্রামে সান্দার বেদে উপজাতির প্রায় দুই শতাধিক মুসলিম পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাস করে। তাদের সদস্যদের কেউ মারা গেলে, তাদের কাছের কোন কবরস্থানে দাফন করার অনুমতিও ছিল না।
এমন করুণ অবস্থা জানার পর ডিআইজি হাবিব তার সহকর্মীদের সহায়তায় একটি জায়গা খুঁজে পেয়ে এই সম্প্রদায়ের কল্যাণে দান করেন। এছাড়া তিনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হিসেবে পশু খামার করেছেন। অনেকে পোশাক কারখানায় কাজ করেছেন, পার্লার ও খাবারের ব্যবসা করেছেন। মানবতাবাদী পুলিশ হিসেবে পরিচিত ডিআইজি হাবিবুর রহমান এখন দৌলতদিয়ার যৌন বস্তির শিশুদের জন্য কাজ শুরু করেছেন।
১৫তম বিসিএসে যোগ দিয়েছেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) প্রধান মনিরুল ইসলাম। বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর থানার বাহারা গ্রামে। মনিরুল ইসলাম ১৯৭০ সালের ১৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নর্থামব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্রিটিশ আইন বিষয়ে স্নাতক। তিনি ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে এএসপি হিসেবে যোগদান করেন। তিনি গোয়েন্দা শাখায় নয় বছর এবং বিশেষ শাখায় দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন।
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ তারিখে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে পুলিশের নবগঠিত কাউন্টার-টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। জঙ্গি দমন ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে তার কৃতিত্ব লক্ষণীয়। কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলাদেশ পুলিশ পদক ও রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক লাভ করেন।
এই দুই কর্মকর্তা ছাড়াও পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (উন্নয়ন) হিসেবে কর্মরত ডিএমপি কমিশনারদের তালিকা রয়েছে। আতিকুল ইসলাম ও শিল্প পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত আইজিপি) মাহবুবুর রহমান। আতিকুল ইসলাম ১৯৬৬ সালে রংপুর জেলার কোতয়ালী থানার জুম্মাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমানে আইপিজিএমআর (ইন্সটিটিউট অফ পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ) থেকে ফার্মাকোলজিতে স্নাতক এবং অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা করেছেন। তিনি ১৯৯১ সালে বিসিএস-দ্বাদশ ব্যাচের মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারে যোগ দেন।
অতিরিক্ত আইজিপি মাহবুবুর রহমান জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যা বিভাগে অনার্স ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি ১৫তম বিসিএসে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে যোগ দেন। নরসিংদী জেলা পুলিশের এএসপি হিসেবে, কিশোরগঞ্জ জেলার সদর সার্কেল ও বাজিতপুর সার্কেলে সার্কেল এএসপি এবং নেত্রকোনা জেলার এএসপি সদর সার্কেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশে সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতোয়ালি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও র্যাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ডিএমপি কমিশনার শফিউল ইসলাম তাঁর চাকরিগত জীবনে সৎ ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। কোন পরিস্থিতিতে নিজ দায়িত্ব থেকে সরে যাননি তিনি। যার জন্য গত বছরে তার চাকরির মেয়াদ শেষ হলেও এক বছর তার চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এবার চাকরি জীবনের সকল মায়া কাটিয়ে অবসরে চলে যাচ্ছেন বর্তমানে দায়িত্বরত ডিএমপি কমিশনার শফিউল ইসলাম। প্রতিষ্ঠান সকলেই থাকে আগামী দিনের শুভকামনা জানিয়েছেন।