ড. মুরাদ হাসান মানেই যেন আলোচনা আর সমলোচনা। কোন ভাবেই যেন সমালোচনা ছাড়তে চায় না তার পিছ। আর এই কারনে আবারো নতুন করে সমালোচনার মধ্যে জড়িয়ে পড়লেন তিনি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও দুপুরের প্রখর রোদে শিক্ষার্থীরা সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান এমপিকে স্বাগত জানাতে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। গত মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। গত ১৫ আগস্ট জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের বয়রা ইসরাইল আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান তালুকদার স্মৃতি সংসদ ইসরাইল আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও গণভোজের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভিন্ন সমালোচনার মুখে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডাঃ মুরাদ হাসান এমপি। সোমবার বিকেলে শোক দিবসের আলোচনা সভা ও গণভোজের আয়োজন করা হলেও বিকেলের দিকে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের হাজির করে প্রখর রোদে মাঠে দাঁড়িয়ে রাখা হয়।
অবশেষে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ড. মুরাদ হাসান হাজির হন। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, স্কুলের গেটে নিজের প্রাইভেটকার থেকে নেমে পড়েন মুরাদ হাসান। বিভিন্ন স্লোগানে তাকে স্বাগত জানান তার সমর্থকরা। স্কুল ভবন থেকে গেট পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্কুলের শিক্ষার্থীরাও হাততালি দিতে থাকে। এমপি মুরাদ দুই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্য দিয়ে হেঁটে অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছান। পরে বিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যের সময় শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে ছিল। পরে খাবার বিতরণ করা হয়।
এ বিষয়ে দশম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত নাজমুল ইসলাম বাঁধনসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানান, এমপিকে স্বাগত জানাতে সব শিক্ষার্থী মাঠে দাঁড়িয়েছে। স্কুল থেকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমি রাজি না হলে কি করতাম!
এ ব্যাপারে পোগলদিঘা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম মানিক বলেন, শুনেছি বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রউফ বাচ্চু ও সদস্য বাবু শিক্ষার্থীদের লাইনে দাঁড় করিয়ে দেন। এটি অনিয়মিত এবং দুঃখজনক। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক শেখ মাহমুদ জানান, শোক দিবস উপলক্ষে মতিউর রহমান তালুকদার স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে দুস্থদের জন্য খাদ্য বিতরণের আয়োজন করা হয়। বিকেলে অনুষ্ঠানে আসেন সংসদ সদস্য ড. দুপুর থেকেই ছাত্র-ছাত্রীরা উপস্থিত থাকে।
অভিযোগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুরুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীরা এমপিকে ফুল ছুড়ে শুভেচ্ছা জানাননি, মাঠে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। এটা কোনো অপরাধ নয়। স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবদুর রউফ বাচ্চু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়ালে রোদ ছিল না। ৫ মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে গেল, তাতে কী হলো!
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের রাস্তায় বা মাঠে দাঁড়িয়ে কাউকে শুভেচ্ছা জানানো আইনত নিষিদ্ধ। প্রধান অতিথিকে স্বাগত জানানোর সঙ্গে শোক দিবসের তাৎপর্যের কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টি আমার জানা নেই, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপমা ফারিসা মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজখবর নিচ্ছেন।
গেল বছর ড. মুরাদ হাসান তার নিজের ঘটানো নানাবিধ বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্য হয়েছে বেশ সমালোচিত। সর্বশেষ দেশের জনপ্রিয় একজন নায়িকার সাথে ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তিনি হারান তার মন্ত্রীর পদমর্যাদাও।